ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

উদাসীনতা: জাবিতে ধ্বংসের পথে জীববৈচিত্র্য

ওয়ালিউল্লাহ, জাবি প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০২ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০১২
উদাসীনতা: জাবিতে ধ্বংসের পথে জীববৈচিত্র্য

জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রশাসনের উদাসীনতায় নষ্ট হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। প্রায় সাতশো একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বছর দুই আগেও রাস্তায় চলাচলের সময় দেখা যেত অসংখ্য গুইসাপ, বেজি, গিরগিটি, কাঠ-বিড়ালিসহ নানা ক্ষুদ্রপ্রাণীর আনাগোনা।

দিনশেষে রাতের বেলায় শিয়াল, বাগডাশ, হুতুম ও লক্ষ্মীপেচাঁসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণির হাঁক-ডাক আর চলাচলের শব্দে চিরকেলে গ্রামীণ রাতের আবহ বাঙময় হয়ে উঠতো এখানে, পড়তে আর পড়াতে আসা ক্যাম্পাসবাসীদের সৃষ্টি করতো জীবনানন্দের কবিতার আবহ।
কিন্তু গত বছরগুলিতে শুষ্ক মৌসুমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ঝোপ-ঝাড় পরিষ্কার করার নামে আগুন দিয়ে দ্রুত পরিবেশ ধ্বংসের ফলে পরিচিত এসব বন্যপ্রাণীর কিছু আগুনে পুড়ে মারা যায় আর বাদবাকীরা পালিয়ে বাঁচে। এর ফলে নষ্ট হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিক গাছপালা ও তৎসংলগ্ন ঝোপ-ঝাড় এসব বন্যপ্রাণীর জন্য প্রাকৃতিক অভয়াশ্রমের কাজ করে। কিন্তু আগুন দিয়ে এভাবে এসব জায়গা পরিষ্কার করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববৈচিত্র্য রক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে।
এদিকে, সম্প্রতি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে প্রায় বার একর জমির বনজঙ্গল পরিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হলুদ চাষের জন্য লিজ দিয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক যুক্তি দেখান, ঢাকা আরিচা মহাসড়কে চুরি-ছিনতাই ঠেকাতে পুলিশ প্রশাসনের অনুরোধে জঙ্গল পরিষ্কার করে হলুদ চাষের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছে। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় বাড়বে বলে তিনি জানান।

যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসার জায়গা নয়। ’

প্রতিবছর শীতকালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলো অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠতো। এই মোহনীয় পরিবেশ শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসিন্দা নয়, বাইরে থেকে অনেক দর্শনার্থী পর্যটককে আকৃষ্ট করতো। যা দেশের শীর্ষ পর্যায়ের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আভিজাত্যের একটি স্মারক হয়ে উঠছিল দেশ-বিদেশে।

কিন্তু প্রশাসনের অপরিনামদর্শী ব্যবসায়িক মানসিকতা ও ক্যাম্পাসের জীববৈচিত্র সংরক্ষণে উদাসীনতার ফলে এ বছর ক্যাম্পাসে অতিথি পাখির দেখা পাওয়া যায়নি। এর আগের বছরই এর আভাস পাওয়া গিয়েছিল পরিযায়ী পাখির স্বল্পসংখ্যার উপস্থিতিতে। কারণ, ক্যাম্পাসের যেসব লেকে অতিথি পাখি এসে আশ্রয় নিত, সেসব লেক মাছ চাষের জন্য লিজ দিয়েছে জাবি কর্তৃপক্ষ। এর ফলে সেসব লেককে কৃত্রিমভাবে মাছচাষের উপযোগী করতে এবং চাষের মাছ যেন পাখি না খায় সে উদ্দেশ্যেও নানান ধরনের রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়। এতে করে লেকগুলো আর পাখিদের জন্য নিরাপদ থাকেনি। তাই অতিথি পাখিরা এখানে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।

অতিদ্রুত এসব অসুন্দর বাণিজ্যিক সংস্কৃতি রোধে ব্যবস্থা না নিলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় তার দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ও গৌবর হারাবে বলে ধারণা করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন তুহিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসের বনজঙ্গল উজার হওয়ার ফলে বন্যপ্রাণিদের আবাসস্থল ও প্রজননক্ষেত্রগুলো নষ্ট হয়েছে। যার ফলে আগে যেসব বন্যপ্রাণী দেখা যেত সেসব দিন দিন কমে যাচ্ছে। ’

প্রজাপতি নিয়ে গবেষণার জন্য পরিচিত শিক্ষক ড. তুহিন আরও বলেন, ‘এছাড়া বাংলাদেশে মোট ৩০০ প্রজাতির প্রজাপতির মধ্যে জাবিতেই ১০০ প্রজাতির প্রজাপতি পাওয়া গেছে। দিন দিন এভাবে বন-জঙ্গল উজার হতে থাকলে প্রকৃতির শোভা আর অনিন্দ্য অনুষঙ্গ এসব প্রজাপতির সংখ্যাও কমে যাবে। ’

তিনি জানান, আগে ক্যাম্পাসে অসংখ্য শিমুল ও পলাশ গাছ ছিল। কিছুদিন আগে এক জড়িপে দেখা গেছে ক্যাম্পাসে এখন মাত্র অর্ধশতাধিক শিমুল ও পলাশ গাছ রয়েছে।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও অনতিবিলম্বে বনজঙ্গল কাটা বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ ও প্রাণিকূল রক্ষার দাবি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।