ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

‘দেশের উপকূলে সবুজ ঝিনুক চাষের উপযোগী’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫১ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২২
‘দেশের উপকূলে সবুজ ঝিনুক চাষের উপযোগী’

কক্সবাজার: ‌দেশের বঙ্গোপসাগরের উপকূলের ৭১০ কিলোমিটার তটরেখাজুড়ে ৩২ লাখ ২০ হাজার হেক্টর আয়তনের জলসীমা সবুজ ঝিনুক বা গ্রিন মাজল এবং ওয়েস্টার বা করতাল চাষের উপযোগী। এই দুই জাতের ঝিনুকে উচ্চমানের খাদ্য গুণাগুণ রয়েছে।

আবার কয়েকটি প্রজাতির ওয়েস্টার থেকে মুক্তা উৎপাদনও করা যায়।

দেশের সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নে ঝিনুক চাষ ছাড়াও মোট ১৩টি প্রকল্প নিয়ে গবেষণা করছে কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তিকেন্দ্র। নতুন অর্থবছরে আরও দুটি গবেষণা প্রকল্প প্রস্তাব করছে।  

শনিবার (১৮ জুন) স্থানীয় একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে কক্সবাজারস্থ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তিকেন্দ্র আয়োজিত ‘বার্ষিক গবেষণা অগ্রগতি পর্যালোচনা (২০২১-২২) ও গবেষণা প্রস্তাবনা প্রণয়ন (২০২২-২৩) শীর্ষক আঞ্চলিক কর্মশালায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

কর্মশালায় বলা হয়, দেশের সমুদ্র উপকূলে ভাসমান কাঠামোর ওপর ঝিনুক চাষ, সি-উইড বা সামুদ্রিক শৈবাল চাষ করা সম্ভব। ইতোমধ্যে বঙ্গোপসাগরে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হয় এমন ২৬ প্রজাতির সি-উইড শনাক্ত করেছেন ওই প্রযুক্তি কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা।

সি-উইডে উচ্চমাত্রার খাদ্য গুণাগুণ ছাড়াও ওষুধিগুণ রয়েছে। দেশের সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নে নীল রক্তের প্রাণী হর্সশো ক্র্যাব বা রাজকাঁকড়া নিয়েও গবেষণা চলছে। এছাড়া খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয় নীল সাঁতারু কাঁকড়ার ল্যাবরেটরি প্রজননেও সাফল্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদের সভাপতিত্বে দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি), তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।  

বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাইমুম সরওয়ার কমল সমুদ্র নিয়ে গবেষণাকে সমন্বিত করার জন্য আলাদা সমুদ্র মন্ত্রণালয় গঠনের ওপর জোর দেন।

তিনি বলেন, ৫৫ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশে যদি ৫০টি মন্ত্রণালয় থাকতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের প্রায় সমান আয়তনের জলসীমা বা সমুদ্র নিয়ে কেন একটি আলাদা মন্ত্রণালয় হবে না?

এমপি কমল বলেন, বিএফআরআই মৎস্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে, বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে। অথচ উভয় প্রতিষ্ঠানই প্রায় একই কাজ করছে। আর এর ফলে একই বিষয় নিয়ে আলাদাভাবে গবেষণা করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এতে সরকারি অর্থের অপচয় ঘটছে।  

কর্মশালায় গবেষণার সফলতা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে স্বাগত বক্তব্য দেন কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য প্রযুক্তিকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কেন্দ্র প্রধান ড. শফিকুর রহমান।  

কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিজ্ঞানী, গবেষক, সাংবাদিক, মৎস্যচাষিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।  
 
বিএফআরআইর মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, একই বিষয়ে একাধিক প্রতিষ্ঠানের গবেষণার মাধ্যমে অর্থের অপচয় রোধ করতে হবে। দেশের সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নে বিএফআরআইর বিজ্ঞানীদের নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে। যাতে জাতিকে আমরা নতুন নতুন পথ দেখাতে পারি।
 
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বলেন, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের নিজস্ব জলসীমার আয়তন ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার। এদেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ বঙ্গোপসাগরের ওপর নির্ভরশীল। এর সম্পদ যেমন অপার, সম্ভাবনাও।

এই সম্পদের সদ্ব্যবহারের জন্য আমাদেরকে সমুদ্র স্বাক্ষর জাতি হিসেবে গড়ে ওঠতে হবে। যাতে আমরা সাগরের দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারি। এজন্য স্কুল ও কলেজের পাঠ্যসূচিতে সমুদ্র সংক্রান্ত বিষয় থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
 
সম্প্রতি দেশের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকায় ৩৪৭ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪৯৮ প্রজাতির ঝিনুক, ৫২ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ৬ প্রজাতির কাঁকড়া, ২২০ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল ও ৬১ প্রজাতির সি-গ্রাস চিহ্নিত করেন। এছাড়া আমাদের বঙ্গোপসাগরে মহাসাগরীয় জায়ান্ট হিসেবে পরিচিত বিশ্বের বিরল প্রজাতির তিমি ও ডলফিনও রয়েছে।

সর্বশেষ জরিপ মতে, বাংলাদেশে ১৩ প্রজাতির সিটাসিয়ান বা জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ৫ প্রজাতির তিমি, ৭ প্রজাতির শুশুক (ডলফিন) ও এক প্রজাতির হুছুম (পরপইস)।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২২
এসবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।