মৌলভীবাজার: মানুষ যতই আধুনিক হয়েছে ততই ধীরে ধীরে সরে যেতে শুরু করেছে প্রকৃতি থেকে। মানুষের প্রতিটি শিল্পবিপ্লব পরিবেশের জন্য হয়েছে ধ্বংসযজ্ঞের নবসূচনা।
প্রাকৃতিক ফসলি জমি ধ্বংস করে আধুনিক কারখানা, প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে কৃত্রিম বনায়নের সূচনা, পরিবেশবান্ধব পাট এবং পাটজাত দ্রবের ব্যবহারের পরিবর্তে পরিবেশ ধ্বংসকারী প্লাস্টিকের সীমাহীন ব্যবহার প্রকৃতিকে ক্রমশই অসুস্থ করে তুলছে।
আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির একটি বিশেষ ওষুধ গবাদিপশুর ওপর ব্যাপক ব্যবহারের ফলে প্রকৃতির পরিচ্ছন্নকর্মী শকুন প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। গবাদি পশু চিকিৎসায় ব্যবহৃত ‘ডাইক্লোফেনাক’ ও ‘কিটোপ্রোফন’ ইঞ্জেকশনের ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশে শকুনের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছিল। প্রচুর শকুনের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু হয়।
প্রকৃতির এক উপকারী প্রাণী শকুন। এর শুদ্ধ নাম ‘বাংলা শকুন’। ইংরেজি নাম White-ramped Vulture। প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলা হয় শকুনকে। প্রকৃতির সমস্ত বাসি, পঁচা, দুর্গন্ধযুক্ত মরা প্রাণীদের দেহ ওরাই খেয়ে পরিষ্কার করে ফেলে। রোগমুক্ত রাখে মানুষ এবং সমাজকে।
১৯৯০ সাল থেকে সমগ্র উপমহাদেশে বাংলা শকুনসহ অন্যান্য শকুন অতিদ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। উপমহাদেশের প্রায় ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ বাংলা শকুন এখন বিলুপ্ত এবং ‘আইইউসিএন’ এই প্রজাতিটিকে বিশ্বে ‘মহাবিপদাপন্ন প্রাণী’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। যে সকল গৃহপালিত গরুকে ওই দুটো ইঞ্জেকশন পুশ করা হয় পরবর্তীতের সে গরুগুলো সুস্থ না হয়ে মারা গেলে তার মাংস শকুনরা খেয়ে ভয়ংকরভাবে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করতো। সে বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকার ওই দুটো ইঞ্জেকশন নিষিদ্ধ ঘোষণা করার ফলে এখন শকুনের মৃত্যু অনেকটা কমেছে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, শকুন আমাদের দেশের মহাবিপদাপন্ন প্রাণী। আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশের বহু উপকার সাধন করে থাকে সে। ২০১৫-২০১৬ সালের গণনা অনুযায়ী দেশে শকুনের সংখ্যা ২৬০টি। এরপর আর শকুনশুমারি হয়নি। তবে আগামীতে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তাদের বসবাসের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল মাত্র দুটো আছে। একটা আমাদের সিলেটের রেমাকালেঙ্গা অঞ্চল, এখানেই সবচেয়ে বেশি আছে, আর দ্বিতীয় স্থানটি হলো খুলনার সুন্দরবন। মৌলভীবাজারের দেওরাছড়া চা বাগানের জঙ্গলে বড় বড় চারটি আওয়াল গাছ ছিল। ২০১৪ সালে সেই গাছগুলো কেটে ফেলায় শকুনগুলো আশ্রয়হীন হয়ে হারিয়ে যায়। আর ফেরত আসেনি সেখানে। ওই গাছে শকুনরা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করতো এবং ছানাও তুলতো।
প্রকৃতির বড় বড় গাছগুলো কেটে ফেলা, ধর্মীয় কুসংস্কার, খাদ্যের অভাব প্রকৃতি শকুন বিলুপ্তির অন্যতম কারণ। আমাদের পরিবেশকে সুস্থ, সুন্দর ও বসবাস উপযোগী রাখতে হলে অন্যান্য বন্যপ্রাণীর মতো শকুন রক্ষায় সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে বলে মনে করেন এই বন কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২২
বিবিবি/এমজেএফ