ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সড়কে ৯ মাসে ১০ বন্যপ্রাণীর মৃত্যু

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২২
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সড়কে ৯ মাসে ১০ বন্যপ্রাণীর মৃত্যু লাউয়াছড়া সড়কে সিংহ বানরের মৃত্যু। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান হয়ে যাওয়া সড়ক রেলপথ ও বিদ্যুতের গ্রিড লাইন এখন বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।  অনেক বিরল প্রজাতির সিংহ বানর, হনুমান, অজগর, উল্লুক ট্রেনে কাটা পড়ে অথবা সড়কে মারা যাচ্ছে।

বিদ্যুতের তারে জড়িয়েও মাঝেমধ্যে অনেক বন্যপ্রাণী মারা যায়।
 
জাতীয় উদ্যান হয়ে যাওয়া রেলপথ, সড়ক ও বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিড লাইন বাইরে নিয়ে যাওয়ার দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদাসীন।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, মৌলভীবাজারের তথ্যমতে, গত জানুয়ারি থেকে নয় মাসে লাউয়াছড়ায় সড়কে ও বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে ১০টি বন্যপ্রাণী প্রাণ হারিয়েছে।

বনের ভেতর দিয়ে রেলপথ ও সড়ক যাওয়ার কারণে বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম লাউয়াছড়া এখন বন্যপ্রাণীর জন্য এমন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

সচেতন পরিবেশবিদরা মনে করেন, লাউয়াছড়ায় হয়ে যাওয়া সাত কিলোমিটার রেলপথ ও পাকা সড়কে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি আঞ্চলিক সড়ক বনের বাইরে নিলে আরও কল্যাণকর।
 
জানা যায়, বন্যপ্রাণী অধ্যাদেশ ১৯৭৪ এর ২ ও ৩ ধারা মতে ১৯৯৬ সালের ৭ জুলাই দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের মধ্যবর্তী পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১ হাজার ২৫০ হেক্টর (৩০৮৮ একর) এলাকা জাতীয় উদ্যান তথা ন্যাশনাল পার্ক (প্রকৃতির জন্য সংরক্ষিত এলাকা) ঘোষণা করে তৎকালীন সরকার। সেখানের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণে নেওয়া হয়েছিল সেই উদ্যোগ। কিন্তু ১৯৯৭ সালে মাগুরছড়া গ্যাসকূপে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের কারণে বন ও বন্যপ্রাণীর সীমাহীন ক্ষতি হয়, যা এখনো পুষিয়ে ওঠা যায়নি।

ঢাকা থেকে প্রায় ১৭১ কিলোমিটার দূরের এই বনে ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং জুনে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিদ্যমান থাকে।  

বনবিভাগ জানায়, লাউয়াছড়ায় ৪৬০ প্রজাতির জীববৈচিত্র্য রয়েছে। ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৪ প্রজাতির উভচর প্রাণীর বিচরণ এই বনে। এছাড়া এই ক’বছরে ১৬৭ প্রজাতির বন্যপ্রাণী অবমুক্ত করা হয়েছে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার মিত্র জানান, গত ৮ মাসে এই বনের দুইটি সিংহ বানর, একটি মুখপুড়া হনুমান, ১টি চশমাপরা হনুমান, একটি উল্টো লেজি বানর একটি গন্ধগোকুল, একটি বেজি ও একটি মেছোবাঘ দুর্ঘটনায় মারা যায়। এরমধ্যে মুখপুড়া হনুমান বিদ্যুতের গ্রিড লাইনে আর বাকি সবগুলো সড়কে প্রাণ হারায়। বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তার জন্য আমরা বনের ভেতর গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে নানা কর্মসূচি শুরু করেছি।
 
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, লাউয়াছড়া থেকে সড়কপথ সরানোর জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এলাকায় বাস ট্রেনের গতি কোন অবস্থায় ২০ কিলোমিটারের বেশি হবে না এবং আমরা তা নিশ্চিত করতে চাই।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২২
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।