মৌলভীবাজার: সফলতার সংজ্ঞাটা আসলে একেক জনের কাছে একেক রকম। ওইভাবে সুনির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই।
তবে তা ভাবনা-বিশ্লেষণের ব্যাখ্যায় মাছরাঙা পাখিটির সঙ্গে কিছুটা হয়তো মিলে যেতে পারে। লক্ষ্যবস্তুর দিকে মানুষের মতোই সবেগে ধাবমান এ জাতীয় পাখিরা।
আমাদের পরিবেশের সবচেয়ে কাছাকাছি যে প্রাকৃতিক উপাদনটির প্রমাণ ঘুরেফেরা করছে তার নাম পাখি। বাংলার প্রকৃতিতে বিচরণকারী নানার প্রজাতির পাখিদের একটি প্রজাতি মাছরাঙা। যাকে ইংরেজিতে ‘কিংফিসার’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তার একমাত্র প্রধান খাবার যেহেতু মাছ তাই তার নামের সাথে মাছ শব্দটি জুড়ে আছে। এরা মাছ ধরতে যে পরিমাণ মনোযোগ, যে পরিমাণ একাকীত্ব আর যে পরিমাণ ধৈর্যধারণ করে বসে থাকে এর সাথে আমাদের সমাজের কিছু সফল ব্যক্তিত্বের মিল সহজাতভাবে ধরা পড়ে। কোনো কোনো বিশেষ মানুষ এই মাছরাঙা পাখিটির মতোই গভীর পরিশ্রম আর ধৈর্য নিয়ে কর্মজীবনে পা রাখেন।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি পাকরা-মাছরাঙা (Pied Kingfisher) ওপরে থেকে তার শিকার নামক লক্ষ্যবন্তুর দিকে তীব্র গতিতে ছুটে চলেছে। বিশেষ এই ছবিটি তুলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বরেণ্য বন্যপ্রাণী গবেষক ড. মনিরুল খান।
অন্যপাখিদের তুলনায় মাছরাঙাদের মাঝে কনসেনট্রেড বা গভীর মনোযোগ এর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেহেতু তারা ওইভাবে শিকার করে তাই। একসঙ্গে থাকলে সহজে শিকার ধরতে পারবে না। শিকার ধরার জন্য একা একা চুপচাপ কনসেনট্রেড করে বসে থাকতে হবে বিষয়টা এরকমই। এই একাকীত্বই তার শিকারের কৌশল। অনেকগুলো থাকলে তো একজন আরেকজনের সঙ্গে হয়তো মারামারি শুরু করবে – কে আগে শিকার করবে? এজন্য একেকটা কিংফিসার একেক জায়গায় চুপচাপ বসে থাকে মাছের অপেক্ষায়। ’
কিছু পাখিপ্রজাতির মাঝে দলগতভাবে বিচরণ বিষয়ে ড. মনিরুল বলেন, ‘এ জাতীয় শিকারি পাখি দলবদ্ধ থাকে না। দলবদ্ধ বেশির ভাগ পাখি হচ্ছে শস্যদানা খায় যেসব প্রজাতির পাখি ওরা। অর্থাৎ উদ্ভিজ্জ খাবার যারা খায়। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে এক সঙ্গে যারা পোকা খায় সেসব পাখিরা। এক সঙ্গে মুভ (বিচরণ) করলে পোকাগুলো ওড়ে বের হয় বেশি। সেক্ষেত্রে কিছু প্রজাতির পোকাখাদক পাখিরাও একসঙ্গে মুভ করে। শিকারিরা সাধারণত একা একাই থাকে। ’
এই পাকরা-মাছরাঙা পাখিটির দেহের রং সাদা-কালো। পাখিটির দৈর্ঘ্য ২৫ সেন্টিমিটার, আকারে আমাদের ভাত-শালিক পাখির মতো। তারা সারাদেহে রয়েছে কালো কালো ডোরা বা দৃশ্যমান স্পষ্ট দাগ। মাথার পেছনের দিকে রয়েছে আবার ছোট ঝুঁটি। দুটি শব্দ একত্রিত করে উচ্চস্বরে ডাক দেয়। এরূপ ডাকের সশব্দে প্রকৃতি তখন তার নির্জনতা ভাঙে।
মাছরাঙাদের চারিত্রিক বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো-,এরা শিকার ধরতে গিয়ে পানির অনেক নিচ পর্যন্ত চলে যায়। তারপর ধৃত সেই কাঙ্ক্ষিত শিকারটিকে তীক্ষ্ম ঠোঁটে করে ধরে পার্শ্ববর্তী কোনো গাছের ডালে নিয়ে আসে। এখানেই শেষ নয়। সেই ধৃত শিকারটিকে গাছের ডালে আছাড় মেরে হত্যা করে। তারপর আকাশের দিকে ছুড়ে মাথা উঁচু করে গিলে খায়। সেই শিকারটিকে আছাড় মারা এবং শূন্যে ছুড়ে গিলে খাওয়ার ব্যাপারটি এতোটাই দক্ষতামূলক যে তার ঠোঁট থেকে সেটি ভুলেও নিচে পড়ে যায় না।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২২
বিবিবি/এএটি