ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

মাংসে বাড়তি স্বাদ আনে ‘চুইঝাল’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২২
মাংসে বাড়তি স্বাদ আনে ‘চুইঝাল’ চুইঝাল। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন 

মৌলভীবাজার: নামটি কিছুটা অদ্ভুত, চুইঝাল! সুদৃশ্যতার প্রশ্নে ততটা নয় মানানসই। কালো! দেখতে কেমন জানি! এখানে-ওখানে পড়ে থাকলে কেউ ভালো করে তাকাবে না তার দিকে।

কলার মোথার অংশের মতো এমনি এক বিচিত্র জিনিস এটি।  

তবে বিশেষ বিশেষ গুণে সেরা। খাদ্যপ্রিয় মানুষেরা নতুন করে তাকাতে পারেন এই জিনিসটির দিকে। যা তাদের রসনায় দেবে তৃপ্তির অনুভূতি। শুধু তা-ই নয়, স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিরাও উপকারী দিকটির কথা বিবেচনা করা একে তালিকাভুক্ত করতে পারেন।  

ইদানিংকালে জনপ্রিয় হওয়া এই মসলা জাতীয় পণ্যটি সম্প্রতি শ্রীমঙ্গলে পাওয়া গেছে। এক ব্যবসায়ীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাশটেবিলের ওপর রাখা ছিল এই দ্রব্যগুলো।  

অবাক করা বিষয় হলো, এক কৃষিগবেষক বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, গুণাবলির উৎকর্ষের জন্য এই ‘চুইঝাল’ পৌঁছে গেছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

শ্রীলঙ্গল শহরের পুরানবাজারের ব্যবসায়ী সন্তোষ জানান, ‘চুইঝাল’ নিজে খাবার জন্য খুলনা থেকে আনিয়েছি। এক কেজির প্রতি এর দাম নিয়েছে ১ হাজার ২শ টাকা। এটি দেখতে ততটা সুশ্রী না হলেও এটি কেটে কেটে মাংস রান্নায় দিলে স্বাদ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।  

এ ব্যাপারে বাড়তি তথ্যের জন্য যোগাযোগ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খুলনা এর অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. মোসাদ্দেক হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘চুইঝাল মূলত ওষুধিগুণসম্পন্ন এক ধরনের মসলা। এটি পিপারেটিভ গোত্রের অর্থাৎ পান গোত্রের উদ্ভিদ। এটি খাবারে দিলে খাবারের স্বাদ বাড়ায় এবং ভেষজ ওষুধ জাতীয়। চুইঝালের সবচেয়ে বড় উপকারিতা যাদের অ্যাজমা জাতীয় সমস্যা রয়েছে তাদের সেই সমস্যা দূর করে। যাদের গিটে গিটে ব্যথা হয় তাদের সেই ব্যথা দূর করে। কোষ্টকাঠিন্য দূর করে। ’ 

এছাড়াও আইসোফ্লাভোন ও অ্যালকালয়েড নামক ফাইটোক্যামিকাল রয়েছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ক্যানসার  প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা রাখে বলে জানান তিনি।  

চুইঝালের প্রকারভেদ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দুই রকম চুইঝাল রয়েছে। মাটির নিচে যেগুলো থাকে সেগুলোর মূল্য বেশি। সেগুলো কেজিপ্রতি মূল্য ১ হাজার টাকা। আর মাটির ওপরে যেটা সেটা কেজিপ্রতি ৭ থেকে ৮শ টাকা। এটি উচ্চমূল্যের একটি ফসল। এটি চুইঝাল দুই থেকে আড়াই বছরে ৩০ কেজি পর্যন্ত হতে দেখেছি। ২০১৮ সাল থেকে আমাদের প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে এই মসলাপণ্যটি জনপ্রিয় হতে শুরু করে। এখন তো বাংলাদেশের কিছু মানুষ এটির সঙ্গে পরিচিত হয়ে গেছেন। চুইঝাল সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ঈদের সময়, পূজার সময়। ’

‘উল্লেখযোগ্য তথ্য’ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক সেই বিশ্বভারতী থেকে এসে চুইঝাল নিয়ে গেছেন। খুলনা অঞ্চলের দক্ষিণ দিকে রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়ি ছিল। রবীন্দ্রনাথ মাঝে মাঝে বাংলাদেশে আসতেন এবং খুলনায় গিয়ে চুইঝাল দেখেছিলেন। পরবর্তীতে উনার কোনো এক লেখায় এই চুইঝাল বিষয়টি তিনি উল্লেখও করেছিলেন। তবে সেটা কোনো লেখায় এই মুহুর্তে আমার মনে পড়ছে না। ওই লেখারই আলোকে প্রায় বছর খানেক আগে বিশ্বভারতী থেকে গবেষকরা এসে বাংলাদেশের চুইঝাল নিয়ে যান।  

চুইঝাল মাংসজাতীয় খাবারের সাথে ছোট ছোট করে কেটে কেটে দেওয়া হয় এবং তাতে স্বাদ বাড়ায়। শুধুমাত্র চুইঝালের কারণে আমাদের এখানে কয়েকটি খাবার হোটেল খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সারাদেশের মানুষ এখানে এসে চুইঝালযুক্ত খাবার খেয়ে থাকেন বলে জানান কৃষিবিদ মোসাদ্দেক হোসেন।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২২ 
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।