ঢাকা, শনিবার, ১১ আশ্বিন ১৪৩২, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৭

ফিচার

ইসরায়েলের ‘গোপন ভল্ট’ ভেঙে ১৮৯ বিজ্ঞানীর তথ্য পেলো ইরান

আশরাফুর রহমান, তেহরান থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:১৮, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫
ইসরায়েলের ‘গোপন ভল্ট’ ভেঙে ১৮৯ বিজ্ঞানীর তথ্য পেলো ইরান ইরানের গোয়েন্দামন্ত্রী সাইয়্যেদ ইসমাইল খাতিব

ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয় ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সামরিক ও পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে প্রাপ্ত বিপুল গোপন নথির নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে। এসব নথিতে ১৮৯ জন পারমাণবিক ও সামরিক বিশেষজ্ঞের পূর্ণ নাম, ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা এবং ইসরায়েলের অস্ত্র প্রকল্পের সঙ্গে তাদের পেশাগত সম্পর্কের বিস্তারিত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

দেশটির গোয়েন্দামন্ত্রী সাইয়্যেদ ইসমাইল খাতিব জানিয়েছেন, ইরানি বিশ্লেষকরা এখনও এসব নথি খতিয়ে দেখছেন এবং তালিকাটি আরও বিস্তৃত হচ্ছে। এই তথ্যগুলো ‘মাকড়সার জাল’ নামে একটি ডকুমেন্টারিতে প্রকাশ করা হয়েছে, যা গতরাতে ইরানের জাতীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়।

মন্ত্রী জানান, ডকুমেন্টারিতে দেখানো হয়েছে কীভাবে ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা এ তথ্যভান্ডার হাতে পায়, যেখানে গবেষক, বিজ্ঞানী এবং অস্ত্র প্রকল্পের সিনিয়র ম্যানেজারদের তালিকা রয়েছে। এদের মধ্যে মার্কিন ও ইউরোপীয় বিজ্ঞানীরাও রয়েছেন, যারা সংশ্লিষ্ট কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত।

ইসমাইল খাতিব বলেন, “ইরানি গোয়েন্দারা বহুস্তরীয় জটিল এক অভিযানে অংশ নিয়ে ইসরায়েলের গোপন ভল্টে প্রবেশ করে পারমাণবিক, সামরিক, গোয়েন্দা ও বৈজ্ঞানিক খাতের তথ্য সংগ্রহ করে। এই ভান্ডারে সংবেদনশীল দ্বৈত-ব্যবহারযোগ্য সামরিক ও বৈজ্ঞানিক স্থাপনাসমূহের সুনির্দিষ্ট তথ্যও রয়েছে। এ ছাড়াও এমন নথি রয়েছে, যা থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এবং মার্কিন সিনেটররা আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থায় (আইএইএ) প্রভাব খাটিয়েছেন এবং আমাদের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে গোপন তথ্য পেয়েছেন। ”

ইরানের গোয়েন্দামন্ত্রী জানান, জুন মাসে ১২ দিনের যুদ্ধ চলাকালীন এসব নথি থেকে সংগৃহীত স্থানাঙ্কের ভিত্তিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিট ইসরায়েলের কিছু স্থাপনা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে।

তিনি বলেন, প্রকাশিত তথ্য মোট প্রাপ্ত নথির কেবল একটি ক্ষুদ্র অংশ। তবে মন্ত্রীর মতে, এই সীমিত প্রকাশও শত্রু শাসনের দীর্ঘদিনের গোপনীয়তা ও এর পৃষ্ঠপোষকদের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় খুলে দিয়েছে এবং তাদের ‘পারমাণবিক অস্পষ্টতার’ অবসান ঘটিয়েছে।


আইএইএ’র মহাপরিচালক ‘রাফায়েল গ্রোসি’র ব্যক্তিগত ছবি, যা ইসরায়েল থেকে পাওয়া নথিপত্রের মধ্যে ছিল

মন্ত্রী আরও জানান, “ইসরায়েলের পারমাণবিক প্রতিষ্ঠান, সামরিক সংস্থা, এমনকি সাধারণ নাগরিকদেরও একটি বড় অংশ ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে। তারা এই বিপুল নথি শত্রুর বহুস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা অতিক্রম করে ইরানে নিয়ে আসতে সহায়তা করেছে। এই সহযোগিতার পেছনে দুটি প্রধান উদ্দেশ্য কাজ করেছে: প্রথমত, আর্থিক প্রণোদনা ও অর্থপ্রাপ্তি; দ্বিতীয়ত, দুর্নীতিগ্রস্ত ও অপরাধী প্রধানমন্ত্রীকে (নেতানিয়াহু) ঘিরে তাদের গভীর ঘৃণা, যা প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপে রূপ নেয়। ”


ইসরায়েলের একটি গোপন পারমাণবিক গবেষণাগারের ভেতরের যন্ত্রপাতি

নেতানিয়াহুর উদ্দেশে ইসমাইল খতিব বলেন, “ইরানের পানি সমস্যার সমাধান নিয়ে চিন্তা না করে তোমার কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে চিন্তা করো, যাদের অনেকেই খুব অল্প টাকার বিনিময়ে আমাদের হয়ে কাজ করেছে। ”

ইসমাইল খাতিব জানান, এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে এই বিপুল ডেটা প্রক্রিয়াজাত করে মানব ও প্রাতিষ্ঠানিক উপাদানগুলোর পারস্পরিক নেটওয়ার্ক উন্মোচন করা। এটি শত্রুর প্রকৃত হুমকি ও ষড়যন্ত্রের বাস্তব চিত্র প্রকাশ করবে।


যুক্তরাষ্ট্রের লস আলামোস পরমাণু গবেষণাগারে ইসরায়েলি পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের সফর

ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রী ইসরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যদি ইসরায়েল আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ না করে, তবে এর চেয়েও ধ্বংসাত্মক পাল্টা আঘাতের মুখে পড়বে। ”

পাশাপাশি তিনি ইরানি জনগণকে আশ্বস্ত করে বলেন, গোয়েন্দা বাহিনী সবসময় নীরবে বিশাল দায়িত্ব পালন করছে এবং এর ফল হচ্ছে দেশের স্থায়ী নিরাপত্তা।

এর আগে ২০২৫ সালের জুনের শুরুতে ইরানের জাতীয় টেলিভিশন জানায়, তেহরান ইসরায়েল থেকে “অসংখ্য কৌশলগত ও সংবেদনশীল তথ্য ও নথি” সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে পারমাণবিক স্থাপনা ও প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার ফাইলও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

সেই সময় কর্মকর্তারা এটিকে এক “কৌশলগত গুপ্তধন” বলে অভিহিত করেছিলেন, যদিও তখন বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।

ইরানি কর্মকর্তাদের মতে, এই অভিযানে ইসরায়েলের অতীত ও চলমান অস্ত্র প্রকল্প, পারমাণবিক পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ কর্মসূচি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে মিলিয়ন মিলিয়ন পৃষ্ঠার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

জুন মাসে ইরান-ইসরায়েলের একাধিক সংবেদনশীল সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনার ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এর মধ্যে ছিল রেহোভতে অবস্থিত ‘ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স’— ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান বৈজ্ঞানিক ও গবেষণা কেন্দ্র।

এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।