ঢাকা: স্কুলের গণ্ডি না পেরোতেই বিয়ে হয় রাজশাহীর মেয়ে শিউলি আক্তারের। তখন থেকেই স্বামী ফারুকে সঙ্গে সংসারের হাল ধরেন শিউলি।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) শিউলি চড়ক ফুল বিক্রি করতে বসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুল তলায়।
এ সময় শিউলি আক্তারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে জানান, তিনি স্বামী-ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি নিয়ে থাকেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পাশের এলাকায়। তার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন ১৫ বছর বয়সে। তারা থাকেন আলাদা বাসায়। শিউলির ছেলে কাজ করেন একটি কম্পিউটারে দোকানে। সবকিছু মিলিয়ে তার মোটামুটি সংসার চলছিল। কিন্তু বর্তমানে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাড়াতে হয় চড়ক ফুলের দাম। কিন্তু এখন আর আগের মতো তেমন বিক্রি হয় না ফুল। ফলে সংসার চালাতেও কষ্ট হয় তার।
তিনি আরও জানান, কোনো এলাকায় মেলা হলে সেখানে চড়ক ফুল বিক্রি করতে ছুটে যান তারা। মেলায় বসেই তৈরি করেন ওই খেলনা। একেকটা চড়ক ফুল বানাতে তার সময় লাগে মাত্র এক মিনিট। তিনি আগের দিন রাতেই সাইজ করে কেটে রাখেন রঙিন কাগজ।
স্বামীসহ প্রতিদিন প্রায় ৫শ পিস চড়ক ফুল তৈরি করতে পারেন বলে জানালেন ওই নারী। তাদের বানানো একেকটি চড়ক ফুল বিক্রি করেন ৫০ টাকায়। কাগজ দিয়ে গোলাপ ফুল, ময়ূর, হাঁস, পাখি, নৌকা বানাতে পারেন তার স্বামী।
ওই নারীর স্বামী ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, এই কাজ করে আর সংসার চলে না। টুকটাক অন্যকাজও করতে হয়। এখন সব আধুনিক হয়েছে। খেলনাগুলোও এসেছে অত্যাধুনিকের ছোঁয়া। ঢাকার শিশুদের বিদেশি খেলার প্রতি আকর্ষণ বেশি। রাজধানীর মেলায় কাগজের ফুলসহ অন্যান্য খেলনা তেমন বিক্রি হয় না। গ্রামের মেলায় শিশুদের চাহিদা থাকে একটু বেশি। মেলা থাকলে দৈনিক গড়ে ৩শ চড়ক ফুল বিক্রি করতে পারি। এছাড়া বন্ধের দিনগুলোতে বিভিন্ন এলাকায় হেঁটে হেঁটে এক থেকে দেড়শ চড়ক ফুল বিক্রি করা যায়।
মিরপুরের বাসিন্দা হাসনাইন কাদের বলেন, ঈদে উপলক্ষে রাস্তা-ঘাট ফাঁকা, তাই স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে এসেছেন চারুকলায় বর্ষবরণের প্রস্তুতি দেখতে। ছেলের আবদারে কিনলেন একটি চড়ক ফুল।
হাসনাইন বলেন, প্লাস্টিক খেলনার দাপটে এসব কাগজের খেলনা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর পর এই খেলনাগুলো শিশুরা আর দেখতেই পাবে না। আমাদের এই মেলার ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখা উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৪
এএটি