ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস ইতিহাসের মহাফেজখানা

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১০
বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস ইতিহাসের মহাফেজখানা

ঢাকার আগারগাঁও শেরেবাংলা নগরে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস। এটি বাংলাদেশের সব ঐতিহাসিক তথ্যসমৃদ্ধ সরকারি ও বেসরকারি দলিলপত্র, বই, পান্ডুলিপি, মানচিত্র ইত্যাদির সংগ্রহ ও সংরক্ষণশালা।

 


বহু প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন দেশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের প্রচলন ছিল। আধুনিক আরকাইভসের জন্ম অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে ফরাসি বিপ্লবের সময়। ১৭৮৯ সালে ফ্রান্সে জাতীয় আরকাইভস প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৭৯৬ সালে প্রাদেশিক আরকাইভস প্রতিষ্ঠা করা হয়। আরকাইভস প্রতিষ্ঠার এই রীতিটি পরে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।


ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম কলকাতায় ১৮৯১ সালে ‘ইম্পেরিয়াল রেকর্ড ডিপার্টমেন্ট’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরে এই ডিপার্টমেন্টই ‘ন্যাশনাল আরকাইভস অব ইন্ডিয়া’ নামে দিল্লিতে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর ‘ডাইরেক্টরেট অব আরকাইভস অ্যান্ড লাইব্রেরিজ’-এর অধীনে ১৯৫১ সালে করাচিতে ‘ন্যাশনাল আরকাইভস অব পাকিস্তান’ প্রতিষ্ঠিত হয়।


স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে ঢাকায় আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের অধীনে প্রথম বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৮৩ সালে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ও স্থায়ী দলিল-দস্তাবেজ সংগ্রহ, সংরক্ষণ, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারিভাবে ‘জাতীয় আরকাইভস অধ্যাদেশ’ জারি করে।

জাতীয় আরকাইভসের কাজ
আরকাইভস যেসব উল্লেখযোগ্য কাজ করে থাকে, তার মধ্যে আছে :
১.    সরকারি এবং ব্যক্তিগত নথিপত্র সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
২.    প্রশাসক, গবেষক এবং জনসাধারণকে গবেষণার কাজে সহায়তা প্রদান
৩.    বাংলাদেশ সংক্রান্ত সব দলিলপত্রের মূল বা যে কোনো ধরনের কপি বিদেশি আরকাইভস বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করা
৪.    জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সংরক্ষক হিসেবে কাজ করা
৫.    বিদেশি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা।

সংরক্ষিত নথিপত্র
বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভসে আঠারো শতকের মধ্যভাগ থেকে উনিশ শতকের প্রায় শেষভাগ পর্যন্ত কয়েক হাজার জেলা রেকর্ডসহ এ দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের দু®প্রাপ্য দলিলপত্র সংরক্ষিত আছে।


জেলা রেকর্ডগুলোতে সরকার ও জেলা প্রশাসনের মধ্যে যেসব চিঠিপত্র আদান-প্রদান হয়েছে সেগুলি অন্তর্ভুক্ত আছে। প্রাথমিকভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রশাসনের এবং বিশেষ করে কালেক্টরেট প্রতিষ্ঠার পর স্থানীয় প্রশাসনের প্রাত্যহিক কর্মকা-ের বিবরণ জেলা রেকর্ডগুলোতে রয়েছে। এসব মূলত প্রাচীন হস্তলিপিতে লেখা, তবে কিছু ছাপার আকারেও রয়েছে। এছাড়া এই প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত নথিপত্রও সংগ্রহ করে, যেমনÑ অবিভক্ত বাংলার মন্ত্রী, মুসলমান নেতা মরহুম খান বাহাদুর নওয়াব আলী চৌধুরীর কিছু নথিপত্র সংগ্রহ করেছে।

পুরাতন মানচিত্র
এই আরকাইভস ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার অফিস এবং বিভিন্ন জেলা কালেক্টরেট রেকর্ডরুম থেকে উনিশ ও বিশ শতকের বিভিন্ন সময়ের বাংলা প্রদেশ তথা বিভিন্ন বিভাগ, জেলা ও থানাওয়ারি প্রচুর পরিমাণ মানচিত্র সংগ্রহ করেছে।

সংবাদপত্র, রেডিও মনিটরিং রিপোর্ট ও মাইক্রোফিল্ম
আরকাইভস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, প্রেস ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্ট এবং অন্যান্য উৎস থেকে ১৮৭৮ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত সময়ের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র সংগ্রহ করেছে। এছাড়া সরকারের প্রেস ইনফরমেশন বিভাগ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রেস কিপিংস সংগ্রহ করেছে। এই সংগ্রহের মধ্যে আছে ১৯৬২ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত প্রধান প্রধান ঘটনাবলি। এছাড়া এ প্রতিষ্ঠান  বাংলাদেশ বেতার পরিবেশিত দৈনিক রেডিও মনিটরিং রিপোর্ট ১৯৮৭ সাল থেকে সংগ্রহ করে আসছে।


ইউনেস্কোর আর্থিক সহযোগিতায় লন্ডনের ‘ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি’ থেকে বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস ১৮৭৪ থেকে ১৯১৬ সালের বাংলা সংবাদপত্রের কিছু অংশের ৫৭টি মাইক্রোফিল্ম রোল সংগ্রহ করেছে। পর্তুগালের লিসবন থেকে একটি প্রাচীন বাংলা পান্ডুলিপির মাইক্রোফিল্ম সংগ্রহ করেছে।

কীভাবে ব্যবহার করা যায়
এখানকার সংরক্ষিত নথিপত্র গবেষক ও জনগণের গবেষণা কাজের জন্য উন্মুক্ত। তবে অত্যন্ত গোপনীয় বা জাতীয় নিরাপত্তার সাথে জড়িত নথিপত্রের ব্যবহার নথি সৃষ্টিকারী সংস্থার অনুমতি ছাড়া গবেষকদের দেয়া হয় না। জাতীয় আর্কাইভসের নির্ধারিত ফরম যথাযথভাবে পূরণ ও কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাভের পর যে কোনো গবেষক তার গবেষণার কাজ করতে পারেন। আরকাইভসের সাথে দু®প্রাপ্য একটি গ্রন্থাগার রয়েছে। এখানে প্রায় পাঁচ হাজার বই আছে। এই রেফারেন্স বইয়ের সংগ্রহশালাটি শুধু গবেষকরাই ব্যবহার করতে পারেন।


জাতীয় আর্কাইভস খোলা থাকে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনে এটি বন্ধ থাকে।

তথ্যসূত্র : বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস গাইড বই ২০০১

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১২১০, জুলাই ০৩, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।