উৎসবমুখরতার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসকে সাজানো হয়েছিল নতুন সাজে।
অনুষ্ঠানের প্রথম দিন
দু দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিন ২৩ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই স্কুল ও কলেজ মাঠে ভিড় করতে থাকেন প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তন ও বর্তমান শিার্থীরা। সকাল ১০টায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ড. কাজী রেজাউল হক।
এ সময় তিনি বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠান নতুন-পুরাতনের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। এরকম সুন্দর পরিবেশে গড়ে উঠা একটি কলেজে পড়ালেখা করতে পেরে আমি নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করছি।
তিনি বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, এই স্কুল ও কলেজ থেকে পড়ালেখা করে অনেকে অনেক বড় হয়েছেন। আশা করি তোমরাও সেই অনুসরণ করবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক ও আদমজী কলেজের অধ্য কর্নেল মোহাম্মদ গোলাম হোসেন সরকার ও যুগ্ম-আহ্বায়ক লে. কর্নেল রায়হানুল হক।
অনুষ্ঠানে আন্তঃপ্রতিযোগীতায় বিজয়ীদের মাঝে ক্রেস্ট ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়।
এছাড়া অনুষ্ঠানে বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সৌহার্দমূলক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় এবং শেষে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান হয়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন ২৪ ডিসেম্বর শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় স্কুল ও কলেজের খেলার মাঠে মুক্ত আকাশে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সুবর্ণজয়ন্তীর উদ্বোধন করেন প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ছাত্র সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুল মুবীন।
এ সময় তিনি বলেন, এই কলেজে পড়ে আমার যে সুদৃঢ় ভিত তৈরি হয়েছিল এই ভিতের ওপর আজকে আমি এই বিশাল অট্টলিকা নির্মাণ করতে পেরেছি।
তিনি আরো বলেন, অতীতের সোনালি গৌরবের সঙ্গে বর্তমানের আধুনিকতার সুষম সমন্বয় প্রতিষ্ঠান দুটিকে এনে দিয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। আমার বিশ্বাস আজকের ছাত্র-ছাত্রীরা পূর্বসূরিদের পথ অনুসরণ করে তাদের গৌরবকে আরও বৃদ্ধি করবে।
ছাত্রছাত্রীদের যোগ্য নাগরিক হওয়ার জন্য মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করার কথা বলেন তিনি। তুলে ধরেন লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধূলা, শরীরচর্চাসহ বিভিন্ন সহশিা কার্যক্রমের গুরুত্ব।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক ও আদমজী কলেজের অধ্য কর্নেল মোহাম্মদ গোলাম হোসেন সরকার।
এ সময় তিনি বলেন, ২০১০ সালে এইচএসসি পরীার ফলাফলের ভিত্তিতে এই কলেজ ঢাকা বোর্ডে ১৬তম স্থান করেছে। আশা করি এবার ১০তম স্থানে এগিয়ে নিতে পারব।
অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেন প্রতিষ্ঠানটির ১৯৬৩ ব্যাচের শিার্থী ও সাবেক রাষ্ট্রদূত আশফাকুর রহমান, ১৯৬৬ ব্যাচের শিার্থী নাজমুল হক, ১৯৭০ ব্যাচের শিার্থী মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আক্তার চৌধুরী আক্কু, ফুটবলার কায়সার হামিদ প্রমুখ।
এর আগে জীবনযুদ্ধে সফল দায়িত্ব কৃতি ছাত্র-ছাত্রী, চেয়ারম্যান, অধ্যদের ক্রেস্ট দিয়ে অভিনন্দিত করা হয়।
পরে সেনাপ্রধান কলেজের সাবেক ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা শাফি ইমাম রুমীর স্মরণে নির্মিত ‘শহীদ রুমী উন্মুক্ত মঞ্চ’র উদ্বোধন করেন। কলেজের সাবেক ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা শাফি ইমাম রুমীকে পাক হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৯ আগস্ট ধরে নিয়ে যায়। পরে আর তার কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
দু দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিল কনসার্ট। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় মঞ্চে আসেন কণ্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবী। তিনি দেশের গান দিয়ে শুরু করে ‘লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প’সহ প্রায় সাতটি গান পরিবেশন করেন। এরপর সন্ধ্যা ছয়টায় মঞ্চে আসেন মিলা। তিনি ‘তুমি কি সাড়া দেবে’সহ পাঁচটি গান পরিবেশন করেন। সন্ধা সাড়ে ছয়টায় আসেন নগরবাউল খ্যাত জেমস। তিনি ‘লেইস ফিতা লেইস’ দিয়ে শুরু করে ‘দিওয়ানা দিওয়ানা’ ‘গুরু ঘর বানাইলা কি দিয়া’ ও ‘পাগলা হাওয়া’ এই চারটি গান পরিবেশন করেন। রাত সাড়ে সাতটায় আসেন হায়দার হোসেন। তিনি তার জনপ্রিয় ‘গণতন্ত্র’ গান দিয়ে শুরু করে ‘তিরিশ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি’, ‘গর্ভনমেন্ট বাই দ্য পিপল ফর দ্য পিপল অব দ্য পিপল’, ‘আমি স্বপ্ন দেখি স্বপ্ন’সহ বারটি গান পরিবেশন করেন। সবশেষে মঞ্চে আসেন ব্যান্ডদল সোলস। ‘এ এমন পরিচয়’ ‘এই মুখরিত জীবনের চলার পথে’, ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’, ‘ব্যস্ততা আমাকে দেয় না অবসর’, ‘ও বন্ধু তোকে মিস করছি ভীষণ’, ‘দেখা হবে বন্ধু কারণে আর অকারণে’সহ মোট বারটি গান পরিবেশন করেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেখানো হয় ‘লেজার শো’। লেজার শোতে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেন লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার মুনমুন।
দু দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম।
বাংলাদেশ সময় ২২৩০, ডিসেম্বর ২৫, ২০১০