চট্টগ্রাম থেকে ফিরে: কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের আড়াই ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে হলো সোয়া পাঁচ ঘণ্টায়। সকাল দেখা হলো না চট্টগ্রামে।
তখনও জানি না রোদেলা বিকেল সম্পর্কে। তবে তপন দাদার ফোনে এটা স্পষ্ট ছিল-আমরা ছ’জন স্পেশাল কিছু খাচ্ছি। কষ্টের মধ্যেও একটু খুশিই লাগলো।
শহরে পৌঁছুবার পর উঠলাম চট্টগ্রাম অফিসে। সেখানটায় খানিক জিরিয়ে ক্লান্ত শরীরেই ছুটলাম চট্টগ্রামের কাবাব পাড়ায়। এম এ আজিজ স্টেডিয়াম লাগোয়া রেস্টুরেন্ট ‘রোদেলা বিকেল’।
বাইরে থেকে দেখেই ক্লান্তি অনেকটা কেটে গেলো, মন হয়ে উঠলো ফুরফুরে। ‘রোদেলা বিকেল’, বেশ ছিমছাম, গোছালো; আর এক কথায় সুন্দর।
রেস্টুরেন্টের মূল কক্ষের সামনে রয়েছে গ্লাসঘেরা একটি লবি। সেখানে পাতা কারুকার্যের চেয়ার-টেবিল। রয়েছে ফ্যান ও বাহারি রকমের সুদৃশ্য সব বাতি।
তখন মধ্যদুপুর। তাই রোদেলার লবিতে বসে বিকেলের মিষ্টি রোদমেখে খাওয়া-আড্ডা হলো না।
কাঠের কয়েকটি সিঁড়ি বেয়ে ঢুকে পড়লাম মূলকক্ষে। স্বচ্ছ গ্লাসঘেরা ঘর থেকে দেখা যাচ্ছে স্টেডিয়ামে চলা প্রাকটিস ম্যাচ।
আসন নিয়ে বসতেই চলে এলেন মিষ্টিভাষী ওয়েটার। দিলেন খাবারের তালিকা। ফরমালিনমুক্ত দেশি খাদ্য, স্বাস্থ্যকর তেল, বিদেশি সবচেয়ে ভালো মশলায় রান্নার ফর্মুলা দেখে ইচ্ছে হচ্ছিল সবই খাই। তবে পেট তো একটা, তাই লোভ সংবরণ করে অর্ডার দিতে হলো ইলিশ, সবজি, ডাল, রূপচাঁদা গ্রিল আর সবশেষে হজমের জন্য স্পেশাল সল্ট লাচ্ছির।
সানফ্লাওয়ার অয়েল, দেশি পেঁয়াজ, রসুন, হাঁসের ডিম আর বিদেশি সবচেয়ে ভালো মশলা দিয়ে রান্না এত বড় আর স্বাদী ইলিশ আগে কখনো খাইনি আমরা কেউ। চিংড়ি দিয়ে পুঁইশাক রান্না, হাঁসের ডিমের ভর্তা, রূপচাঁদা গ্রিল আর এমন স্বাদের মসুর ডাল জিভে জল আনবে আর ক্ষুধা বাড়াবে যে কারও।
মোগলাই খাবারের সত্যিকারের গল্প জানানো রোদেলার উদ্দেশ্য। এখানে সয়াবিন তেল ব্যবহার করা হয় না। সানফ্লাওয়ার আর ক্যানোলা অয়েল প্রধান তেল। রোদেলার সব মাছই ফরমালিনমুক্ত। এর মধ্যে চিংড়ি আনোয়ারা খাল ও মদুনাঘাটের, কই আনোয়ারার ধান ক্ষেতের। আর সমুদ্রের টাটকা রূপচাঁদা ও কোরালসহ সব ধরনের মাছ জিহ্বাকে একদমই অকৃত্রিম স্বাদ দেবে। এখানকার হাঁসের ডিম আসে হাতিয়া থেকে, সবজি সংগ্রহ হয় সীতাকুণ্ড থেকে, ভর্তায় ব্যবহার হয় চন্দনাইশের দেশি আলু (আলু আবার পানিতে সিদ্ধ করা হয় না)।
এগুলো ‘রোদেলা বিকেলে’র বিশেষত্ব।
দেশি সবচেয়ে ভালো জিনিস সংগ্রহ করে বিদেশি ভালো মসলা দিয়ে নিজস্ব রন্ধন প্রণালীতে পরিবেশন করা হয় রোদেলা বিকেলের খাবার। দুপুরের খাবারের প্যাকেজ পাওয়া যাবে ১৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে।
অন্য সবার মতো আমরাও পেটপুরে খেলেও মসলা আর রান্নাগুণে কোনো অস্বস্তি টের পেলাম না পেটে। সল্ট লাচ্ছি তো খাবার শেষ না হতেই হজম করে দিলো সব খাবার।
খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে রেস্টুরেন্টটির ম্যানেজার মাহবুব আলম চৌধুরীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল খাবার নিয়ে। তিনি একে একে জানাচ্ছিলেন কেন রোদেলা বিকেল পাঁচতারকা হোটেল বা যে কোনো ভালো মানের রেস্টুরেন্ট থেকে আলাদা। মানে কোনো অংশে তাদের চেয়ে কম নয়। আবার এখানে খেতে পারবেন যে কোনো আয়ের মানুষ। কারণ খাবারের প্যাকেজ শুরু মাত্র ১৫০ টাকা থেকে। তবে খাবারের মান, স্বাদ টাকার কথাও ভুলিয়ে দেবে যে কাউকে।
খাবার নিয়ে রেস্টুরেন্টটির মালিক রফিকুল বাহারের সাধনা, দেশ বিদেশ থেকে ভালো মানের মসলা ও খাদ্যপণ্য সংগ্রহে এই সফলতা বলেও জানান ম্যানেজার মাহবুব।
এরইমধ্যে চট্টগ্রামে যে কত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে রোদেলা বিকেল তার নমুনাও পাওয়া গেলো মাত্র কয়েক ঘণ্টায়। অনেককে দেখা গেলো শুধু ইলিশ খেতে ছুটে এসেছেন পরিবার নিয়ে, অনেকে খিঁচুড়ির জন্য। না পেয়ে ফিরেও গেলেন অনেকে। কারণ এতো তাজা আরও সুস্বাদু ইলিশ কি শেষ দুপুরে পাওয়া যায়!
রোদেলা বিকেলে’র মিডনাইট আওয়ারে (রাত ১০টা থেকে ১টা) রয়েছে বিশেষ আয়োজন। হোল গ্রিল ফিশ, স্পেশাল চিকেন কড়াই, মাটন লেগ কোরমা, স্পেশাল বিফ চাপ, মিল্ক পোলাও, রুমালি রুটি, স্পেশাল কুলফি আইসক্রিম ও স্পেশাল গোল্ড কফি পাবেন এসময়।
গোল্ড কফিতে পাবেন সুইজারল্যান্ডের নেসক্যাফের গোল্ড কফি, অস্ট্রেলিয়ার চিনি, আমেরিকার কফি ম্যাট ও ইংল্যান্ডের কোকো পাউডার।
কফির মতো সব খাবারেই পাবেন এমন স্পেশাল উপকরণ। সুতরাং চট্টগ্রামে যারা রয়েছেন, যারা যাবেন বেড়াতে তারা অন্তত দুপুর, বিকেল বা রাতে একবারের জন্য ঢুঁ মারতে ভুলবেন না ‘রোদেলা বিকেলে’।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৪