ঢাকা: বাসমতি চালের সঙ্গে ভারতের রাজস্থানের উঠের মাংসের ভুনা খিচুড়ির স্বাদ এবার ছড়িয়ে পড়বে কক্সবাজার ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। রকমারি খাবারের বৈচিত্র্যকে আরো সমৃদ্ধ করতে এবং বাহারী সব খাবার ভোজন রসিকদের কাছে পৌঁছে দিতে আফতাব রেস্টুরেন্টের নতুন দুইটি শাখা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
পুরান ঢাকার সব রেস্তোরাঁকে ছাড়িয়ে আফতাব রেস্তোরাঁর নাম এখন অনেকের মুখেই শোনা যায়। এর বিশেষত্ব, উটের মাংস দিয়ে রান্না করা ভুনা খিচুড়ি পাওয়া যায় এখানে। মাত্র তিন মাস আগে ভোজনপ্রিয়দের কথা মাথায় রেখে নিজেদের বিচিত্র খাদ্য ভাণ্ডারকে আর একটু সমৃদ্ধ করতে অনেকটা পরীক্ষামূলক ভাবেই এখানে উটের মাংসের ভুনা খিচুড়ি বিক্রি শুরু হয়। মাস তিনেকের ব্যবধানে এ খাবারের সুঘ্রাণ যেনো ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীর সবখানে।
পুরান ঢাকার চাঁনখারপুল নাজিমুদ্দিন রোড ছাড়াও রামপুরা ও মতিঝিল বিমান অফিসের পাশে রয়েছে এর আরো দু’টি শাখা। ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে এবং এ খাবারের স্বাদ ছড়িয়ে দিতে উদ্বোধনের অপেক্ষায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আরো একটি শাখা। এছাড়া রাজধানীর গণ্ডি পেরিয়ে দেশের প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে কক্সবাজারে এর আরো একটি শাখা খোলার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
আগামী মাস দুয়েকের মধ্যেই শাখা দুটি খোলা হবে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন রেস্তোরাঁ মালিক মোহাম্মদ আফতাব।
রেস্তোরাঁ মালিক আফতাব বলেন, প্রতি মাসের ১৭ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত উটের মাংস দিয়ে রান্না করা ভুনা খিচুড়ি পাওয়া যায়। এখানে প্রতি প্লেট উটের মাংসের খিচুড়ি ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে শুধু এক বাটি উটের মাংস নিতে হলে ক্রেতাকে গুনতে হবে ২০০ টাকা।
একমাত্র আফতাব হোটেলেই উটের মাংসের খিচুড়ি পাওয়া যায় বলে রেস্তোরাঁ মালিক মোহাম্মদ আফতাবের দাবি।
তিনি বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করলেও কম সময়ে ভোজনরসিকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে উটের মাংসের খিচুড়ি। তিন থেকে সাড়ে তিন মণ ওজনের উট চার দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। আর এ উট আনা হয় ভারতের রাজস্থান থেকে। প্রতি সপ্তাহে গাবতলীর আমজাদ ব্যাপারির মাধ্যমে এ উট আনা হয়।
আফতাব জানান, ১৭ তারিখ সকাল ৯টায় পুরান ঢাকার চাঁনখারপুলের নাজিমুদ্দিন রোডে উট জবাই করার পরে তিনটি শাখায় মাংস সমানভাবে ভাগ করা হয়। আগে কাঁচা মাংস বিক্রি করা হলেও এখন খিচুড়ির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কাঁচা মাংস বিক্রি করা হয় না। এমনকি পাঁচ দিন বিক্রির কথা থাকলেও মাঝে মাঝে চার দিনেই মাংস শেষ হয়ে যায়। ফলে অনেক ক্রেতাকে শেষ দিনে এসে ফিরে যেতে হয়।
রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা এ খিচুড়ি খেতে বা নিতে আসে। তাদের চাহিদা বেড়ে যাওয়াতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আরো একটি শাখা হোলা হচ্ছে। ঢাকার বাইরে কক্সবাজারে খোলা এ শাখাই হবে প্রথম।
উটের মাংসের খিচুড়ি বিক্রির কারণ প্রসঙ্গে আফতাব জানান, পুরান ঢাকায় গরু, খাসি ও মুরগির মাংসের খিচুড়ি আছে। খাবারের বৈচিত্র্য আনতে এবং ভোজনরসিকদের কথা মাথায় রেখেই আমি উটের মাংসের খিচুড়ি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আফতাব জানান, ক্রেতাদের চাহিদার কারণে আমরা আমাদের শাখা বাড়াচ্ছি। পাঁচটা শাখাই উদ্বোধন হলে আমরা ২টি উট কিনে জবাই করতে পারবো। তাতে ক্রেতাদের চাহিদা কিছুটা হলেও আমরা পূরণ করতে পারবো বলেই আমাদের বিশ্বাস।
উটের মাংস প্রস্তুত প্রণালী নিয়ে আফতাব জানান, উটের মাংসের এক ধরনের গন্ধ আছে। আর সেটা দূর না করলে এর আসল স্বাদটাই মাটি হয়ে যায়। এ কারণেই উটের মাংস খাবার জন্য প্রন্তুত করার আগে এটা সংরক্ষণ প্রণালী অন্য মাংসের মতো না। অন্য মাংস যেমন কেটে ফিজে রাখলেই চলে এটা তেমন নয়। চাঁনখারপুলে প্রথমে উট জবাই করার পরে পরিষ্কারভাবে মাংস প্রস্তুত করা হয়। এর পরে প্রস্তুতকৃত মাংস আদা ও রসুন দিয়ে সেদ্ধ করা হয়। যাতে করে উটের মাংসের বাজে গন্ধ দূর হয়। পরে পানি ছেঁকে ফেলে সেদ্ধ মাংস আফতাবের নিজস্ব তৈরি ঘরোয়া মসলায় রান্না করে ফ্রিজিং করা হয়। ঘরোয়া মসলা তৈরিতে নানা ধরণের উপকরণ ব্যবহার করা হয়। যাতে ক্রেতারা এর সঠিক স্বাদ পান পাঁচ দিনই।
৬ থেকে ৭ মণ মাংস পাওয়া যায় এমন প্রতিটি উট গড়ে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দরে কেনা হয়। আর আফতাব রেস্তোরাঁর উটগুলো সাধারণত আজমত ব্যাপারির কাছ থেকে হয়।
আজমত ব্যাপারি জানান, উটগুলো সাধারণত রাজস্থান থেকে ভারতীয় ব্যাপারির মাধ্যমে ট্রাকযোগে সীমান্তে নিয়ে আনা হয়। এর পরে সীমান্ত থেকে গাবতলীতে।
আফতাবে উটের মাংস খেতে আসা সৌদি প্রবাসী ফয়সাল জানান, প্রায় ৫ বছর ধরে আমি সৌদি আরবে থাকি। সেখানে (সৌদি) উটের মাংস খাওয়া হয়। তাই পরিবারের সদস্যরা যাতে করে উটের মাংসের স্বাদ নিতে পারে সেই জন্য আফতাব হোটেলে এসেছি। আমরা সৌদি আরবে সাধারণত ফ্রাই করে উটের মাংস খাই। কিন্তু এখানে ঝোল মাংস খাচ্ছি।
উটের মাংস ছাড়া আফতাব হোটেলে গরু, মোরগ , ডিম ও গিলা কলিজা খিচুড়ি পাওয়া যায়। বাসমতি চালের সঙ্গে কাচ্চি বিরানি, গরুর তেহেরি ও খাসি তো আছেই। মোরগ পোলাউ ও সাদা ভাতের সঙ্গে ২০ রকমের ভর্তা পাওয়া যায়।
প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে এ রেস্তোরাঁ।
খিচুড়ি খেতে পুরান ঢাকার চাঁনখারপুল নাজিমুদ্দিন রোড শাখায় যোগাযোগ করুন- মোহাম্মদ
আফতাব-০১৭৬৪১২২০০১। রামপুরায় মোহাম্মদ আল আমিন – ০১৯৫৭৪৬৯০১০।
** পুরান ঢাকায় উটের মাংসের খিচুড়ি
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৪