টেকনাফ, কক্সবাজার থেকে ফিরে: সৌন্দর্য তার পরতে পরতে। যতদূর যায় দু’চোখ, তাতে লেগে থাকে সবুজ পাহাড়, কোলজোড়া শুভ্র মেঘ, বালুকারাশি, সবুজ ঝাউবন, ফেনিল প্রমত্তা জলরাশি।
বলছি কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরের নীলজলরাশির সবুজ কন্যা টেকনাফের কথা। রূপ-গুণ-বৈচিত্র্যের অন্ত নেই তার।
কোলজুড়ে বর্ষার যৌবনবতী নাফ, ওপাড়ে মায়ানমারের পাহাড়, এপারের তীরজুড়ে ছোট ম্যানগ্রোভ বন, আরেকপাশে আমাদের তারুণ্যদীপ্ত সবুজ পাহাড়, শেষ মাথায় টেকনাফ সৈকত।
এই সৌন্দর্য ভেদ করে তবেই পৌঁছুতে হয় সৈকতে। আর সৈকত! সে তো আরেক পৃথিবী, সমুদ্রস্বর্গ! সত্যি কক্সবাজার মূল সৈকত থেকে একেবারেই আলাদা টেকনাফ সৈকত। নিরেট বালু, একপাশে ঝাউবন, কিছুদূর এগোলেই পাহাড় মিশেছে সাগরে। সেখানে সৈকত নেই। সেটা আরেক সৌন্দর্য।
বাংলাদেশের মৎস্য আহরণের বড় একটি ক্ষেত্র টেকনাফ। মায়ানমার থেকে যেসব মাছ আসে আমাদের দেশে তার প্রধান ক্ষেত্রও টেকনাফ। কিনারজুড়ে চোখে পড়বে সুদৃশ্য বাহারি সব নৌকা। নৌকাগুলোর মধ্যেও রয়েছে শৈল্পিক ছোঁয়া। সৈকতের বাড়তি সৌন্দর্য এটি।
এখানকার সৈকতের চরিত্র কক্সবাজার থেকে আলাদা। ঢেউগুলো বেশ বড়। যখন ভেসে আসে কিনারে সেটা ছড়িয়ে পড়ে অনেকদূর জুড়ে। ফেনা তোলে দুধের মতো। অস্ফুটে কেউ বলেও ফেলতে পারেন, দুধসাগর নাকি!
এই সৈকতের আরেকটি বিশেষত্ব হলো পাহাড়-সাগর-পাহাড়ি বন একই রেখায় দেখতে পাওয়া। ঢেউগুলোও আসে বেশ ভেঙে ভেঙে। যখন আছড়ে পড়ে কিনারে তখন ভাগ হয়ে যায় স্তরে স্তরে। কক্সবাজার সৈকতের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে যে দুর্নাম আছে সেটা নেই টেকনাফে।
সন্ধ্যায় রূপটা বদলে যায়। বদলে যায় সব সাগরের রূপই। তবে টেকনাফ সৈকত তবু যেন অন্যরকম। জাগতিক নিস্তব্ধতা নিত্যনৈমিত্তিক। সাগরের গর্জন স্বর্গীয় সুধা।
শামুক ঝিনুক কুড়িয়েদের জন্য বিচটি খুবই উপযোগী। মানুষের হ্যাপা কম। নির্বিঘ্নে কুড়াতে পারেন কুড়িয়েরা। অনেকটা সাগরের ঢেউয়ে মাছ ধরার ভঙ্গিতে, কাপড়ের গোলাকার জালমতো তৈরি করে সংগ্রহ করা হয় সাগরের অলংকার শামুক ঝিনুক।
টেকনাফ শহর থেকে টমটমে ২০ মিনিটের দূরত্ব সৈকত। রাস্তাঘাটের অবকাঠামো মোটামুটি। তবে নেই পর্যাপ্ত আবাসিক ও খাওয়ার হোটেল। বিচের কাছাকাছি নেই কোনোটি। হাতে গোনা কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে মূল শহরে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অবসর বিনোদনের জন্য প্রায় অনেকেই কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনে যান। তাদের অনেকেই জানেন না এই সৈকতটির কথা। নিরিবিলি একান্ত সময় কাটানোর জন্য এমন সুন্দর জায়গা বাংলাদেশে আদৌ আছে কি-না সন্দেহ!
স্থানীয়রা জানান, মন্ত্রী-এমপি আমলা, বড় ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে সৈকতের আশপাশের অধিকাংশ জমি কিনে ফেলেছেন। কোনো অবকাঠামো এখনো গড়ে ওঠেনি।
তাদেরও দাবি টেকনাফকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত করা হোক। তাহলে এ এলাকার চেহারা, মানুষের অবস্থা পরিবর্তন হবে। এখানে রয়েছে বার্মিজ পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার। পাইকারি বিক্রি করা হয় এখান থেকে। স্থলবন্দরও এখানে। তবু অবহেলিত টেকনাফ। হাজার হাজার মানুষ টেকনাফের উপর দিয়ে সেন্টমার্টিন গেলেও তার দিকে যেন ফিরে তাকানোর সময় নেই কারও।
সরকারি নজরদারি, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, থাকা-খাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো যদি টেকনাফ ও টেকনাফ সৈকত কেন্দ্র করে গড়ে তোলা যায়, তাহলে এটা হতে পারে দেশের অন্যতম সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র।
** সমুদ্রস্নানে দুর্ঘটনা এড়াতে পারেন যেভাবে
** চোখ যখন গুগল আর্থ!
** রূপচাঁদার নামে টেকচাঁদা!
** আকাশ থেকে ভূমিতে (ভিডিও)
** যৌবনবতী নাফ, সুন্দরীতমা টেকনাফ
** সাগর পানে সাগর টানে
** প্রেমের অমর সাক্ষী মাথিনের কূপ
** খেতে ভুলবেন না আইনচি
** সোনাদিয়া, সম্ভাবনাময় সোনার দ্বীপ
** মিষ্টি পানের সবুজ দ্বীপ
** খাবারের সন্ধানে সাঁতারু গাভী!
** অটল পাহাড়ের বুকে উদ্দাম সাগর
** শারদ মেঘের দেশে, পাখির ডানায় ভেসে
** গরম গরম ফিশ ফ্রাই
** মহাপতঙ্গের পেটে একঘণ্টা!
** রিজেন্টে ফ্রি কক্সবাজার দর্শন
বাংলাদেশ সময়: ০১১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৪