এখন পর্যন্ত সারাবিশ্বের আতঙ্ক ইবোলা প্রতিরোধে চিকিৎসক, আন্তর্জাতিক সেবা সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী থেকে শুরু করে বিজ্ঞানী ও গবেষকরা প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ একদল গবেষক ও বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, গাঁজা ব্যবহার করে ইবোলা প্রতিহত করা সম্ভব।
১৮ অক্টোবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা বিজ্ঞানী ড. ডেভিড বি অ্যালেন গাঁজা ব্যবহারের মাধ্যমে ইবোলার মতো কঠিন ভাইরাসকে প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে দাবি করেছেন।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ড. ডেভিড অ্যালেন বলেন, ‘গাঁজাকে কাজে লাগিয়ে আমরা নিজেদেরকে ইবোলার মতো ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে পারি। ’
তবে ড. অ্যালেন সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এতে সিগারেটে ভরে গাঁজা পান করা যাবে না। তিনি জানান, গাঁজার মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণে ইবোলা প্রতিহত করার মতো প্রতিরোধকারী উপাদান রয়েছে। তরলায়নের মাধ্যমে এসব উপাদান শোষণ করে নেয়া যায়।
ড. অ্যালেনের নেতৃত্বাধীন গবেষণায় বলা হয়, মস্তিষ্কের সাথে সংযুক্ত স্নায়বিক কোষের উপরিভাগে বিপুল সংখ্যক ক্যানেবিনয়েড রিসেপটোর ক্রিয়াশীল রয়েছে। আর ক্যানেবিনয়েড হল বিচিত্র ধরনের রাসায়নিক মিশ্রণের ফল। এসব ক্যানেবিনয়েডই হতে পারে অন্যতম রোগপ্রতিরোধকারী লড়াকু। কারণ যেসব জটিল রাসায়নিক মিশ্রণে এই ক্যানেবিনয়েড তৈরি হয় তাতে গাঁজার গঠনগত রাসায়নিক উপাদানগুলোও সক্রিয়—যা শরীরের ক্যানেবিনয়েড রিসেপটোরগুলোকে সক্রিয় রাখে।
ডেভিড অ্যালেন জানান, ক্যানেবিনয়েডগুলো স্বাভাবিক সচল করার মধ্য দিয়ে ইবোলার মতো ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করার বহু প্রতিরোধক গড়ে তোলা সম্ভব।
তিনি মনে করেন, ‘এক্ষেত্রে খুবই ভালো বৈজ্ঞানিক তথ্য-সূত্র রয়েছে; যাতে ক্যানেবিনয়েড ও এর বিশেষ সিবিডি বা ক্যানেবিডিয়ল স্নায়ুকোষের প্রতিরোধ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম। একইসঙ্গে ভাইরাসের নানাবিধ সংক্রমণ থেকে বিপুল প্রতিরোধকও তৈরি করতে সক্ষম। ভাইরাস জনিত ছত্রাক ও ক্ষতিকর জীবাণু-ব্যাকটেরিয়াকে শরীরের বিভিন্ন কোষে ছড়িয়ে পড়াকে গাঁজা যে ভালোভাবে বাধাগ্রস্ত করতে পারে ইতিমধ্যে তার স্বীকৃতি মিলেছে। এমনকি গাঁজাকে নতুন ধরনের এন্টি-মাইক্রোবায়াল বা অণুজীবাণু প্রতিরোধক হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়া যেতে পারে। কারণ গাঁজার মধ্যে রয়েছে অন্যান্য অনেক এন্টি-মাইক্রোবায়ালের বিভিন্ন প্রকার একশন ম্যাকানিজম। ’
কিন্তু গাঁজা কিভাবে ইবোলা ভাইরাসের ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে সে সম্পর্কে গবেষণাটিতে বলা হয়, ভাইরাসের আরএনএ গাঠনিক প্রক্রিয়ার জটিলতম রূপ হল
ইবোলা। এই ভাইরাসটি পিনোসাইটোসিসের (পিনোসাইটোসিস হল কোষের জৈবিক প্রক্রিয়া) মাধ্যমে দেহকোষগুলোকে ঢেকে ফেলে। এরপর ইবোলা মানবদেহের আসল কোষগুলো গোপন করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অদ্ভুত ধরনের নকল কোষ তৈরি করে। এই যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অদ্ভুত ধরনের নকল কোষ তৈরি করে এতে করে এটি ভাইরাসের আরএনএ কোডের মধ্যে বিভিন্ন রূপান্তর ঘটায়। যার ফলে ইবোলার কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার করাও প্রায় অসম্ভব। কিন্তু এর এই স্বয়ংক্রিয়ভাবে নকল কোষ তৈরির সক্ষমতা নষ্ট করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যকর এন্টি-ভাইরাল উপাদান রয়েছে গাঁজায়।
ইবোলা প্রথমে এমন সব প্রোটিন উৎপাদন করে যা দেহের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা থেকেই ভাইরাসটিকে গায়েব করে দেয়। ফলে ভাইরাস না থাকায় রোগ
প্রতিরোধ ব্যবস্থা কিভাবে তা প্রতিরোধ করবে?
গবেষকরা বলছেন, ইবোলা প্রতিরোধে গাঁজা নিয়ে আরো বিস্তারিত ও গভীর গবেষণা জরুরি। তবে তারা বলেছেন, যেখানে ইবোলা ছড়িয়ে পড়েছে সেখানে এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট কাজে দিতে পারে গাঁজা।
কালেক্টিভ ইভোলুশন অবলম্বনে শাহাদাৎ তৈয়ব
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৪