ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

ফিচার

চিড়িয়াখানায় পরিযায়ী বালি হাঁসের ছানা

শরীফ সুমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৬
চিড়িয়াখানায় পরিযায়ী বালি হাঁসের ছানা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজশাহী: মা হাঁসটির গা ছাই রঙের। ঠোঁটগুলো কালো।

দেখতে একই ছানাগুলোও। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই মায়ের সঙ্গে পানিতে নেমে দাপাদাপি। পানি পেয়েই ছানাদের সে কি আনন্দ! টুপ টুপ শব্দ করে ডুব দিচ্ছে পানিতে। গা ভিজিয়েই মাথা ঝাড়ছে। বদ্ধ পানির বুকে আবার কেউ কেউ ভেসে বেড়াচ্ছে এখানে সেখানে। খেলা করতে গিয়ে কেউ কারও সঙ্গে যেনো পেরে উঠছে না।

রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় সাইব্রেরিয়ান প্রজাতির বালি হাঁস ও তাদের ছানাগুলোর এমন জলকেলি এভাবেই বাড়তি আনন্দ দিচ্ছে দর্শনার্থীদের।

সুদূর সাইব্রেরিয়া থেকে প্রতিবছরই বাংলাদেশে আসে বিভিন্ন প্রজাতির এসব পরিযায়ী পাখি। প্রচণ্ড শীতের হাত থেকে রেহাই পেতে দিনের পর দিন থেকে যায় এদেশেই। তবে তাদের স্থায়ী হওয়ার ঘটনা কম। তাই এরা পরিযায়ী (ভ্রমণকারী) পাখি বলেই পরিচিত। এদের মধ্যে একটি প্রজাতি বালি হাঁস।

সাইব্রেরিয়ান বালি হাঁস সাধারণত কখনই বদ্ধ পরিবেশে বাচ্চা ফোটায় না। তবে রাজশাহী চিড়িয়াখানায় এর ব্যতিক্রম ঘটেছে। এখানে একটি বালি হাঁস বাচ্চা ফুটিয়েছে পাঁচটি। বদ্ধ পরিবেশের মধ্যে বিদেশি বালি হাঁসের এমন বাচ্চা ফোটানোর ঘটনা দেশে এটাই প্রথম বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।

আর ছানাগুলো নিয়ে মা হাঁসটির সাবলীল জীবনযাপনই বলে দিচ্ছে স্বদেশ গড়ার চেষ্টা করছে বিদেশি এ পাখিরা। এখানকার আবহাওয়া তাদের মানিয়েই তুলেছে। পানিতে নেমে ছানাদের দূরন্তপনা আর তা দেখে উৎকণ্ঠায় প্যাঁকপ্যাঁক করে ডেকে মা হাঁসের তাদের কাছে আসতে বলা সবকিছুই প্রাকৃতিক।

প্রতি বছর সাইব্রেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, ইউরোপ, কাশ্মীর ও হিমালয়ের আশপাশের কিছু জায়গা থেকে বাংলাদেশে আসে এসব পাখি। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে কয়েক হাজার মাইল পাড়ি দেয় তারা। আবার নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর নিজভূমে ফিরে যায়। তবে থেকে যায় কেউ কেউ।

শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় ন্যাটিপাস করোনাডোলাস জাতের চার জোড়া বালি হাঁস রয়েছে গত ৮ থেকে ১০ বছর ধরে। এর মধ্যে একটি বালি হাঁস এবার পাঁচটি বাচ্চা ফুটিয়েছে। পাখির জন্য ঘেরা জায়গায় পানির মধ্যে বালি হাঁস তার পাঁচ বাচ্চা নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই হাঁসের বাচ্চাগুলোর পরিচর্যার ও খাবারের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে চিড়িয়ানাখানা কর্তৃপক্ষও।

রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি সার্জন ডা. ফরহাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, চিড়িয়াখানায় মোট ২২ প্রজাতির পাখি রয়েছে। সাইব্রেরিয়ান বালি হাঁস এদের মধ্যে একটি জাত। বদ্ধ পরিবেশে প্রাণী ও পাখির জন্য উপযুক্ত বসবাসের পরিবেশ দেওয়া গেলে তারা সেখানেও স্বাভাবিক বংশবিস্তার করতে পারে।

তবে সাইব্রেরিয়ান বালি হাঁসের বাচ্চা ফোটানোর ঘটনা বাংলাদেশে বিরল বলে দাবি করেন তিনি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, উপযোগী পরিবেশ পেলে যে কেনো প্রাণী যে কোনো স্থানেই বাচ্চা ফোটানো বা বংশবিস্তার করতে পারে। আর তাদের যত্ন নিলে স্বাভাবিক জীবনযাপনও করতে পারে। ভিন্ন আবহাওয়া বা পরিবেশ সেভাবে তাদের জীবনধারায় বিপর্যয় ঘটাবে না।

এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরিবেশে সাইব্রেরিয়ান বালি হাঁসের বাচ্চা ফোটানোর ঘটনা বিরল হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৬
এসএস/এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।