ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ফোকফেস্ট

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৬
বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ফোকফেস্ট

নদীমাতৃক এ দেশের হাওয়ায়, জলে-স্থলে ভেসে বেড়ায় ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, পল্লীগীতি, জারি, সারি গান; লালন, হাছন, জালাল, শাহ আবদুল করিমের বাউল-মরমি গানের বাণী ও সুর।

নদীমাতৃক এ দেশের হাওয়ায়, জলে-স্থলে ভেসে বেড়ায় ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, পল্লীগীতি, জারি, সারি গান; লালন, হাছন, জালাল, শাহ আবদুল করিমের বাউল-মরমি গানের বাণী ও সুর। তবে কংক্রিটের শহর ঢাকায় এই মেঠো সুরের গান শোনার সুযোগ সীমিত।

লোকসংগীতের অনুরাগীদের কাছে দারুণ খবর, বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে পর্দা উঠছে এ উৎসবের। এতে দেশের শিল্পীদের পাশাপাশি বিশ্বের নামজাদা লোকসংগীত শিল্পীরা গান গাইবেন।

আয়োজকরা জানান, পাঁচ দেশের শিল্পীরা গাইবেন তাদের শিকড়ের গান। সুরের আশ্রয়ে মেলে ধরবেন নিজ নিজ দেশের লোকায়ত সংস্কৃতির কথা। লোকসংগীত পরিবেশন করবেন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য ও স্পেনের শিল্পীরা। কণ্ঠ ও যন্ত্রসংগীত শিল্পী মিলিয়ে পরিবেশনায় অংশ নেবেন শতাধিক শিল্পী।

১২ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে এ উৎসব। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত শোনা যাবে পাঁচ দেশের প্রখ্যাত লোকগীতি শিল্পীদের গান। লোকসংগীতে নবজাগরণের প্রত্যাশায় আয়োজিত উৎসবে গতবারের মতো এবারও শ্রোতাদের মন রাঙাবেন বাংলার লোকগানের অহংকার মমতাজ। দেশের সংস্কৃতিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার এ আয়োজনে গাইবেন আরেক শ্রোতানন্দিত শিল্পী বারী সিদ্দিকী। লোকগীতির সঙ্গে ক্লাসিক্যালের সম্মিলন ঘটানো এ শিল্পীর চমৎকার কণ্ঠসংগীতের সঙ্গে শ্রোতাদের জন্য বাড়তি পাওনা হবে তার বংশীবাদন পরিবেশনা। শোনা যাবে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত শ্রোতাদের পরিচিত গায়েন ইসলাম উদ্দিনের গান। তার সূত্র ধরে ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী পালাগান শোনার সুযোগ পাবে শহুরে সংগীতানুরাগীরা। এ ছাড়া এই সংগীতাসরে দেশের শিল্পীদের মধ্যে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছেন বাউলসাধক শাহ আবদুল করিমের শিষ্য আব্দুর রহমান বাউল। পরিবেশনায় আরো শামিল হবেন বাউল শফি মণ্ডল, সুনীল কর্মকার, টুনটুন বাউল, লতিফ সরকার, ফরিদা ইয়াসমিন, বংশীবাদক জালালসহ অনেকে।

অতিথি শিল্পীদের মধ্যে এ উৎসবে বিশেষভাবে নজর কাড়বেন ভারতীয় লোকসংগীত শিল্পীরা। গত উৎসবের মতো এবারও অংশ নিচ্ছেন এক হাতে একতারা আর অন্য হাতে ডুবকি বাজিয়ে শ্রোতাকে উচ্ছ্বসিত করা শিল্পী পবন দাস বাউল। গাইবেন ভারতীয় লোকসংগীত ও সুফিসংগীতের মিশেলে নিজস্ব ধারা গড়া শিল্পী কৈলাশ খের। বিবি নুরান, জ্যোতি ও সুলতানা— এই তিন বোনের গানের দল নুরান সিস্টার্স। তাঁদের কণ্ঠেও গীত হবে নিজ মাটির গন্ধমাখা শিকড়ের গান। অংশ নেবে লোকগাননির্ভর আরেক ব্যান্ডদল ইন্ডিয়ান ওশেন। সেই সুবাদে শোনা যাবে সুফিসংগীত ও জ্যাজের সংমিশ্রণে ভারতের ফিউশন মিউজিক। এছাড়া দেশটির হয়ে অংশ নেবেন প্রসাদ, রাজু দাস বাউলসহ অনেকে।

ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবে একমাত্র পাকিস্তানি শিল্পী হিসেবে গাইবেন জাভেদ বশির। পরিবেশনায় অংশ নেবে স্পেনের মিউজিক্যাল গ্রুপ কারেন লুগো অ্যান্ড রিকার্ডো মোরো। উপস্থাপন করবে স্পেনের আন্দালুসিয়া অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যগীত। এটি ফ্লামেংকো নাচ হিসেবেও পরিচিত। ঐতিহ্যবাহী এ পরিবেশনায় গানের সঙ্গে থাকবে গিটারের বাদন, নাচ ও বিশেষ ধরনের করতালি। উৎসবে অংশ নেবে যুক্তরাজ্যের লোকজ ঘরানার ব্যান্ডদল সুশীলা রহমান অ্যান্ড স্যাম মিলস। ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুশীলা ও স্যাম মিলস এ দলের দুই শিল্পী। মূলত ভারত ও পাকিস্তানের ভক্তিমূলক ও সুফিবাদী ঐতিহ্যকে ধারণ করে পরিবেশনা সাজায় দলটি।

উৎসবে অংশ নিতে শ্রোতাদের নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হয়েছে ০৫ নভেম্বর। এখন চলছে আর্মি স্টেডিয়াম ঘিরে আয়োজনকে সফল করে তোলার প্রস্তুতি। উৎসব উপভোগ করতে হলে এবার শ্রোতাদের বেশ কিছু শর্ত অনুসরণ করতে হবে। ভেন্যুতে প্রবেশের সময় ই-টিকিট দেখাতে হবে। প্রত্যেককে ছবিসংবলিত যেকোনো ধরনের শনাক্তকরণ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। কোনো ধরনের ব্যাগ নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করা যাবে না। অনুষ্ঠানস্থল থেকে একবার বের হলে আর ভেতরে ঢোকা যাবে না। বাইরে থেকে আনা খাবার কিংবা পানীয় নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। খাবারের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে ফুড কোর্ট থাকবে। এ ছাড়া ভেন্যুতে বিনা মূল্যে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যাবে। ‘আগে আসলে আগে পাওয়া যাবে’ ভিত্তিতে আসন বণ্টন করা হবে। গাড়িং পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা থাকবে না। অনুষ্ঠান শেষে আর্মি স্টেডিয়াম থেকে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য বাসের ব্যবস্থা থাকবে।

আয়োজকরা আরো জানান, বৃহস্পতিবার উৎসবের প্রথম দিনে থাকছেন বাংলাদেশের ফোকসম্রাজ্ঞী হিসেবে খ্যাত মমতাজ। দেশের শিল্পীদের মধ্যে আরো থাকছেন আব্দুর রহমান বাউল ও টুনটুন বাউল। যুক্তরাজ্যের সিমন থ্যাকারের শুভ্রকান্তির সঙ্গে যুগলবন্দিতে থাকছেন বাংলাদেশের ফরিদা ইয়াসমিন ও ভারতের রাজু দাস বাউল। এ ছাড়া পাকিস্তানি শিল্পী জাভেদ বশিরের পরিবেশনাও থাকছে প্রথম দিনের আয়োজনে।

উৎসবের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার। এদিনের মূল আকর্ষণ হিসেবে থাকছেন ভারতের শিল্পী কৈলাশ খের। থাকছে ভারতের ফোক ব্যান্ডদল ইন্ডিয়ান ওশেন, কানাডার প্রসাদ, স্পেনের কারেন লুগো ও রিকার্ডো মরো। বাংলাদেশি শিল্পীদের মধ্যে থাকছেন জালাল ও লতিফ সরকার। আর থাকছে শফি মণ্ডল ও লাবিক কামাল গৌরবের যৌথ পরিবেশনা।

তৃতীয় ও শেষ দিনে বাংলাদেশের শিল্পীদের মধ্যে থাকছেন সুনীল কর্মকার, ইসলাম উদ্দিন কিস্সাকার, বারী সিদ্দিকী এবং তাপস অ্যান্ড ফ্রেন্ডস। ভারতের নুরেন সিস্টার্সের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের স্যাম মিলস ও সুশীলা রহমানের যৌথ পরিবেশনাও থাকছে। ভারতের পবন দাস বাউলের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হবে লোকসংগীতের এই মহা উৎসব।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৬
এসএনএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।