ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

কবরেও অক্ষত ৩ হাজার বছরের ভালোবাসা!

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৮
কবরেও অক্ষত ৩ হাজার বছরের ভালোবাসা! একে-অপরকে আঁকড়ে ধরে শুয়ে আছেন দম্পতি। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ভালোলাগা আর শ্রদ্ধাবোধ থেকেই মূলত প্রেম-ভালোবাসা। সেটা তরুণ-তরুণী বা স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রেও হতে পারে। আর এই ভালোবাসা কতো গভীর হতে পারে তা আবারও প্রমাণ করলেন তিন হাজার বছর আগের এক প্রেমিক দম্পতি। 

মরে-পচে কঙ্কালও প্রায় নিঃশেষের পথে। তারপরও দেখা গেলো তারা একে-অপরকে আঁকড়ে ধরেই শুয়ে আছেন!

পূর্ব ইউরোপের সবচেয়ে বড় দেশ ইউক্রেনের একটি কবরে পাওয়া গেছে ওই দম্পতির কঙ্কাল।

তিন হাজার বছর আগে তাদের এখানে সমাধি দেওয়া হয়েছিল বলে ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়।

পুরাতত্ত্ববিদরা বিশ্বাস করেন, ‘পরের জন্মে’ তার স্বামীকে সঙ্গী করার জন্য একটা সময় নারীরা স্বেচ্ছায় প্রাণ দিয়ে এক জায়গায় সমাধি চাইতেন। হয়তো এ জন্যই নারী তার স্বামীকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছেন আড়াইশ’ যুগ ধরে।

অটোপসি বিশেষজ্ঞরা ধারণা করে বলছেন, ওই নারী তার মৃত স্বামীকে জড়িয়ে ধরে রাখা অবস্থায় মারা গেছেন। এজন্যই তাদের এভাবে সমাধি করে রাখা হয়েছে। নয়তো এটা সম্ভব হতো না। আর এখনকার সময়েতো এটা এমনিতেই সম্ভব হতো না।
একে-অপরকে আঁকড়ে ধরে শুয়ে আছেন দম্পতি।  ছবি: সংগৃহীততারা এটাও ধারণা করছে যে, ওই সময়ে স্বামীরা মারা যাওয়ার পর স্ত্রীকে মরতে হতো এবং তার স্বামীর কাছে সমাধি করার প্রচলন ছিল। এছাড়া ওই কঙ্কালগুলো যেভাবে পাওয়া গেছে তা থেকে বলা যায়, সম্ভবত মৃত স্বামীকে জড়িয়ে ধরে বিষপানে ‘আত্মহত্যা’ করেছেন স্ত্রী।

ব্রোঞ্জ যুগের ওই দম্পতির কঙ্কাল আবিষ্কার করা হয়েছে, পশ্চিমা ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর টের্নোপিলের দক্ষিণে পেত্রিকিভ গ্রামের কাছে। যাকে প্রাগৈতিহাসিক যুগের সংস্কৃতিও বলা হচ্ছে এখন।

এ ‘প্রেমময় দম্পতির কবরস্থানের’ বিষয়ে গবেষণা করেছেন প্রফেসর মাইকোলা বাঁনদরিভস্কি। তিনি বলছেন, এটি একটি অনন্য সমাধি। যেখানে একটি পুরুষ আর একটি নারী শুয়ে আছেন। তাও আবার একে অপরকে আঁকড়ে ধরে। এমন সমাধি বিরল।

তিনি বলেন, উভয়ের মুখই একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছিল। তাদের কপাল স্পর্শ করছে এমন। নারী তার হাত দিয়ে পুরুষের একটি হাত শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন। আরেক হাত পুরুষের কাঁধে পড়েছিল।

কঙ্কালগুলো একজন আরেকজনের প্রতি মায়া বা ভালোবাসার জ্বলন্ত উদাহরণ বলেও উল্লেখ করেছেন ইউক্রেনের প্রত্নতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের রেসকিউ প্রত্নতাত্ত্বিক পরিষেবা ট্রান্সকারপাথিয়ান শাখার পরিচালক প্রফেসর ড. বাঁনদরিভস্কি।
একে-অপরকে আঁকড়ে ধরে শুয়ে আছেন দম্পতি।  ছবি: সংগৃহীতড. বাঁনদরিভস্কি আরও বলেন, এই কবর নিয়ে আমরা অনেক গবেষণা করেছি। আমাদের প্রত্নতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে ওই নারী স্বেচ্ছায় প্রাণ দিয়ে এমন করেছেন বলেই আমরা গবেষণায় পেয়েছি।

সম্ভবত, ওই নারী অন্য কোনো মানুষের সঙ্গে সংসার বা থাকতে চাননি। তাই তিনি স্বামীর সঙ্গে চলে যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছিলেন। আর এ জন্য তিনি সহজমাধ্যম হিসেবে বিষপান করে এমনভাবে আঁকড়ে ধরে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে যোগ করেন এ পুরাতত্ত্ববিদ।

বাঁনদরিভস্কি বলেন, স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর মরে যাওয়া, সে সময়ে নারীদের একটি বিশ্বাস ও পছন্দ ছিল। এছাড়া ব্রোঞ্জ যুগের নারীরা মানবজাতির ‘অনন্ত জীবন’ বিশ্বাস করতেন।

বিখ্যাত ইউক্রেনীয় এ পুরাতত্ত্ববিদ এও বলেন, এটি ইউরোপের জন্য খুবই অকর্ষণীয় ঘটনা। এ থেকে স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকার শেখার আছে অনেক। একে অপরের প্রতি কোমল অনুভূতি ও গভীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ এটি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৮
টিএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।