দুর্নীতি কী, কোথায় কোথায় দুর্নীতি হয়, কীভাবে মানুষ দুর্নীতির শিকার হয়? এমন অনেক প্রশ্নেরই উত্তর জানে না দেশের তরুণ প্রজন্ম। অথচ এ তরুণদের নেতৃত্বেই পরিচালিত হবে আগামীর বাংলাদেশ।
এসব জেলায় সচেতন নাগরিক কমিটি ও টিআইবির অনুপ্রেরণায় পরিচালিত হচ্ছে ইয়ুথ অ্যানগেইজমেন্ট অ্যন্ড সাপোর্ট (ইয়েস) গ্রুপ। সব গ্রুপে কাজ করছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৪০-৫০ জন করে শিক্ষার্থী। নিজেরা দুর্নীতিবিরোধী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্যকেও সচেতন করার লক্ষ্য নিয়ে ইয়েস গ্রুপের নানা কাজ চলে বছরজুড়ে। এসব কাজের মধ্যে রেল স্টেশনে টিকেট কালোবাজারি বন্ধে প্রচারাভিযান, দুর্নীতিবিরোধী পথনাটক, হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র স্থাপন, সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতিবিরোধী প্রচারাভিযান উল্লেখযোগ্য।
ইয়েস গ্রুপের জামালপুর ইউনিটের সদস্য মেহেদী মাহমুদ খান জানান, দুর্নীতিবিরোধী প্রচারাভিযানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে দৃশ্যত কোনো পরিবর্তন না এলেও তাদের মনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঘৃণা জন্ম নিচ্ছে। এর প্রমাণ পাওয়া যায় তাদের বিভিন্ন কাজে। একসময় আমাদের জামালপুর রেল স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে আন্তঃনগর ট্রেনের কোনো টিকিট পাওয়া যেত না, সব কালোবাজারিদের হাতে চলে যেত। কিন্তু আমরা যখন এর বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন শুরু করি তখন থেকে কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্যও অনেকাংশে কমে যেতে থাকে। কারণ আমরা টিকিট বিক্রেতাদের কাছে কালোবাজারি সম্পর্কে ধারণা এবং এ ধরনের কাজে কী ধরনের সাজা হতে পারে তা তুলে ধরেছি।
এমনভাবে দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্থানীয় সরকারসহ নানা ক্ষেত্রে সাধ্যমতো কাজ করছে ইয়েস গ্রুপ। দেশের ৪৫টি জেলায় ইয়েস গ্রুপ ছাড়াও সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ১৫টি ইয়েস গ্রুপ। ‘ঢাকা ইয়েস গ্রুপ’ নামে এসব গ্রুপের সদস্যরা সাধারণ মানুষের মাঝে দুর্নীতিবিরোধী মানোভাব তৈরি ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় এর সদস্যরা গত বছরের ১৭ থেকে ১৯ নভেম্বর ধানমন্ডির জিগাতলা থেকে ২৭ নম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক সচেতনতা কর্মসূচি পালন করেছে। কর্মসূচি চলাকালে ইয়েস সদস্যরা সাধারণ পথচারী ও চালকদের মাঝে ‘সচেতন হোন, ট্রাফিক আইন মেনে চলুন’ শীর্ষক লিফলেট বিতরণ ও ট্রাফিক পুলিশদের যানবাহন নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করেন। এ ধরনের কর্মসূচি ছাড়াও দেশের বিভিন্ন সচেতন নাগরিক কমিটি থেকে ঢাকায় আসা ইয়েস সদস্যদের নিয়ে গঠিত ‘ঢাকা ইয়েস গ্রুপ ১’-এর সদস্যরা প্রতি মাসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থাপন করেছে ভ্রাম্যমাণ তথ্য ও পরামর্শ ডেস্ক। এ ডেস্ক চলাকালে ইয়েস সদস্যরা হাসপাতালে আসা সাধারণ রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে। এই তথ্য গ্রহণের মাধ্যমে রোগীরা হাসপাতালের বিভিন্ন সেবা গ্রহণে কম দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন ঢাকা ইয়েস গ্রুপ ১-এর সমন্বয়কারী হাসিবুল হাসান আশিক। আশিক বলেন, ২০০৮ সাল থেকে আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ ধরনের কাজ করে আসছি। এ পর্যন্ত ২৮টি তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র স্থাপন করেছি এবং এর মাধ্যমে আমরা ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে তথ্য দিয়েছি।
এছাড়া বিনোদনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে দুর্নীতির প্রভাব তুলে ধরছে ইয়েস গ্রুপ। দেশের সব গ্রুপের আছে একটি করে গণনাট্য দল। তারা নিজেদের এলাকায় নিয়মিত দুর্নীতিবিরোধী পথনাটক প্রদর্শন করছে। এসব নাটকে উঠে আসছে তথ্যপ্রাপ্তির অভাবে মানুষ কিভাবে দুর্নীতির শিকার হচ্ছে।
গণনাট্য দলের নাটক প্রদর্শনী ছাড়াও টিআইবি বছরের বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আয়োজন করছে ‘দুর্নীতিবিরোধী কনসার্ট ও তরুণ সমাবেশ’। এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাসহ গুণী শিল্পীরা। এটি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে।
টিআইবির যোগাযোগ ব্যবস্থাপক আতিয়া আফরিন জানান, আজকে যারা তরুণ, তারাই আগামী দিনে দেশের নেতৃত্বে আসবে। তাদের মধ্যে যদি এখনই দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করা যায় তাহলে দেশ পরিচালনায় তা কাজে লাগবে।
বাংলাদেশের স্থানীয় সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১০
এসকেএইচ