ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

ভালোবাসার রাজকন্যা

আহমেদ জুয়েল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১০
ভালোবাসার রাজকন্যা

বুকের মধ্যে মানুষের জন্য ভালোবাসা থাকলে কোনো গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ থাকা যায় না। আর তাই গণ্ডিবদ্ধ থাকতে পারেননি মানবতার রাজকন্যা প্রিন্সেস ডায়নাও।

ব্রিটিশ রাজপ্রাসাদের হাজারো নিয়ম-কানুন আর প্রটোকলের বেড়াজাল ভেঙে তাই তিনি বেরিয়ে এসেছেন সাধারাণ মানুষের কাছে। ছুটে গেছেন আর্ত পীড়িত যুদ্ধ বিধ্বস্ত অসহায় মানুষের কাছে। এজন্য তাকে ব্রিটিশ রাজপ্রাসাদ থেকে, রানীর কাছ থেকে ও স্বামী চর্লসের কাছ থেকে হাজারো কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ছুটে গেছেন ল্যান্ডমাইন অপসারণের কাজে। ছুটে গেছেন আহত, অসুস্থ শিশুদের পাশে। তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো আমরা পেতাম আরেক মাদার তেরেসা। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন যুদ্ধ হানাহানি আর মাইনমুক্ত এক বিশ্বের। কিন্তু মর্মান্তিক মৃত্যু তার সে স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি। তারপরও তিনি পৃথিবীর কোটি মানুষের হৃদয়ে আর ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে আছেন সোনার বর্ণমালায়।

১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট। আজ থেকে ঠিক তের বছর আগে আজকের এই দিনে প্যারিসে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত প্রিন্সেস ডায়না। একই সঙ্গে নিহত হন তার প্রেমিক দোদি আল ফায়েদ। হাহাকার করে ওঠে পৃথিবীজুড়ে হাজারো ভক্তের বুক। কিন্তু এতদিন পেরিয়ে গেলেও তার মৃত্যু রহস্য অজানাই থেকে গেছে। আপাত দৃষ্টিতে তিনি দুর্ঘটনায় নিহত হলেও এর পেছনে কারণ খুঁজেছেন অনেকেই। অনেকেই বলেছেন তাকে হত্যা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে দোদির সঙ্গে তার সর্ম্পকটইি ব্রটিশি রাজ পরবিাররে কট্টর ভাবর্মূতরি প্রতি হুমকইি ছলিো। তাই রাজ পরিবার তা মেনে নিতে পারেনি। কেউ বলেছেন, তাদের গাড়ির চালক মাতাল অবস্থায় ছিলেন। দোদির বাবা বলেন, এটি একটি হত্যাকাণ্ড এবং এর পেছনে কাজ করেছে ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স এজেন্ট।

সম্প্রতি দোদি আল ফায়েদের বাবার ব্রিটিশ আইনজীবী মাইকেল ম্যানসফিল্ড দাবি করেছেন, অস্ত্র ব্যবসায়ীরাই ডায়নাকে হত্য করেছে। তিনি এর পেছনে যুক্তি দিয়েছেন, ডায়না তার আত্মজীবনীতে ব্রিটেনের অস্ত্র ব্যবসা ও ল্যান্ডমাইন উৎপাদনকারীদের সম্পর্কে অজানা তথ্য প্রকাশ করে দিতে চেয়েছিলেন। তাই তাকে হত্যা করা হয়।  

ডায়না এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন এটাই সত্য। কিন্তু মানবিক গুনাবলী আর ভালোবাসা দিয়ে যে ডায়না কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন, তিনি বেঁচে আছেন। থাকবেন হাজার বছর। আজ বিশ্বব্যাপী ডায়নার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ভক্তরা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন, তাকে স্মরণ করছেন।

প্রিন্সেস ডায়নার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে গ্র্যান্ড রাপিড আর্ট মিউজিয়ামে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। ফ্যাশন আলোকচিত্রী নিগেল বার্কার ও ডায়নার ভাই চালর্স স্পেনসার এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন। প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ডায়নার আলোকচিত্র এবং তার ব্যবহৃত ১৫০টি ব্যক্তিগত জিনিসপত্র। ১৯৮১ সালে প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে বিয়েতে পরা গাউনও রাখা হয়েছে এই প্রদর্শনীতে। এক কথায় ডায়নার পুরো জীবনকেই তুলে ধরা হয়েছে এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে। প্রদর্শনীটি আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। ডায়নার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ থেকে এই প্রদর্শনীর টিকিট বিক্রি শুরু হবে।

অন্যদিকে প্রিন্সেস ডায়নার পারিবকারিক বাড়ির পুননির্মাণ কাজ শুরু হয়ে গেছে। বাড়িটি এমনভাবে পুননির্মাণ করা হচ্ছে যাতে তা আগামী ৫০০ বছর টিকে থাকে। বাড়ির আগেকার নকশার কোনো পরিবর্তন না করেই এই নির্মাণ কাজ চালানো হচ্ছে। আর এই নির্মাণ বাবদ খরচ হচ্ছে ১০ মিলিয়ন পাউন্ড। ২০১১ সালের বসন্তের দিকে নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা হচ্ছে। এই বাড়িটি পর্যটকদের জন্য এক আকর্ষনীয় স্থান। কারণ এই বাড়িতেই বড় হয়েছেন প্রিন্সেস ডায়না। এই বাড়ি ঘিরেই রয়েছে তার হাজারও স্মৃতি। বাড়িটি দর্শকদরে জন্য খুলে দেওয়া হবে। এখনও বাড়ির ১৯টি কক্ষ খোলা আছে। যে কেউ ইচ্ছা করলেই সে বাড়ি ঘুরে দেখে আসতে পারেন।

লন্ডনে হ্যারডস ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে স্থাপিত ‘ইনোসেন্ট ভিকটিম’ নামে দোদি-ডায়ানার ভাস্কর্য নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মোহাম্মদ আল ফায়েদ। কারণ গত তিন মাস আগে দেড় শ’ কোটি পাউন্ডের বিনিময়ে কাতারের এক ব্যবসায়ীর কাছে তিনি ওই স্টোরটি বিক্রি করেছেন। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ দোদি-ডায়নার ওই ভাস্কর্য দেখতে আসেন। কিন্তু দোকানের মালিক ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে মোহাম্মদ আল ফায়েদ ভাস্কর্যটি না সরানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন বলে জানা গেছে।

দোদি-ডায়ানার সম্পর্কের স্মৃতিকে চিরস্থায়ী করে রাখতে দোদির বাবা মোহাম্মদ আল ফায়েদ লন্ডনে তার ডিপার্টমেন্টাল স্টোর হ্যারডসে তৈরি করেছিলেন দুটি স্মৃতিস্থাপনা। প্রথম স্থাপনাটি উম্মুক্ত করা হয় ১৯৯৮ সালের ১২ এপ্রিল। এ স্থাপনার ছোট্ট কাচের পিরামিডের মাঝখানে রাখা আছে শেষ ডিনারে ব্যবহার করা ডায়ানার ঠোঁটের লিপস্টিক মাখা একটি ওয়াইন গ্লাস। আর পিরামিডের মাথায় বিশেষ দুটি পৃথক বৃত্তের মাঝখানে রয়েছে দোদি-ডায়ানার ছবি। ওপরে ডানা মেলা একটি পাখি। দ্বিতীয় স্মৃতিস্থাপনাটি ডায়ানা-দোদির ৮ ফুট উচ্চতার ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য। ভাস্কর্যটিতে দেখা যায় সমুদ্র সৈকতে তারা পরস্পরের হাত ধরে নাচের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন। আর তাদের ওপরে তোলা হাতে পাখা মেলে বসে আছে একটি অ্যালবাট্রস পাখি। ‘ইনোসেন্ট ভিকটিম’ নামের এ স্থাপনা উম্মুক্ত করা হয় ২০০৫ সালে। স্মৃতিস্থাপনাটির ডিজাইনার মোহাম্মদ আল ফায়েদের বন্ধু ৮০ বছর বয়সী স্থপতি বিল মিচেল।

বাংলাদেশ সময়: আগস্ট ৩১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।