ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

ফিচার

এক জামদানি বুনতে দুই বছর, মজুরি ১০ লাখ

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৯
এক জামদানি বুনতে দুই বছর, মজুরি ১০ লাখ জামদানি প্রদর্শনীতে শাড়ি দেখছেন দর্শনার্থী/ছবি- জি এম মুজিবুর

ঢাকা: কথায় আছে- যত গুড়, তত মিঠা। এই প্রবাদ প্রবচন অবধারিত সত্য জামদানি বয়নশিল্পে। যত সময়, তত নিখুঁত। যত নিখুঁত তত মিহি। আর যেমন সুন্দর দেখতে, তেমন আরাম পরতে।

তবে যেখানে সময়, শ্রম আর শিল্পের মর্যাদার প্রশ্ন আসে; সেখানে দরটাও ঊর্ধ্বমুখী। আর সবকিছুর পরে যখন বাজারের প্রশ্ন আসে, তখনই নির্ধারণ হয় শিল্পের ভূত-ভবিষ্যত।

জামদানি শুধু একটি পণ্যই নয়। এটি একটি স্বতন্ত্র শিল্পগুণ সমৃদ্ধ ঐহিত্য। তাই এ পণ্যের যে বাজার দর, তাতে সাধারণ ক্রেতার সাধ্যের মধ্যেও এটা নয়। অনেকটা উচ্চ মর্যাদার অধিকারী যাকে বলে।

বাজারে জামদানির নামে নিন্মবিত্ত, নিন্ম মধ্যবিত্ত শ্রেণী যা কেনেন, আসলে সেগুলোর জামদানির শিল্প ধারণ করে না। কেননা, মোটামুটি শিল্পমানের এক একটি জামদানির দাম পড়ে লাখ টাকার ওপরে। যে কারণে ঐহিত্যের এ শাড়ি এখন প্রায় নেই বললেই চলে। যেগুলো তৈরি হচ্ছে, চলে যাচ্ছে বিদেশে, নয়তো দেশীয় উচ্চবিত্তের আলমিরাতেই।

বংশ পরম্পরায় টিকে থাকা নারায়ণগঞ্জের ওস্তাদ কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে এসবই জানা গেছে। তারা বলছেন, শিল্পমানের একটা জামদানি করতে অন্তত ছয় মাস সময় লাগে। এতে মজুরিই পড়ে ৭৫ হাজার টাকার মত।

দু'জন মিলে একটি শাড়ি তুলতে হয়। সুতা আসে দেশের বাইরে থেকে। আর প্রাকৃতিক রঙ হিসেবে আমলকি, হরিতকি, বয়রাসহ বিভিন্ন গাছ-গাছড়াই ব্যবহার করেন তারা। সব প্রস্তুত করে নিয়ে বসে যান নিজের তাঁতে।  পরিবারসহ ওস্তাদ কারিগর মো. সিদ্দিকসোনারগাঁওয়ের দরগাবাড়ী গ্রামের তাঁতী মো. সিদ্দিক। বড় ভাইয়ের কাছ থেকে বয়নের কাজ শিখে ১৮ বছর ধরে আছেন এ পেশায়। ২০০৭ সালে মাকসুদা আক্তারকে বিয়ে করে গড়েছেন নিজের সাতটি তাঁত। তাতে কাজ করেন ১৪ জন।

ওস্তাদ কারিগর হিসেবে এরইমধ্যে তার সুনাম হয়েছে। মাকসুদাকে এখন সহকারী কারিগর হিসেবেই পাশে পান।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, জামদানিতে ভালোর শেষ নেই। নকশা অনুযায়ী সময় ব্যয় করতে হয়। যেসব নকশায় কাজ কম, সেগুলো সময় কম লাগে। আবার নকশায় কাজ বেশি বা জটিল হলে সময় বেশি লাগে। যারা অর্ডার নিয়ে আসেন, তারাই নকশা আনেন। অনেকেই আদি জামদানির ছবি এনে সেভাবে করতে বলেন। এগুলোর জন্য দুই বছর সময় লাগে। মজুরি নেওয়া হয় ১০ লাখ টাকা। বাজার তাহলে কত হতো পারে, সেটা তারও ধারণার বাইরে।

সিদ্দিক বলেন, ছয় মাসের কাজে তিন লাখ টাকার মতো মজুরি নিই। এক মাসের জন্য ৭০ হাজার টাকাও মজুরি নিই। কেননা, এতে নকশা কম হলেও মিহি করার জন্য, নিখুঁত করার জন্য সময়টা লেগে যায়।

সিদ্দিকের তৈরি কাজ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যায়। তার ভাষায় বড়লোকরাও কেনেন। তবে এসব নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই।

অর্ডার পেলে সেটা তুলে আনাই তার ধর্ম বলে মনে করেন এই ওস্তাদ কারিগর। জানান, এ পেশায় সব মিলিয়ে যে রোজগার  হয়, দুই ছেলে নিয়ে এতে সুখেই কাটছে তার সংসার।

জামদানিকে আরও মিহি করার এবং হারিয়ে যাওয়া মসলিন তৈরির দিকেও মনযোগ সিদ্দিকের রয়েছে। বলেন-গবেষণা হচ্ছে। দেখা যাক কী হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৯
ইইউডি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।