ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

ওরা লাল-সবুজের ফেরিওয়ালা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯
ওরা লাল-সবুজের ফেরিওয়ালা

ঢাকা: সবুজ জমিনে রক্তলাল সূর্য, এই পতাকা বাংলাদেশের। ১৬ কোটি মানুষের আবেগ জড়িয়ে আছে এই পতাকায়। তার সঙ্গে জড়ানো ডিসেম্বরও। এটি বাঙালির মুক্তির মাস, বিজয়ের মাস। আর তাই ডিসেম্বর এলেই লাল-সবুজ পতাকা হাতে দেখা মেলে অসংখ্য শিশু-কিশোর পতাকা বিক্রেতার।

বিজয়ের আনন্দ ক্ষণে ক্ষণে মনে করিয়ে দিতে জাতীয় পতাকা ছড়িয়ে দেওয়াটাই যেন কাজ এসব লাল-সবুজের ফেরিওয়ালার। এদেরই একজন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার হেমায়েত উদ্দিন।

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় কথা হয় ২০ বছরের টগবগে এ তরুণের সঙ্গে।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বিজয়ের মাসে পতাকা বিক্রি করে যেমন আনন্দ পাই, তেমনি উপার্জনও হয় ভালো। রাস্তায় কেউ লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে গেলেই গর্বে বুকটা ভরে যায়।  

ডিসেম্বর আসলেই পতাকা বেচতে বের হন। হেমায়েত জানান, ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও ডিসেম্বর মাস এলেই পতাকা হাতে বেরিয়ে পড়েন নগরীর পথে-প্রান্তরে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ঘুরে পতাকা বিক্রি করেন। তার কাছে ২০, ৩০, ৫০, ১০০, ২০০, ৩০০, ৪০০ ও ৫০০ টাকা দামের পতাকা রয়েছে। তবে ছোট পতাকাই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়।  

প্রতিদিন প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ পতাকা বিক্রি হয় জানিয়ে এ তরুণ বলেন, মোহাম্মদপুর থেকে পতাকা কিনে বিক্রি করি। প্রতিদিন যা বিক্রি হয়, তা থেকে খরচ বাদে ৫০০ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়।  

হেমায়েতের মতোই আরেক তরুণ সানজিদুল হক। রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় পতাকা কাঁধে নিয়ে ফেরি করতে দেখা যায় তাকে।  

সানজিদুল বাংলানিউজকে বলেন, ডিসেম্বর মাসে আমরা পাকিস্তানিদের হারিয়ে স্বাধীন হয়েছি। এজন্য এই মাস আসলেই মানুষের মনে অন্যরকম এক আবেগ কাজ করে। তাই ডিসেম্বর শুরু হলেই পতাকা বিক্রি করতে আসি।  

তিনি বলেন, পতাকা বিক্রি করতে ভালোই লাগে। সব ধরনের মানুষই পতাকা কেনেন, আয়ও খারাপ না। তবে ডিসেম্বর শেষ হতেই আবার গ্রামে ফিরে যান পাবনার ছেলে সানজিদুল হক।  

মাসজুড়ে শহরের অলিগলিতে দেখা মেলে পতাকা বিক্রেতাদের। রাজধানীর বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকার সিগন্যালে গাড়ি থামলেই পতাকা নিয়ে দৌড়ে যায় ১০ বছরের শিশু জাফরিন। গাড়ির যাত্রীদের পতাকা কেনার অনুরোধ জানায় হাসিমুখে।  

জাফরিন জানায়, অনেকেই পতাকা কেনেন, আবার কেউ কেউ তাড়িয়েও দেন। অনেকসময় গাড়ির চালকরাও পতাকা কেনেন।  

জাফরিনের কাছ থেকে পতাকা কিনেছেন আবুল খায়ের। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বিজয়ের মাস আসলেই পতাকা কিনে গাড়ির সামনে রাখি। এতে বেশ ভালো লাগে। তাছাড়া এ ধরনের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কাছ থেকে পতাকা কিনলে তাদেরও কিছুটা লাভ হয়।  

প্রাইভেটকার চালক সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, লাল-সবুজের পতাকা সারাবিশ্বে বাংলাদেশের পরিচয় বহন করে। সেই অনুভূতি থেকেই বিজয়ের মাস আসলেই পতাকা কিনে গাড়িতে লাগিয়ে রাখি।  

শুধু ঢাকাই নয়, ডিসেম্বর আসলে গ্রাম থেকে শহরে চলে আসেন অসংখ্য তরুণ-যুবক। বিক্রি করেন বাঙালির আবেগমাখা পতাকা। আবার মাস শেষ হতেই ফিরে যান আপন গ্রামে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯
টিএম/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।