হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, রোগী ও এলাকার বহু বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অল্প খরচে অত্যাধুনিক চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থা রয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুর থানাধীন তেঁতুইবাড়ি এলাকায় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালে। এখানে প্রতিদিন শতশত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
রোগীরা বলছেন, ঢাকার বাইরে এমন বড় হাসপাতাল হওয়ায় তারা সুচিকিৎসা পাচ্ছেন। ভালো চিকিৎসার জন্য এখন দূরে যেতে হচ্ছে না। বড় বড় চিকিৎসকদের পাচ্ছেন এ হাসপাতালেই। সব ধরনের অপারেশনও হচ্ছে এখানে।
জানা যায়, খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এ হাসপাতালে সেবা দেন। ২৫০ শয্যার শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল যাত্রা শুরু করে ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর। এই হাসপাতালে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ান চিকিৎসকরা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। এখানে রয়েছে প্রসূতি স্ত্রীরোগ, শিশু রোগ, নাক-কান-গলা, অস্তি, হাড় ও মেডিসিন বিভাগ। এ হাসপাতালে ৩০ শতাংশ রোগী যারা সুবিধাবঞ্চিত তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত চিকিৎসা সেবা দিতে আছে বিশেষ ব্যবস্থা। এছাড়া প্রতিবন্ধী ও নির্যাতিতা নারীদের সেবায় অগ্রধিকার দেওয়া হয়। দরিদ্র রোগীরা সেবা নিতে পারে এক তৃতীয়াংশ খরচে। এ হাসপাতালে রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির সব চিকিৎসা সরঞ্জাম। সব সময় সেবা দিতে রয়েছে দক্ষ চিকিৎসক, নার্স ও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টরা। প্রয়োজনে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে পারেন রোগীরা।
জানা গেছে, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার টান সূত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা আশা আক্তার আঁখি (১৯) নামে এক কিশোরী ২০১৮ সালে পরিবারের সঙ্গে রাগারাগি করে হারপিক খেয়ে ফেলে। পরে তার খাদ্যনালী নষ্ট হয়ে যায়। এসময় তার পরিবার তাকে চিকিৎসা করাতে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যান। কোথাও তার অপারেশন করাতে আস্থা পাচ্ছিলেন না। এক পর্যায়ে আশা আক্তার আঁখিকে নিয়ে তার পরিবার শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালে যান। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর তার খাদ্যনালীতে অপারেশন করানো হয়। ওই অপারেশনে তার খাদ্যনালী কেটে ফেলে দেওয়া হয় এবং তার নিজের কোলন থেকে পুনরায় খাদ্যনালী স্থাপন করা হয়। আশা আক্তার আঁখির এই অপারেশন করেন ডাক্তার সার্জন রাজীব হাসান ও সার্জন কাওছার আলম। বর্তমানে তিনি সুস্থ এবং স্বাভাবিক অবস্থায় আছেন।
আশা আক্তার আঁখি (১৯) বাংলানিউজকে বলেন, অপারেশনের পর আমি বেঁচে আছি তা বিশ্বাস করতে পারিনি। অপারেশন হয়েছে এক বছরের বেশি সময় হয়। বর্তমানে অনেক ভালো এবং সুস্থ আছি। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং দক্ষ চিকিৎসকদের কারণে নতুন জীবন পেয়েছি। এখানে সব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রয়েছে। তাদের পরামর্শ নিতে মাঝেমধ্যে হাসপাতালে যেতে হয়।
ফাতেমা বেগম (৪৩) নামে এক রোগী জানান, তার মাথায় সমস্যা। কোনোকিছু বেশি সময় তার মনে থাকে না। এজন্য তিনি ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার হাসপাতালে গিয়েছেন। পরে তার কোনো উন্নতি না হওয়ায় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালে আসেন।
রুবেল হোসেন (২৩) নামে এক রোগী বলেন, পেটে ব্যাথার কারণে ঢাকার আশুলিয়া থেকে এ হাসপাতালে এসেছি ডাক্তার দেখাতে। শুনেছি এখানে চিকিৎসা সেবা অনেক ভালো। দেশের সব বড় বড় ডাক্তাররা এখানে আসেন চিকিৎসা সেবা দিতে। এই প্রথম এ হাসপাতালে এসেছি। হাসপাতালটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। এখানে নিয়ম অনুযায়ী সব হচ্ছে। এখানকার পরিবেশ অনেক ভালো।
শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালের চিকিৎসক সার্জন রাজীব হাসান জানান, এ হাসপাতালে খাদ্যনালী, পাকস্থলী, কোলন, লিভার ও ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের অপারেশন করানো হয়ে থাকে। আগের চেয়ে এ হাসপাতালে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্তসহ বিভিন্ন রোগীদের সংখ্যা বাড়ছে। ১৩ নভেম্বরও দুইজন ক্যান্সার রোগীর অপারেশন করানো হয়েছে এখানে। এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে শতশত রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৯
আরএস/এইচএডি/