চ্যাম্পিয়ন লিগের শেষ ষোলোর হাইভোল্টেজ ম্যাচে গতকাল (২১ ফেব্রুয়ারি) ঘরের মাঠে লিভারপুল মুখোমুখি হয়েছিল স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদের। এদিন ক্রুস, চুয়ামেনিকে ছাড়াই শুরুর একাদশ সাজাতে হয়েছিল রিয়াল বস কার্লো আনচেলত্তিকে।
শুরুতেই রিয়াল মাদ্রিদ পিছিয়ে পড়েছিলো ২-০ গোলে। মাত্র ১৪ মিনিটে ২-০ গোলে এগিয়ে গেলে ম্যাচের ফল কী হতে পারে, অগ্রিম সেটা ভেবে লিভারপুল দর্শকরা সুখ স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলো। অন্যদিকে, ১৪ মিনিটের মাথায় ২ গোল হজম করে যেন নড়েচড়ে উঠলো রিয়াল মাদ্রিদ। আড়মোড়া ভেঙে যখন তারা প্রতিপক্ষের ওপর প্রবল বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লো, তখন লিভারপুল উড়ে গেলো খড়কুটোর মতো। ৯০ মিনিটের খেলা শেষে ফল, লিভারপুল ২:৫ রিয়াল মাদ্রিদ। অ্যানফিল্ডেই লিভারপুলকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে বলতে গেলে এক পা দিয়ে রাখলো রিয়াল মাদ্রিদ। জোড়া গোল করেছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র এবং করিম বেনজেমা। এদার মিলিতাও করেছেন রিয়ালের হয়ে বাকি গোলটি।
শুরু থেকেই মাঠে ছিল রেডসদের আধিপত্য। চতুর্থ মিনিটে নুনেজের দারুণ ফ্লিকে এগিয়ে যায় লিভারপুল। রিয়াল গোলরক্ষকের থিবো কর্তোয়ার ভুলের সুযোগে ১৪তম মিনিটে ব্যবধান দিগুণ করেন মোহাম্মদ সালাহ। অনেকেই ম্যাচের ফলাফল তখনই দেখে ফেলেছিলেন। লিভারপুলের জয়টা কত বড় ব্যবধানে আসে সেটিই দেখার অপেক্ষা সবার।
তবে এরপর যা হয়েছে তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। লিভারপুলের জন্য দুঃস্বপ্নের, রিয়ালের জন্য রূপকথার। শুরুতে খাপছাড়া লস ব্লাংকোসরা দ্রুতই নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয়। গোল শোধে চালাতে থাকে একের পর এক আক্রমণ।
২১তম মিনিটে দারুণ এক গোলে রিয়ালের স্মরণীয় প্রত্যাবর্তনের গল্পটা শুরু করেন ভিনিসিয়ুস। ম্যাচে কোর্তোয়ার মত এরপর লিভারপুলের গোলরক্ষক আলিসনও দৃষ্টিকটু এক ভুল করে বসলেন। সেটির ফায়দা নিয়ে ৩৬তম মিনিটে স্কোরলাইন ২-২ করে ফেলেন ভিনি। চ্যাম্পিয়নস লীগে ৫৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সে অ্যানফিল্ডে সফরকারী দলের খেলোয়াড় হিসেবে জোড়া গোল করলেন ২২ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান।
২-২ ব্যবধানে প্রথমার্ধ শেষ করা রিয়াল বিরতির পর ছিল অপ্রতিরোধ্য। খোলসবন্দী না হয়ে আরও গোলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে তারা। ৪৭তম লুকা মদ্রিচের ফ্রি-কিকে হেডে বল জালে পাঠিয়ে দলকে এগিয়ে দেন মিলিতাও। এরপর দৃশ্যপটে রিয়ালের সবচেয়ে বড় তারকা করিম বেনজেমা। ৫৫ ও ৬৭ মিনিটে তার দারুণ দুইটি গোলে ৫-২ এ পরিণত হয় স্কোরকার্ড। বড় জয় নিশ্চিতের পর রিয়াল মাঠে কোনরকম ঢিলেমি দেখায়নি। রক্ষণ সামলে শেষ পর্যন্ত তারা তিন গোলের লিড ধরে রেখেই মাঠ ছাড়ে।
টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় ঠেকাতে ফিরতি লেগে নাটকীয় কিছুই করে দেখাতে হবে লিভারপুলকে। আগামী ১৫ মার্চ রিয়ালের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে হবে পরের ম্যাচটি। দিনের অন্য ম্যাচে আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের মাঠে ২-০ গোলে জিতেছে সেরি আয় পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা নাপোলি।
অন্যদিকে, দিয়েগো ম্যারাডোনার পায়ের জাদুতে ১৯৮৮-১৮৯ সালে সর্বশেষ উয়েফা কাপ জিতেছিলো ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলি। এরপর ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে উয়েফা কাপের নাম বদলে হয়ে যায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। আগে-পরে মিলিয়ে টানা ৩৪টি বছর আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলো পার হতে পারেনি ম্যারাডোনার সেই ক্লাব, নাপোলি। এবার ৩৪ বছর পর এসে কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বারপ্রান্তে ইতালিয়ান ক্লাবটি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোর ম্যাচে মঙ্গলবার রাতে জার্মান ক্লাব আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টকে ২-০ গোলে হারিয়েছে নাপোলি।
বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩
এআর