ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফুটবল

নতুন কুঁড়ি ফুটবল একাডেমি থেকে মোহামেডানে হাফিজুর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, স্পোর্টস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২৩
নতুন কুঁড়ি ফুটবল একাডেমি থেকে মোহামেডানে হাফিজুর

নেত্রকোনা জেলার ফুটবল ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। দেশ স্বাধীনের আগ থেকেই এই জেলার ফুটবলাররা সকলের নিকট পরিচিত-সমাদৃত।

স্বাধীনতার পরও সেই ধারাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন জেলার ফুটবলাররা। ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর প্রিমিয়ার লিগ থেকে শুরু করে জাতীয় দল; সবখানে নেত্রকোনার ফুটবলাররা একচ্ছত্র আধিপত্য অতীতে দেখিয়েছেন, বর্তমানেও তা বহাল রেখেছেন। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ২০০৩ সাফ জয়ী আরিফ খান জয় এই জেলার গর্ব।

নাজমুল হাফিজ জামরুল, তায়েব আহম্মদ, অমিত খান শুভ্র কিংবা তার সহোদর জনি, তাপস, রবিন, সোহাগ, আউয়ালরাও নেত্রকোনার ফুটবলে বড় বড় সব নাম। হালের পাপন সিং, ফরহাদ মনা, আরিফরাও বেশ দাপটের সঙ্গে খেলছেন।  

এত এত নামের সঙ্গে নতুন এক নাম যুক্ত হতে চলেছে- হাফিজুর রহমান বাবু। নেত্রকোনা জেলা সদরের দক্ষিণ বিশিউড়া এলাকার সন্তান তিনি। আগামী মৌসুমে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে দেশের ঐতিহ্যবাহী এবং জনপ্রিয় ক্লাব মোহামেডান স্পোর্টিংয়ের জার্সিতে দেখা যাবে তাকে। তিন বছরের জন্য সাদা-কালোদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন হাফিজ। বাবু নামেই যিনি এলাকায় পরিচিত।


কুঁড়ি থেকে আজ ফুলে পরিণত হয়েছেন ফুটবলার হাফিজুর। কিন্তু তার এই ফুলে পরিণত হওয়ার পথটা অত সহজ ছিল না। কণ্টকাকীর্ণ এক কঠিন বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়েই আজ এ পর্যায়ে এসেছেন। হাফিজুরকে আজকের অবস্থানে নিয়ে আসতে যার অবদান সবচেয়ে বেশি তিনিও নেত্রকোনার সন্তান বাংলাদেশ পুলিশ টিমের সাবেক ফুটবলার শেখ সারোয়ার জনি।  

এক সময়ের সেন্টার ব্যাক শেখ সারোয়ার জনির হাতে গড়া তোলা নতুন কুঁড়ি ফুটবল একাডেমি থেকেই আজ মোহামেডানের মতো দেশসেরা ক্লাবে জায়গা করে নিয়েছেন হাফিজুর। মাত্র ৮ জন ফুটবলার নিয়ে নেত্রকোনার দক্ষিণ বিশিউড়াতে নতুন কুঁড়ির ফুটবল একাডেমির যাত্রা শুরু করেন জনি। প্রায় এক যুগ পর সেখানে এখন ৫০ ছুঁই ছুঁই ফুটবলার।  

যারা হাফিজুরের মতো স্বপ্ন দেখছেন একদিন ঢাকার বড় বড় সব ক্লাবের জার্সিতে খেলার। নতুন কুঁড়ির খেলোয়াড়দের মাঝে স্বপ্নের বীজ বপনের কাজ দক্ষ ও সুনিপুন হাতে বছরের পর বছর ধরে করে চলেছেন একজন নিঃস্বার্থ, ফুটবলপ্রেমী, সচেতন যুবক শেখ সারোয়ার জনি। তিনিই একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা, অর্থলগ্নিকারী এবং একই সঙ্গে কোচের ভূমিকা অবতীর্ণ।

শেখ সারোয়ার জনি না থাকলে হাফিজুরের ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যেত। জনির কিনে দেয়া জার্সি-বুট পরেই ফুটবল পা’য়ে ছুটে চলার তার। হাফিজুরের বড় ভাই লিমন প্রথমে নতুন কুঁড়ি ফুটবল একাডেমিতে অনুশীলন শুরু করেন।  

লিমনের অনুরোধে তারই ছোট ভাই হাফিজুরকেও একাডেমিতে অনুশীলনের সুযোগ করে দেন শেখ সারোয়ার জনি। ২০১৩ সালের কথা। ছোট্ট হাফিজুরের দৌড়ে গতি না থাকলেও বল কন্ট্রোলিং, পায়ে দারুণ কাজ ছিল। সেটাই আকৃষ্ট করে কোচ জনিকে। স্কুলের ফাঁকে একাডেমিতে এসে নিয়মিত অনুশীলন শুরু করেন হাফিজুর। খুবই পরিশ্রমী একজন ছেলে তরুণ রাইটব্যাক হাফিজুর। যখন একাডেমির ছাত্র ছিলেন তখন নির্দিষ্ট সময়ের বাইরেও অনুশীলনে ঘাম ঝরাতেন। কোচের প্রতিটি আদেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতেন। নিয়ম-শৃঙ্খলা, সময়ানুবর্তিতাই আজ হাফিজুরকে নতুন কুঁড়ি ফুটবল একাডেমি থেকে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব মোহামেডানে নিয়ে এসেছে।  

হাফিজুর যে একজন মেধাবী ফুটবলার তা তিনি ২০২২-২৩ মৌসুমে অনুষ্ঠিত  বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে প্রমাণ করেছেন। ওয়ারী ক্লাবের হয়ে খেলে মোট ৬ গোল করেছেন। এর মধ্যে স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের ঘটনাও রয়েছে। হাফিজুর একজন রাইটব্যাক। কিন্তু ওয়ারীতে ফরোয়ার্ড সংকটে নিজের পছন্দের জায়গা পরিবর্তন করে খেলেছেন স্ট্রাইকার পজিশনে। সেখানেও সফল হয়েছেন। স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘ ছাড়া ওয়ান্ডারার্স, উত্তরা ক্লাব এবং লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবের বিপক্ষে একটি করে গোল করেন হাফিজুর।  

নতুন কুঁড়ি ফুটবল একাডেমিতে ক্যারিয়ার শুরু করা হাফিজুর ঢাকার ফুটবলে শুরুটা পাইওনিয়ার লিগ দিয়ে ২০১৬ সালে। খেলেছেন টঙ্গী খেলাঘরের হয়ে। এরপর ২০১৮-১৯ সালে তৃতীয় বিভাগের দল উত্তরা ফ্রেন্ডস ক্লাব, ২০২২ সালে প্রথম বিভাগ ফুটবলে বাড্ডা জাগরনীর জার্সিতে খেলে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে যোগ দেন ওয়ারীতে। বাড্ডা জাগরনীতে খেলার সময় তখনকার কোচ জাতীয় দলের সাবেক তারকা গোলরক্ষক সাঈদ হাছান কাননের নজরে পড়েন। ঢাকার ফুটবলে টিকে থাকার ক্ষেত্রে কাননের অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন হাফিজুর।  

কৃষক পরিবারের সন্তান হাফিজুর। বাবা এবং একমাত্র বড় ভাই কৃষি কাজ করে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করেন। মা গৃহিনী। ফুটবল খেলে হাফিজুরও টুকটাক অর্থ আয় করছেন। হাফিজুরের এখন একটাই স্বপ্ন নিজ জেলা নেত্রকোনা, ইউনিয়ন বিশিউড়া, প্রিয় কোচ শেখ সারোয়ার জনির নাম সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া। মোহামেডানে ভালো খেলে ক্লাবকে শিরোপা এনে দেয়া এবং জাতীয় দলে নিজের জন্য জায়গা তৈরি করা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২৩
এআর/এএইচএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।