দেখতে দেখতে ৮টি বছর পেরিয়ে গেছে। শিরোপা খরা কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছে না দেশের শীর্ষসারির ফুটবল দল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব।
খেলোয়াড়ি জীবনে কোনো প্রতিযোগিতায় হারেননি তারেক। যা বলেছেন মাঠে সেটা করে দেখিয়েছেন। শেখ জামালকে শিরোপা এনে দেয়ার যে কথাটি বলেছেন এর পেছনের গল্পটা শুনুন তার মুখেই, ‘শেখ জামাল সব সময়ই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য মাঠে নামে, দলও সেভাবেই গঠন করে। গত মৌসুমেও করেছিল। কিন্তু নানান কারণে পরিকল্পনা মাঠে বাস্তবায়িত হয়নি। তবে আগামী ২০২৩-২৪ মৌসুমে অন্য এক শেখ জামালকে আপনারা দেখতে পাবেন। যদিও দলবদলের আনুষ্ঠানিকতা এখনো শুরু হয়নি। তবে আমি যেহেতু নতুন মৌসুমের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ক্লাবটিতে নাম লিখিয়েছি, সেহেতু আমি বলতে পারি শেখ জামাল এবার তরুণদের পাখির চোখ করেছে। তরুণরাই পুরনো সেই শেখ জামালকে আবারো দর্শকদের মাঝে ফিরিয়ে আনবে। ’
খুব বেশিদিন হয়নি দেশের সর্বোচ্চ ফুটবল আসর প্রিমিয়ার লিগে পথচলা শুরু করেছেন তারেক। ২০২০-২১ মৌসুমে বসুন্ধরা কিংস, ২০২১-২২ মৌসুমে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র হয়ে গত ২০২২-২৩ মৌসুমটা খেলেছেন শেখ জামালে। বসুন্ধরা কিংস ছিল তারেকের প্রাথমিক বিদ্যাপীঠ। যদিও ক্লাবটিতে সেভাবে খেলার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তবে সেখানে থেকেই নিজেকে পরিণত করেছেন। যা পরের বছর মুক্তিযোদ্ধায় কাজে লেগেছে তার। মুক্তিযোদ্ধার জার্সিতে এখন পর্যন্ত ক্যারিয়ারের সেরাটা খেলে এরপর চলে আসেন শেখ জামালে। বড় ক্লাবে এসে আরো বড় পরীক্ষার মুখে পড়েন। অনেক সিনিয়র-পরীক্ষিত ফুটবলারদের সঙ্গে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জও নিতে হয় তাকে। সেই পরীক্ষাতেও ফেল করেননি মেধাবী এ ফুটবলার। সেন্টারব্যাক পজিশনে গত বছর শেখ জামালের জার্সিতে ১৩-১৪টা ম্যাচ খেলে নিজেকে প্রমাণ করেছেন যে, তারেক হারিয়ে যেতে নয়; ফুটবলে অনেক দূরে,অনেক উঁচুতে নিজেকে নিয়ে যেতে এসেছেন।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, তারেক তার খেলোয়াড়ি জীবনে কোনো প্রতিযোগিতায় হারেননি। সত্যিই তাই। যখন যে ক্লাবের জার্সিতে খেলেছেন হোক সেটা তৃতীয় বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগের দল কিংবা চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ অথবা প্রিমিয়ার লিগে। ব্যক্তিগত এবং দলগত সাফল্যের বিচারে সবখানেই সফল তিনি। তারেককে মূল্যায়ন করতে হলে যেতে হবে ফ্লাশব্যাকে, সেই ২০১৭ সালে। ওই বছর তৃতীয় বিভাগ ফুটবলে সিদ্দিকবাজার ঢাকা জুনিয়র ক্লাবের হয়ে খেলেন তিনি। ঢাকার ফুটবলে সেখান থেকেই শুরু। তৃতীয় বিভাগে দারুণ খেলে দলকে তুলে আনেন দ্বিতীয় বিভাগে। একই বছর অর্থাৎ ২০১৭-১৮ মৌসুমে দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবলে খেলেন মুগদা সমাজ কল্যাণে। সেখানেও সাফল্যের পদচিহ্ন আঁকেন। চ্যাম্পিয়ন হয়ে মুগদাকে তুলে আনেন প্রথম বিভাগে। একই ঘটনার জন্ম দেন প্রথম বিভাগেও। ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের হয়ে খেলে দলকে চ্যাম্পিয়ন করে বিসিএলে উত্তীর্ণ করেন।
সিলেটের ছেলে তারেক স্কুলজীবন থেকেই ছিলেন অত্যন্ত ডানপিটে স্বভাবের। ফুটবল বলতে ছিলেন অজ্ঞান। স্কুলে দাপিয়ে ফুটবল খেলতেন। উপজেলা পর্যায়ে, জেলার ফুটবলে কৈশোরেই প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। এলাকা কিংবা এলাকার বাইরে কোনো ফুটবল প্রতিযোগিতা হলে সেখানে ডাক পড়ত তারেকের। সিলেটের দক্ষিণ সুরমা ফুটবল একাডেমিতে হাতেখড়ি হয় তার। তখন গুরু ছিলেন আক্কাস উদ্দিন আক্কাই। তবে পরিবারের সবচেয়ে আদরের সদস্য ও তিন বোনের একমাত্র ভাই তারেকের জীবনে ফুটবলে তেমন কোনো গুরু ছিলেন না। যার হাত ধরে এগিয়ে যেতে পারেন। পরিশ্রমই মূলত তারেককে আজ এতদূর নিয়ে এসেছে।
ফুটবল খেলায় শুরুতে পরিবারের সাপোর্ট না থাকলেও মা সব সময়ই তারেককে উৎসাহ দিতেন। তবে অন্যরা চাইতেন লেখাপড়া করে দেশের বাইরে যেন থিতু হন তিনি। সেই সুযোগও ছিল। কারণ আপন বোনেরাই লন্ডনের মতো শহরে থাকেন। কিন্তু তারেকের সেসবে কোনোদিন মন ছিল না। বিদেশ বিভূঁইয়ের জীবন তার পছন্দ নয়। ফুটবল খেলে দেশের জন্য ভালো কিছুর তাগিদ সব সময় ভেতর থেকে অনুভব করেন। তারেকের এখন একটাই লক্ষ্য শেখ জামালের জার্সিতে আগামী মৌসুমটা ভালো খেলে জাতীয় দলে নিজের জন্য জায়গা করে নেওয়া এবং জাতীয় দলকে দীর্ঘ সময় সার্ভিস দিয়ে যাওয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২৩
এআর/এমএইচএম