দেশের ফুটবলের আজকের এই রাতটা বহুদিন গেঁথে থাকবে ফুটবলপ্রেমীদের মনে। রোলার কোস্টার রাইডের মতো টান টান উত্তেজনার ম্যাচে দুই দল করলো সাত গোল।
সেই ম্যাচে বাংলাদেশ হারলো ৪-৩ গোলে। আজ এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে শুরুতে দেশের ফুটবলের পোস্টার বয় হামজা চৌধুরীর গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর পিছিয়ে পড়ে ৩-১ গোলে। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষ দিকে সমিত সোম, মোরসালিনের গোলে স্কোর ৩-৩ করে বাংলাদেশ। যখন উৎসব আনন্দে মেতে উঠেছে ঢাকা স্টেডিয়ামের গ্যালারি তখনই শেষ মিনিটের গোলে গ্যালারিতে বিষাদের কালো ছায়া নামিয়ে আনেন হংকং চায়নার হ্যাটট্রিক হিরো রাফায়েল মারকিস। ম্যাচের শেষে মিনিটে তার গোলে ৪-৩ গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে অ্যাশলে ওয়েস্টউডের শিষ্যরা। এই হারে বাংলাদেশের মূল পর্বে খেলার স্বপ্ন কার্যত অসম্ভবই বলা চলে।
শুরুতেই হামজার গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে এভারটন কামারগোর গোলে সমতায় থেকে বিরতিতে যায় হংকং। বিরতীর পর দ্রুতই দুই গোলের লিড নেয় হংকং। গোল শোধ করতে প্রাণপণে লড়াই করে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। খেলার বদল আসে জামাল, ফাহমেদুল, জায়ান, তপুর বদলি হিসেবে নামার পরে। শেষ দিকে একের পর এক আক্রমণে হংকং চায়নার রক্ষণের কঠিন পরীক্ষা নিতে থাকে বাংলাদেশ। এই ধারাবাহিকতায় মোরসালিনের গোলে ব্যবধান ২-৩ করে জামাল-হামজারা। এরপর দলকে সমতায় ফেরান সমিত সোম। ম্যাচর তখন বাকি মিনিট খানেক। শেষ মিনিটের শেষ মুহূর্তে রক্ষণের ভুলে গোল হজম করে হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো বাংলাদেশকে।
আরও একবার সমালোচনার মুখে বাংলাদেশ দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরার একাদশ নির্বাচন। সিঙ্গাপুর ম্যাচের মতোই এবারও বিতর্কিত একাদশ মাঠে নামান তিনি। সমিত সোম, ফাহমেদুল, জায়ান ও জামাল ভূঁইয়াকে ছাড়াই স্কোয়ড নির্বাচন করেন এই স্প্যানিশ কোচ। ৪-৪-২ ফর্মেশনে হংকংয়ের বিপক্ষে লড়াই করেছে। শুরু থেকেই ম্যাচ আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে জমে উঠে। ১৩ মিনিটে গ্যালারির দর্শকদের আনন্দের উপলক্ষে এনে দেন দেশের ফুটবলের পোস্টার বয় হামজা চৌধুরী। লেস্টার সিটির এই ফুটবলারের পায়ের বাঁকানো ফ্রি-কিক এক ডিফেন্ডারের মাথা ছুঁয়ে গোলকিপারের ওপর দিয়ে জড়িয়ে যায় জালে। এটি লাল সবুজ জার্সিতে হামজার দ্বিতীয় গোল। গত জুনে প্রীতি ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে প্রথম গোল এসেছিল। ২৬ মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়েও রাকিবের ক্রসে ফয়সাল আহমেদ ফাহিম মাথা ছোঁয়াতে পারেননি। ৩৯ মিনিটে সুযোগ পায় হংকংও। কিন্তু এভারটনের শট দূরের পোস্ট দিয়ে গেছে।
শেষ পর্যন্ত যোগ করা সময়ে সমতায় ফেরে হংকং। কর্নার থেকে বল ঘুরে আসে এভারটনের সামনে, বক্সের একদম সামনে থেকে ফাঁকায় এই ফরোয়ার্ড আলতো টোকায় মিতুল মারমাকে পরাস্ত করেন।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে হংকং লিড নেয়। ৫০ মিনিটে মোহাম্মদ সোহেল রানার ভুল পাস থেকে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। বক্সের বাইরে থেকে সোহেলের ব্যাক পাস মিতুলের উদ্দেশ্যে, কিন্তু বলে গতি না থাকায় রাফায়েল মারকিস দ্রুত এসে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সহজেই স্কোরলাইন ২-১ করেন। এরপর আবারও নিজেদের ভুলে গোল হজম। সোহেল রানা জুনিয়র বক্সের বাইরে থেকে ব্যাক পাস দেন মিতুলের উদ্দেশ্যে। সে পাসেও ছিল না গতি। ছুটে এসে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মিতুলকে আবারও পরাস্ত করেন বদলি ফরোয়ার্ড রাফায়েল মারকিস।
এরপরই যেন হুশ ফেরে কোচের, একসাথে তিনটি পরিবর্তন আনেন কাবরেরা। সোহেল রানা সিনিয়র, সোহেল রানা জুনিয়র ও ফয়সাল আহমেদ ফাহিমকে তুলে জামাল, সমিত ও ফাহামিদুলকে নামান কোচ।
৭৪ মিনিটের গোলে বাংলাদেশের হার প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। সতীর্থের লং পাস নিয়ন্ত্রণে নেন এভারটন। দেখে-শুনে সাদ উদ্দিনের পায়ের ফাঁক দিয়ে গোলমুখে বল বাড়ান তিনি। নিখুঁত প্লেসিংয়ে বাকি কাজটুকু সারেন রাফায়েল।
শেষ দিকে এসে তাজের জায়গায় অভিষেক হয় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জায়ান আহমেদের। ৮৪ মিনিটে গোল করে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরার আশা দেখান শেখ মোরসালিন। জামালের ফ্রি-কিকে এক ডিফেন্ডার হেড করার পর তা চলে যায় ফাহামিদুলের পায়ে, ইতালি প্রবাসীর ভলি গোলকিপার ঠিকমতো তালুবন্দী করতে পারেননি, ফিরতি বলে মোরসালিন ডান পায়ের প্লেসিং শটে গোল করতে ভুল করেননি।
যোগ করা সময়ে এসে বাংলাদেশ ড্রয়ের সম্ভাবনা তৈরি করে। মোরসালিনের কর্নার থেকে এক ডিফেন্ডারের মাথা ছুঁইয়ে চলতি বলে পোস্টের সামনে থেকে হেডে করে স্কোর ৩-৩ করেন শমিত। শেষটা এখানেই হতে পারতো। তবে ফুটবল দেবতার পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। ম্যাচের অন্তিম মুহূর্ত অবিশ্বাস্যভাবে জয়সূচক গোল পায় হংকং। বাংলাদেশের ভুলে রাফায়েল গোল করে হংকংয়ের জয় নিশ্চিত করেন। এই গোলের পরপরই শেষ বাশি বাজায় ম্যাচ রেফারি। সবজু ঘাসে হামজা-ফাহমেদুলদের অশ্রুসিক্ত নয়নে বড় অসহায়ই দেখালো। আরও একটি হার, আরও একটি হতাশার রাত সঙ্গী হলো বাংলাদেশের।
এআর