ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

ফুটবল

দূর আকাশের তারা ফ্রেড!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১২ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৪
দূর আকাশের তারা ফ্রেড!

ময়মনসিংহ: সেলেসাওদের ৯ নম্বর জার্সি গায়ে জড়িয়ে ব্রাজিলকে পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি জিতিয়েছিলেন ‘দ্য ফেনোমেনন’ রোনালদো। ভয়ঙ্কর এ ফরোয়ার্ডের অবসরের পর সেই হলুদ জার্সি গায়ে জড়ান সাম্বা ছন্দের নতুন জাদুকর ফ্রেড।



২০১৩ সালে ঘরের মাটিতে নবম ফিফা কনফেডারেশন কাপে ৫ গোল করে পান গোল্ডেন স্যু। ওই বছরের প্রায় পুরোটা সময় উজ্জ্বলতা ছড়ান তিনি। ১০ ম্যাচে করেন ৯ গোল! কিন্তু, চলতি বিশ্বকাপেই তিনি যেন ‘দূর আকাশের তারা’। নিজের সেই উদ্ভাসিত নৈপুণ্য ধরে রাখতে পারেননি। ৪ ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়েছেন মাত্র একবার! 

হেক্সা জয়ের মিশনে নামা ব্রাজিলের আক্রমণভাবের মূল ভরসা ফ্রেড এমনই সুপার ফ্লপ। নিজের জার্সির পেছনে ৯ নম্বর লেখা থাকলেও ক্ল্যাসিক্যাল এ জার্সির মান রাখতে পারেননি এ ফ্লুমিনেন্স স্ট্রাইকার। তার সলতের সব তেল যেন ফুরিয়ে গেছে এ বিশ্বকাপের আগেই। ফলে, চরমভাগে ভুগতে হচ্ছে লুইস ফিলিপ স্কোলারি’র দলকে।

কোয়ার্টার ফাইনালে ফুটবলের নতুন শক্তি কলম্বিয়ার বিপক্ষেও ঠিকমতো জ্বলে উঠতে ব্যর্থ হলে কঠিন মাশুল গুণতে হতে পারে হট ফেভারিট ব্রাজিলকে। আর ক্যারিয়ারে ইতি টানতে হতে পারে ৩০ বছর বয়সী এ ফরোয়ার্ডকে।

১৯৮৩ সালের ৩ অক্টোবর ব্রাজিলের মিনাস জেরিয়াস প্রদেশের টিওফিলো অটোটিতে জন্মগ্রহণ করেন ফ্রেড। পেশাদারি ফুটবলে পা রাখেন ২০০২ সালে। বেশির ভাগ সময় খেলেছেন ঘরোয়া ক্লাবে। ৩ বছর পর ইউরোপিয়ান ফুটবল আঙিনায় প্রবেশ করেন তিনি। প্রায় ৪ মৌসুম কাটান ফ্রান্সের ক্লাব অলিম্পিক লায়নে। জিতে নেন তিনটি শিরোপা।

এরপর চলে আসেন ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্লুমিনেন্স’এ। সেখানে গায়ে জড়ান ৯ নম্বর জার্সি। সাফল্য ধরা দেয় ফ্রেডের ভুবনে। ২০১২ সালে দলকে চ্যাম্পিয়নশিপ জেতানোর পাশাপাশি ওই টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় ও ষ্ট্রাইকারের স্বীকৃতি পান তিনি।

তবে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে অবশ্য নিজের ‘জাত’ চেনাতে ব্যর্থ হন ফ্রেড। ওই বিশ্বকাপে দুর্বল অষ্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একটি গোল করলেও সেই আসর থেকে ছিটকে পড়ে ব্রাজিল।

আধুনিক মস্তিষ্কের কোচ ‘বিগ ফিল’ ব্রাজিলের কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর আবার ঘুরে যায় ফ্রেডের ভাগ্য। জাতীয় দলে ডাক পড়ে তার। কোচকে পাল্টা উপহার দেন গত বছরের কনফেডারেশন কাপ জিতে। ২০১৩ সালের দলের পক্ষে ১০ ম্যাচ খেলে ৯ গোল করেন। হয়ে ওঠেন দুর্দমনীয়। তাকে রুখতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছিল প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের।

স্বপ্নের মতো ২০১৩ সালের মৌসুম শেষ করে হালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে সেই ফ্রেডই কী না দলের সুপার ফ্লপ তারকা! প্রথম রাউন্ডে সেলেসাওদের প্রথম দু’ম্যাচে ক্রোয়েশিয়া ও ম্যাক্সিকো’র বিপক্ষে গোলের খাতা খোলা হয়নি। ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে তো যাচ্ছেতাই খেলা খেলেছেন। ওচোয়াদের বিপক্ষেও ছিলেন নি®প্রভ।

ম্যাক্সিকানদের সঙ্গে তাকে যখন খুঁজে পাওয়া একেবারেই দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়, সেই সময় তাকে মাঠ থেকে তুলে নেন স্কোলারি। ক্যামেরুনের জালে বল জড়ালেও ল্যাটিন আমেরিকার উদীয়মান শক্তি চিলি’র বিপক্ষে নক-আউট পর্বের খেলায় কেমন জানি ক্লান্তির ছাপ!

আক্রমণভাগের অন্যতম সেরা এ অস্ত্রের এমন ‘বেচারা’ অবস্থায় তাকে আবারো মাঠ থেকে তুলে নিয়ে নতুন খেলোয়াড় নামাতে হয়েছে স্কোলারিকে। বিশ্বকাপে প্রথম দু’ম্যাচে ব্যর্থতার পর এ ব্রাজিলিয়ান তারকাকে দল থেকে বাদ দেওয়ার দাবি পর্যন্ত তোলেন ইংল্যান্ডের সাবেক তারকা স্ট্রাইকার অ্যালান শিয়ারা।

চলতি বিশ্বকাপে নিজের চারটি ম্যাচেই বল নিয়ে প্রতিপক্ষের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেয়ে শুধুমাত্র টোকা দেওয়ার সন্ধানে থাকতে দেখা গেছে ফ্রেডকে। এর সঙ্গে আছে, পড়ে গিয়ে ফাউলের নাটক সাজানোর মতো অভিনয়। এমন কাঁচা অভিনয় ছেড়ে নিজের চেনা ছন্দে ফিরতে না পারলে হয়ত খুলে ফেলতে হতে হবে রোনালদো’র বিখ্যাত এ ৯ নম্বর জার্সিটি।

বাংলাদেশ সময়: ২১১২ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।