ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

ফুটবল

বার্সাকে হারিয়ে মহারণের ম্যাচে রিয়ালের প্রতিশোধ

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০১৬
বার্সাকে হারিয়ে মহারণের ম্যাচে রিয়ালের প্রতিশোধ ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বিশ্ব ফুটবলকে দুই ভাগে ভাগ করে দেওয়া এল ক্লাসিকোর মহারণে মাঠে নেমেছিল বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদ। বার্সার ঘরের মাঠ ক্যাম্প ন্যু’তে আতিথ্য নেয় রিয়াল।

এগিয়ে থেকেও এ ম্যাচে জিততে পারেনি শীর্ষে থাকা বার্সা। কাতলানদের ২-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছে আতিথ্য নেওয়া রিয়াল।

প্রথম লেগের ম্যাচে রিয়ালের মাঠে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছিল বার্সা। ফিরতি লেগের ম্যাচটি তাই ছিল রিয়ালের প্রতিশোধের ম্যাচ। বার্সার জন্য ম্যাচটি ছিল পয়েন্ট টেবিলে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দলের সাবেক কোচ ও কিংবদন্তি ফুটবলার সদ্য প্রয়াত ইয়োহান ক্রুইফকে জয় উৎসর্গ করার ম্যাচ। এ ম্যাচটি ছিল আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকর মেসির পেশাদার ক্যারিয়ারের ৫০০তম গোলের মাইলফলক ছোঁয়ার ম্যাচ। আরও গুরুত্বপূর্ণ ছিল রিয়ালের সাবেক ফরাসি তারকা জিনেদিন জিদানের খেলোয়াড়ী জীবনের পর কোচ হিসেবে প্রথম এল ক্লাসিকো।

বার্সার হয়ে গোল করেন জেরার্ড পিকে। রিয়ালের হয়ে সমতাসূচক গোলটি করেন করিম বেনজেমা আর জয়সূচক গোলটি করেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।

ম্যাচের শুরুর একাদশে বার্সা কোচ লুইস এনরিক ৪-৩-৩ ফরমেশনে মাঠে নামান ক্লদিয়ো ব্রাভো, দানি আলভেজ, জেরার্ড পিকে, মাশচেরানো, জরদি আলবা, ইভান রেকিটিক, বুসকেটস, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, লিওনেল মেসি, লুইস সুয়ারেজ আর নেইমারকে। অপরদিকে, আতিথ্য নেওয়া রিয়ালের কোচ জিনেদিন জিদান ৪-৩-৩ ফরমেশনে প্রথম একাদশে মাঠে পাঠান কেইলর নাভাস, কারভাজাল, সার্জিও রামোস, পেপে, মার্সেলো, লুকা মদ্রিচ, ক্যাসেমিরো, টনি ক্রুস, গ্যারেথ বেল, করিম বেনজেমা আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে।

ম্যাচের অষ্টম মিনিটে গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করেন উরুগুয়ের বার্সা তারকা সুয়ারেজ। গোলপোস্টের বামদিক দিয়ে দুরন্ত গতিতে বল নিয়ে প্রবেশ করেন ব্রাজিলিয়ান সেনসেশন নেইমার। সুয়ারেজকে বল বাড়িয়ে দিলে লিভারপুলের সাবেক তারকার সামনে শুধুই রিয়ালের গোলরক্ষক ছিলেন। তবে, বলে শট নিতে ব্যর্থ হলে গোল পাওয়া হয়নি কাতালানদের।

মধ্যমাঠের লড়াইয়ে দুই দলই সমান তালে লড়তে থাকে। ম্যাচের ১৫তম মিনিটে গোলের সম্ভাবনা তৈরি করে রিয়াল। অতিথিদের হয়ে মদ্রিচ-বেলের জুটিতে এ সম্ভাবনা সফল হয়নি। পরের মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোলের সুযোগ নষ্ট করে বার্সা। আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার জোরালো শট রিয়ালের ডিফেন্সে লেগে ফিরে আসে। দুই মিনিট পর আবারো কাতালানরা আক্রমণ চালায়। সুয়ারেজ থেকে বল পান রেকিটিক। বাঁকানো শটে রিয়ালের জালে বল জড়াতে চাইলেও অতিথি গোলরক্ষ নাভাস ঝাঁপিয়ে পড়ে তা রুখে দেন।

বার্সার চেয়ে রিয়ালের ডিফেন্ডারদের ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। ফুটবলের উন্মাদনায় এল ক্লাসিকো কতটা অবদান রাখে তা বোঝা যায় ম্যাচের ২৩তম মিনিটে। দুরন্ত গতিতে মেসি রিয়ালের ডি বক্সে বল নিয়ে প্রবেশ করলে সার্জিও রামোস তাকে বাধা দেন। কাতালানরা পেনাল্টির আবেদন করলেও রেফারি বাঁশি বাজাননি। নিশ্চিত দ্বিতীয়বারের মতো হলুদ কার্ড দেখা থেকে বেঁচে যান রামোস। সেই সঙ্গে পেনাল্টির হাত থেকে বেঁচে যায় রিয়াল।

সময় পেরিয়ে গেলেও দুই দল গোলের দেখা না পেলে স্কোরশূন্য থেকেই বিরতিতে যায় বার্সা-রিয়াল।

বিরতির পর আবারো উত্তেজনা ফিরে আসে হাইভোল্টেজ এই ম্যাচে। খেলার ৫৪তম মিনিটে সুয়ারেজের একক প্রচেষ্টায় রিয়ালের বক্সে বল পান নেইমার। সেখান থেকে আবারো পা ঘুরে বল যায় সুয়ারেজের দখলে। উরুগুয়ের তারকা সতীর্থ মেসিকে বল বাড়িয়ে দিলে আর্জেন্টাইন তারকা বাঁকানো শট নেন। রিয়াল গোলরক্ষক নাভাস তা রুখে দেন।

ম্যাচের ৫৬ মিনিটে প্রথম লিড নেয় স্বাগতিকরা। বার্সার হয়ে প্রথম গোলটি করেন জেরার্ড পিকে। ব্যাক টু ব্যাক কর্নার পাওয়া কাতালানদের গোলটি আসে পিকের দুর্দান্ত হেড থেকে। রেকিটিকের কর্ণার থেকে বল উড়ে আসার আগে রিয়ালের পেপে অনেকটা পাহারা দিয়ে রেখেছিলেন পিকেকে। কিন্তু, বক্সে বল আসা মাত্র ছুটে গিয়ে দারুণ এক হেডে রিয়ালের জালে বল জড়ান পিকে।

গোল হজম করে বসে থাকেনি রিয়াল। ৬২ মিনিটের মাথায় সমতায় ফেরে জিদান শিষ্যরা। ব্রাজিল তারকা মার্সেলোর দারুণ এক পাস থেকে বল পান টনি ক্রুস। সেখান থেকে তিনি বল দেন বেনজেমাকে লক্ষ্য করে। আর ফরাসি তারকা দুর্দান্ত এক বাই-সাইকেল কিকে বার্সার জালে বল জড়ান। ফলে, ১-১ এ সমতায় ফেরে ম্যাচ।

দুই মিনিট পরেই রিয়ালের ডি বক্সে বল নিয়ে প্রবেশ করেন নেইমার। বুক দিয়ে অসাধারণ ভঙ্গিতে বল নামালেও রিয়াল গোলরক্ষক নাভাসের সামনে ঠিকমতো বলে শট নিতে পারেননি তিনি।

৬৮তম মিনিটে মার্সেলোর আরেকটি পাসে বল পান বার্সার বক্সের বাইরে ফাঁকায় দাঁড়ানো রোনালদো। তার বাম পায়ের শট রুখে দেন স্বাগতিক গোলরক্ষক ব্রাভো। ৭৪ মিনিটের মাথায় রেকিটিকের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন আরদা তুরান। ৭৭ মিনিটে বেনজেমার বদলি হিসেবে মাঠে আসেন জেসে রদ্রিগুয়েজ।

ম্যাচের শেষ দশ মিনিটে শুরু হয় দুই দলের জোরোলো আক্রমণ। ৮২ মিনিটের মাথায় বার্সার জালে দ্বিতীয়বার বল জড়ায়। ওয়েলস তারকা বেলের হেডে দ্বিতীয়বার গোলের উল্লাসে মেতে উঠে রিয়াল। তবে, হেড করার আগ মুহূর্তে মাশচেরানো ফেলে দেওয়ার কারণে ফাউল হলে গোলবঞ্চিত হতে হয় বেলকে।

এক মিনিট পরেই দশজনের দলে পরিণত হয় রিয়াল। সুয়ারেজকে অবৈধ বাধা দিলে দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড দেখে মাঠের বাইরে যেতে হয় রিয়ালের দলপতি রামোসকে। তবে, দুই মিনিট পরেই (৮৫) লিড নেয় রিয়াল। দলকে লিড পাইয়ে দেন রোনালদো। বেলের কোনাকুনি শটে বল পান পর্তুগিজ দলপতি। প্রথমে বুক দিয়ে বল নামিয়ে ঠান্ডা মাথায় বার্সার গোলবার লক্ষ্য করে শট নেন তিনি। তার ডানপায়ের শটে স্বাগতিকদের জালে বল জড়ালে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় রিয়াল।

ম্যাচের বাকি সময় গোল করতে ব্যর্থ হলে বার্সাকে পরাজয় মেনে নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়।

এ ম্যাচে জয়ের ফলে পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়ে রিয়াল টেবিলের তিনেই রয়েছে। ৩১ ম্যাচে ৬৯ পয়েন্ট নিয়ে জিদান শিষ্যরা তিন নম্বরে। এক পয়েন্ট বেশি নিয়ে দুইয়ে দিয়েগো সিমিওনের অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ। আর সমান ৩১ ম্যাচে সর্বোচ্চ ৭৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে বার্সেলোনা।

বাংলাদেশ সময়: ০২৩২ ঘণ্টা, ০৩ এপ্রিল ২০১৬
এমআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।