কিছুদিন আগে বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন হামজা চৌধুরী। বাংলাদেশি-গ্রানাডিয়ান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এই মিডফিল্ডার এখন খেলেন ওয়াটফোর্ডের হয়ে।
ক্রীড়াবিষয়ক সংবাদমাধ্যম 'স্কাই স্পোর্টস'-কে এমনটাই বলেছেন এডওয়ার্ডস। তিনি জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে একই সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া হামজার সাক্ষাৎকার পড়েছেন তিনি। যেখানে বাংলাদেশের হয়ে খেলার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছিলেন প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লেস্টার সিটি থেকে ধারে ইএফএল চ্যাম্পিয়নশিপের ক্লাব ওয়াটফোর্ডে পাড়ি জমানো হামজা। কিছুদিন আগে ব্রিটিশ মুসলিম অ্যাথলেটদের সাপোর্ট গ্রুপের শুভেচ্ছাদূত হয়েছেন তিনি।
'স্কাই স্পোর্টস'-এর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত হামজার সাক্ষাৎকারের ব্যাপারে ওয়াটফোর্ড বস বলেন, 'সে (হামজা) যদি এটাই (বাংলাদেশের হয়ে খেলা) বেছে নিয়ে থাকে, তাহলে আমি বলবো এটা পজিটিভ ব্যাপার হবে। আমি মনে করি সে বাংলাদেশের তরুণদের জন্য আশার আলো হয়ে আসতে পারে। তারা ওকে দেখে সাহস পাবে এবং ভাববে ওদের দিয়েও সম্ভব। '
গত মৌসুমে লেস্টারের একাদশে জায়গা পেতেই হিমশিম খেতে হয়েছে দলটির হয়ে ৮০ ম্যাচ খেলা হামজাকে। তবে ওয়াটফোর্ডে তার জায়গা নিয়ে প্রশ্ন নেই। ধারে খেললেও মৌসুম শেষে তাকে কিনেও নিতে পারবে 'দ্য হর্নেটস' নামে পরিচিত ক্লাবটি। হামজাকে পেয়ে দলের কোচ এডওয়ার্ড বেশ খুশি। তিনি বলেন, 'তার সঙ্গে কাজ করা খুবই আনন্দের। সে প্রতিদিন শতভাগ দেয়। সে খুবই পজিটিভ এবং তার পারফরম্যান্স দেখলেই তা বুঝা যায়। তার প্রশংসা করে শেষ করা যাবে না। সে খুব ভালো খেলোয়াড় এবং খুব ভালো মানুষও। '
কিছুদিন আগে আনোয়ার উদ্দিন এমবিই-এর সাক্ষাৎকারে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা একমাত্র ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ফুটবলার হামজা বলেন, '‘হ্যাঁ, আমি বাংলাদেশের হয়ে আগামীতে খেলতে চাই। আমি এখানে থাকলে আগামী কয়েক বছরে আরও ভালো পর্যায়ে নিজেকে নিয়ে যেতে পারবো। তবে আমি বাংলাদেশে গিয়ে খেলতে পারলে আরও গর্বিত হব। সেখানে নিয়মিত খেলতে চাই। ’
হামজা আরও বলেছেন যে, তিনি বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে তার শিকড়ের সাথে একটি ‘দৃঢ় সংযোগ’ অনুভব করেন এবং তার সন্তানদের দেশে কিছু সময় কাটানোর সুযোগ দিতে চান, 'প্রথমে আমি অবাক হয়েছিলাম, আমার সাফল্যে বাংলাদেশ থেকে অনেক শুভকামনা পেয়েছি। তাদের কাছ থেকে আমি অনেক সাপোর্ট পেয়েছি। ভালো কিছু করলে দেশ থেকে সকলে সমর্থন জানাতো। আমার মা সারা রাত জেগে থাকতেন কারণ আমার খালা এবং কাজিনরা বাংলাদেশ থেকে ফোন করবে। ’
দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে অনেক সম্ভাবনা দেখেন বলে জানিয়েছেন হামজা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশেরর সমর্থকদের ভালোবাসা সত্যিই আমার চোখ খুলে দিয়েছে একজন পেশাদার ফুটবলার হিসেবে আপনার কতটা সুযোগ আছে, বিশেষ করে একজন দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলার হিসেবে। আমি একটি শক্তিশালী সংযোগ অনুভব করি এবং ব্যবহার করতে চাই৷ আমার অভিজ্ঞতাগুলো বাংলাদেশের ফুটবলে কাজে লাগাতে চাই। ’
ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলের সাবেক সদস্য হামজার পিতা যদিও গ্রানাডিয়ান, কিন্তু তার মা বাংলাদেশের সিলেটের হবিগঞ্জের মানুষ। তার বাড়ি জেলাটির বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে (দেওয়ান বাড়ি)। তবে বর্তমানে হামজার দুই অভিভাবকই বাংলাদেশি। এই বিষয়ে হামজা বলেন, আমার দুই অভিভাবকই বাংলাদেশি এবং আমি এশীয় পরিবারে বেড়ে উঠেছি। কিন্তু আমার মধ্যে ক্যারিবিয়ান রক্ত আছে, কারণ আমার পিতা গ্রানাডার। আমাদের পরিবার অনেক বড়। '
মাত্র সাত বছর বয়সে লেস্টার একাডেমিতে যোগ দেন হামজা। সেই থেকে দলে নিয়মিত খেলেছেন। প্রথমে যেই দলের ভক্ত ছিলেন সেই লেস্টার সিনিয়র দলেরই সদস্য হয়েছেন এই ঝাঁকড়া চুলের তরুণ। ২০১৮ সালের নভেম্বরে টটেনহামের বিপক্ষে ২-১ গোলে জেতা ম্যাচে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নেমে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত হিসেবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলার গৌরব অর্জন করেন হামজা। এর আগে ২০১৬ সালে ধারে বার্টন অ্যালবিয়নের হয়ে খেলেছেন তিনি। সেখানেও দলকে লিগ ওয়ানে উন্নীত করায় ভূমিকা রেখেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২
এমএইচএম