ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ফুটবল

বিশ্বকাপ নিয়ে ইতিবাচক প্রচারণা চালাতে সমর্থক ‘ভাড়া’ করছে কাতার!

স্পোর্টস ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০২২
বিশ্বকাপ নিয়ে ইতিবাচক প্রচারণা চালাতে সমর্থক ‘ভাড়া’ করছে কাতার!

আর মাত্র কিছুদিন পর ফুটবল বিশ্বকাপের আসর বসছে মধ্যপ্রাচ্যের তেল-গ্যাস সমৃদ্ধ দেশ কাতারে। কিন্তু আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে দেশটি একের পর এক সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছে।

এবার সমর্থকদের দিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ইতিবাচক প্রচারণা চালানোর অভিযোগ উঠল আয়োজকদের বিরুদ্ধে।

এ সংক্রান্ত একটি গোপন নথিপত্র নাকি দেখার সুযোগ পেয়েছে বার্তা সংস্থা 'এপি'। তাদের বরাত দিয়ে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম 'মার্কা' জানিয়েছে, মূল পর্বে উঠে আসা ৩২টি দলের ১৬ শ সমর্থককে কাতারে নেওয়া হচ্ছে। তাদের সমস্ত খরচ বহন করছে আয়োজকরা। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাদের দিয়ে গান গাওয়ানো হবে এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে আয়োজক দেশ কাতারের ব্যাপারে ইতিবাচক প্রচারণা চালানোর দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে তাদের।  

আগামী ২০ নভেম্বর কাতার ও ইকুয়েডর ম্যাচের মাধ্যমে পর্দা উঠবে ২০২২ বিশ্বকাপের। গোপন নথি ঘেঁটে 'এপি' জানতে পেরেছে, ওই ১৬ শ সমর্থকদের জন্য সেদিন পাঁচ মিনিটের 'ফ্যান-থিমড' পর্ব থাকবে। যেখানে প্রতি দেশের জন্য আলাদা আলাদা গান দেওয়া বা স্লোগান দেবেন। আয়োজকদের পক্ষ থেকে নাকি ওই সমর্থকদের গান বা স্লোগানও ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে।  

আয়োজকদের ওই প্রোগ্রামে 'বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী'দের বাইরে রাখা হচ্ছে এবং প্রতি দলের ৩০ থেকে ৫০ জন করে এমন লোকজনকে নেওয়া হচ্ছে যারা 'একদম বিশুদ্ধ সমর্থক'। দোহার আল বাইত স্টেডিয়ামের ওই আয়োজনে প্রতিটি সমর্থক গ্রুপের দিকে আলাদা আলাদাভাবে ক্যামেরা ফোকাস করা হবে। তাদের সবাইকে উল্লাস করার জন্য শার্ট, পতাকা এবং স্কার্ফ তৈরি রাখতে বলা হয়েছে।  

ওই সমর্থকদের ইকোনমি ক্লাসের ফ্লাইটে করে কাতারে আনা হচ্ছে এবং তাদের থাকার জন্য বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। কমপক্ষে আগামী ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত কিংবা চাইলে পুরো টুর্নামেন্টের জন্য তারা কাতারে থাকতে পারবেন। এমনকি প্রতিদিন তাদের খরচের জন্য ২৫০ কাতারি রিয়াল (৬৮ মার্কিন ডলার) করে দেবে আয়োজকরা।  

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের এই বিশেষ পরিকল্পনার একটি উদ্দেশ্য আছে। আর তা হলো প্রচারণা। অংশগ্রহণকারী প্রতি দেশের সমর্থকদের মধ্যে থেকে 'নেতা' খুঁজে বের করা হবে, যারা "IAMAFAN" হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ইতিবাচক প্রচারণা চালাবেন। তাদের কাজ হবে উপযুক্ত মাধ্যমে কাতারি আয়োজকদের দেওয়া বিভিন্ন কনটেন্ট ছড়িয়ে দেওয়া এবং বিশ্বকাপের সমর্থনে থার্ড পার্টি কর্তৃক পোস্ট করা বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেওয়া।  

বাছাইকৃত সমর্থকদের বলা হয়েছে, তাদের কাতারের 'মাউথপিস' হওয়ার দরকার নেই। কিন্তু তারা কোনোভাবেই কাতার কিংবা টুর্নামেন্টকে অপমান করা হয় এমন কিছু করা বা বলা যাবে না। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কেউ যদি এমন কিছু করে্ তাহলে আয়োজকদের তা জানাতে হবে এবং সম্ভব হলে স্ক্রিনশট নিয়েও রাখতে হবে।  

এদিকে কাতার বিশ্বকাপের আয়োজকদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এবারের আসরকে দর্শকদের জন্য আরও ভালোভাবে উপস্থাপন করার জন্য ৫৯টি দেশের ৪৫০ জনের সমর্থককে নিয়ে গঠিত 'ফ্যান লিডার নেটওয়ার্ক'-এর সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেছেন। তাদের মধ্য থেকে বাছাই করে কয়েকজনকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অতিথিদের সঙ্গে যোগ দেবেন। কাতারি আয়োজকদের দাবি, ওই সমর্থকরা যার যার কমিউনিটির নেতা।  

কিন্তু 'ফুটবল সাপোর্টার্স ইউরোপ' নামের একটি গ্রুপের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রোনান এভাইন 'এপি'-এর কাছে বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের সংগঠনটি আবার উয়েফার তালিকাভুক্ত। সমর্থকদের ব্যাপার নিয়ে এই গ্রুপের সঙ্গেই যোগাযোগ করে ইউরোপীয় ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। রোনান এভাইন বলছেন, বিশ্বকাপের আয়োজকরা ভুল বার্তা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, 'একথা একদম পরিষ্কার যে, তারা (আয়োজকদের বাছাই করা সমর্থকরা) কিছুতেই সমর্থকদের প্রতিনিধি নন। তারা বিশ্বকাপের স্বেচ্ছাসেবক কিংবা বেতনভুক্ত কর্মচারী। '

২০১০ সালের ডিসেম্বরে বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে প্রবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে অমানবিক আচরণের অভিযোগ উঠতে শুরু করে কাতারের বিরুদ্ধে। বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম ও বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ কাজে সেখানে থাকা হাজারো প্রবাসী শ্রমিকের অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগও উঠেছে। তাছাড়া দেশটির রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থার কারণে সমর্থকদের বেশকিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। এ নিয়েও সমালোচনা চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০২২
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।