ঢাকা: দেশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬৩ শতাংশ আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য. এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কনফারেন্স কক্ষে এক অনুষ্ঠানে ‘জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে চিকিৎসকদের চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ক গবেষণার ফল জানানো হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ এবং সমাজকল্যাণ বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোদাচ্ছের আলী ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার টিটো মিয়া।
গবেষণার ফল উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় পাবলিক হেলথ ও ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং প্রধান গবেষক ডা. মো. খালেকুজ্জামান।
৯টি জেলা হাসপাতাল এবং ১৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি ৭৭ জন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন, সুপারিনটেনডেন্ট, মেডিকেল অফিসার, আবাসিক মেডিকেল অফিসারের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য পর্যালোচনা করে গবেষণাটি সম্পন্ন হয়।
গবেষণার ফলে জানানো হয়, শতভাগ জেলা হাসপাতালে রক্ত পরিসঞ্চালন সেবা থাকলেও ৪১ দশমিক ২ শতাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই সেবা পাওয়া যায়নি। জেলা হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যথাক্রমে ৮৮ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ৪১ দশমিক ২ শতাংশ ক্ষেত্রে এক্স-রে পরিষেবা পাওয়া গেছে।
৮৮ দশমিক ৯ শতাংশ জেলা হাসপাতাল এবং ৭৬ দশমিক ৫ শতাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইসিজি পরিষেবা পাওয়া গেছে। ২০ শতাংশ জেলা হাসপাতালে এবং ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের জন্য থাকা ডরমিটরি বা কোয়ার্টারে গার্ড থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
অনুমোদিত পদের বিপরীতে শূন্য পদের বিষয়ে বলা হয়, জেলা হাসপাতালে ৩০ শতাংশ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬৩ শতাংশ আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে। জেলা হাসপাতালে ৫১ শতাংশ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭৭ শতাংশ জুনিয়র বা সিনিয়র কনসালটেন্টের পদ শূন্য রয়েছে। জেলা হাসপাতালে ৬৫ শতাংশ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৮ শতাংশ মেডিকেল অফিসার বা সহকারী সার্জনের পদ শূন্য রয়েছে।
নার্সিং স্টাফ বা মিডওয়াইফ পদের ক্ষেত্রে জেলা হাসপাতালে ১৫ শতাংশ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫ শতাংশ পদ শূন্য পাওয়া গেছে। ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ জেলা হাসপাতালে এবং ১১ দশমিক ৮ শতাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আলট্রাসনোগ্রাম সুবিধা পাওয়া গেছে। ৭৭ দশমিক ৮ শতাংশ জেলা হাসপাতালে এবং ৬৪ দশমিক ৭ শতাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মহিলা রোগীদের বা অ্যাটেনডেন্টদের জন্য আলাদা টয়লেট এর ব্যবস্থা পাওয়া যায়নি।
জেলা হাসপাতালে ৫১ শতাংশ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪২ শতাংশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বা টেকনিশিয়ান পদ শূন্য পাওয়া গেছে। জেলা হাসপাতালে ২০ শতাংশ ক্লিনার পদ শূন্য থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শূন্য ক্লিনার পদের পরিমাণ ৬৬ শতাংশ। জেলা হাসপাতালে ৩১ শতাংশ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫৩ শতাংশ নিরাপত্তা প্রহরী বা আনসারের পদ শূন্য পাওয়া গেছে।
চিকিৎসাক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ প্রসঙ্গে বলা হয়, অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ, অন্যায্য সুবিধাভোগীদের প্রভাব ও নিরাপত্তার অভাব সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ, নীতি সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
গবেষণার সুপারিশে বলা হয়, মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সব স্তরের শূন্য পদ পূরণ, অর্জিত দক্ষতা অনুযায়ী চিকিৎসকদের যথাযথ পোস্টিং নিশ্চিত, পৃথক পরামর্শ কক্ষ, ওয়েটিং রুম, ডাক্তারের কক্ষ, চিকিৎসক ও রোগী উভয়ের জন্য পরিষ্কার টয়লেট, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ করা প্রয়োজন।
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, রসদ, প্রশিক্ষিত জনবল, ল্যাবরেটরি পরিষেবাগুলি উন্নত, কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত, চিকিৎসকদের সাথে রোগীর অ্যাটেনডেন্ট, স্থানীয় প্রভাবশালী এবং স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি, হাসপাতালের উপযুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসকদের জন্য মানসম্মত আবাসন সুবিধা নিশ্চিত, পোস্টিং, বদলি এবং পদোন্নতির জন্য যুগোপযোগী নীতিমালা তৈরি এবং বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৩
আরকেআর/আরএইচ