ঢাকা: আমাদের মতো অনুন্নত দেশে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে ক্যান্সার একটি ভিতিকর রোগের নাম। যার মূল কারণ রোগ সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং কুসংস্কার।
স্তন ক্যান্সারের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণসমূহ:
• ব্যথাবিহীন স্তনের চাকা/দলা/গোটা।
• আকার ও আকৃতির যে কোনো ধরণের পরিবর্তন
• বোটা হতে রক্ত, রস বা কস বের হওয়া
• স্তনের চামড়া কুঁচকে যাওয়া বা কমলালেবুর খোসার মত হওয়া
• বোঁটা ভেতরে ঢুকে যাওয়া এবং একদিকে সরে যাওয়া
• বগলের গাঁট শক্ত হয়ে ফুলে যাওয়া
নিজের স্তন নিজে কখন পরীক্ষা করবেন?
• ২০ বছর বয়স হতে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ে নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করতে হবে।
• মাসিক শুরুর ৫ থেকে ৭ দিন পর সাধারণত এই পরীক্ষা করতে হবে, যখন স্তন নরম এবং কম ব্যথা থাকে।
• বয়সের কারণে যাদের মাসিক বন্ধ হয়ে যায় অথবা যেসব নারী গর্ভবতী তারা এটি করবেন প্রতি মাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ে।
• যারা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তারা পরীক্ষাটি করবেন প্রতি মাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ে বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করানোর পর।
স্তন ক্যান্সার চিহ্নিত করার উপায়
স্তন পরীক্ষার সহজ পাঁচটি ধাপ
স্তন ক্যান্সার একটি ভয়ংকর কিন্তু সহজেই চিকিৎসা করা যায় এমন রোগ এবং ৯০ভাগ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সুস্থ করা সম্ভব যদি প্রাথমিক পর্যায়েই সেটা চিহ্নিত করা যায়। আর প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার চিহ্নিত করার সহজ উপায় হলো নিয়মিত পরীক্ষা করা। ১৫ থেকে ৪৫/৫০ বছরের সকল নারীদের উচিত নিয়মিত প্রতিমাসে একবার করে নিজের স্তন নিজেই পরীক্ষা করা।
যারা গর্ভবতী বা বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করান তাদের উচিত নিয়মিত চিকিৎসক দ্বারা স্তন পরীক্ষা করানো। স্বাভাবিক সময়ে স্তন পরীক্ষার উপযুক্ত সময় হলো মাসিকের ৩ থেকে ৫ দিন পর। স্তন পরীক্ষা করা খুবই সহজ একটি কাজ। সাধারণত ৫টি ধাপে এটা করা সম্ভব:
ধাপ ১ :
আয়নার সামনে কাধ সোজা করে দাঁড়ান, কোমরে হাত রাখুন ও আপনার স্তনের দিকে তাকান এবং লক্ষ করুন
১.আপনার স্তনের আকার, আকৃতি ও রং।
২.স্তনদ্বয় দৃশ্যত ফোলা স্থান অথবা বিকৃতি ছাড়া একই আকৃতির আছে কিনা।
নিম্নলিখিত পরিবর্তনগুলো লক্ষ করলে অতিসত্ত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
১.কুঁচকানো, ফোলা চামড়া অথবা চামড়াতে ডিম্পল (অনেকটা কমলা লেবুর খোসার মত)
২.স্তনের কোথাও ক্ষত অথবা লাল স্থান অথবা ফোলা স্থান।
৩.স্থান পরিবর্তিত নিপল অথবা কুচঁকানো অথবা ভিতরে ঢুকে যাওয়া নিপল।
ধাপ ২:
এবার দুÕহাত মাথার উপর তুলুন ও পূর্ববর্তী ধাপে বর্ণিত পরিবর্তনগুলো আবারও লক্ষ্য করুন।
ধাপ ৩:
এবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই লক্ষ করুন আপনার নিপল থেকে (একটি অথবা দুÕটি থেকেই) কোনো ধরনের তরল জাতীয় কিছু (যেমন পানির মত অথবা হলুদে অথবা রক্ত) বের হচ্ছে কিনা।
ধাপ ৪:
এবার শুয়ে পড়–ন এবং আপনার ডান হাত দিয়ে বাম স্তনে চাপ দিন। এক্ষেত্রে আপনার হাতের আঙুলগুলো একসঙ্গে ব্যবহার করুন (হাতের তালু নয়)। ধীরে ধীরে চাকতির মত করে হাত ঘুরান ও অনুভব করুন। এভাবে সম্পূর্ণ স্তনকে পরীক্ষা করুন (উপরের কলারবোন থেকে পেটের ওপর পর্যন্ত ও একপাশ থেকে অন্য পাশ পর্যন্ত এবং অবশ্যই একইভাবে বগল পরীক্ষা করুন)।
একই ভাবে বাম হাত দিয়ে ডান স্তন পরীক্ষা করুন।
এই পরীক্ষা করার সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন যাতে আপনার সম্পূর্ণ স্তনটি পরীক্ষা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি নিপল থেকে শুরু করে বৃত্তাকারভাবে বাহিরের দিকে যেতে পারেন অথবা উপর-নিচ করে সম্পূর্ণ স্তন পরীক্ষা করতে পারেন। লক্ষ্য রাখবেন যাতে আপনি সকল টিস্যু (চামড়া থেকে স্তনের নিচের বুকের খাচা পর্যন্ত) অনুভব করেছেন। চামড়া ও চামড়ার অল্প নিচের অংশের জন্য অল্প চাপ দিন, স্তনের মাঝের অংশের জন্য মাঝারি চাপ দিন ও স্তনের নিচের অংশ অনুভবের জন্য গভীরভাবে চাপ দিন।
ধাপ ৫ :
এবার আপনি বসে অথবা দাঁড়িয়ে পূর্ববর্তী ধাপে বর্ণিত উপায়ে আবার আপনার স্তনদ্বয় পরীক্ষা করুন। এই ধাপটি গোসল করার সময়ও করতে পারেন, কারণ সে সময় চামড়া ভিজা ও পিচ্ছিল থাকে বলে পরীক্ষা করতে সুবিধা হয়।
কি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে
• মেমোগ্রাম বা স্তনের এক্স-রে
• ব্রেস্ট আলট্রাসাউন্ড
• ব্রেস্ট ম্যাগনেটিক রিজোন্যান্স ইমাজিং
• বায়োপসি
• রক্তের পরীক্ষা
• বুকের এক্স-রে
• কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফী স্ক্যান
• পজিট্রন ইমিশন টমোগ্রাফী স্ক্যান
লেখক: কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স কর্মকর্তা, মেরি স্টোপস
বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১২
সম্পাদনা: তানিয়া আফরিন, বিভাগীয় সম্পাদক