ঢাকা, সোমবার, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

স্বাস্থ্য

ইরানের উদ্যোগে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য প্রকল্প

আশরাফুর রহমান, তেহরান থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৪১, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫
ইরানের উদ্যোগে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য প্রকল্প চতুর্থ আন্তর্জাতিক হাসপাতাল ও চিকিৎসা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের ফটোসেশন

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক মেডিকেল ট্যুরিজম সম্প্রসারণে ইরান হাতে নিয়েছে নতুন উদ্যোগ। তেহরানে অনুষ্ঠিত চতুর্থ আন্তর্জাতিক হাসপাতাল ও চিকিৎসা সম্মেলনে (আইপিএইচ-২০২৫) ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ‘মেগা মেডিকেল ক্যাম্প প্রজেক্ট’ শীর্ষক বিশেষ স্বাস্থ্য কার্যক্রমের।

ইরানের টেবমেড ট্যুরিজম-এর সিইও ডা. আলী বাজাজি জানান, আগামী অক্টোবরে বাংলাদেশে শুরু হতে যাওয়া ‘মেগা মেডিকেল ক্যাম্প প্রজেক্ট’ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে ইসলামি দেশগুলোর স্বাস্থ্য পর্যটন উন্নয়ন কেন্দ্র এবং টেবমেড ট্যুরিজম ইরান।

তিনি জানান, প্রকল্পটি দুই ধাপে বাস্তবায়িত হবে। প্রথম ধাপে (অক্টোবর–ডিসেম্বর) অনলাইন ও অফলাইন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সঙ্গে চুক্তি এবং ঢাকায় সরাসরি ইরানি ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে রোগী দেখার ব্যবস্থা করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে (২০২৬ সালে) রোগীদের সঙ্গে প্রাথমিক চুক্তি, ভিসা ও ফ্লাইট সমন্বয় এবং বিদেশে বিশেষায়িত চিকিৎসার রেফারাল কার্যক্রম চালানো হবে।


টেবমেড ট্যুরিজম-এর সিইও ডা. আলী বাজাজি

ডা. বাজাজির মতে, প্রকল্পটির মাধ্যমে বছরে আনুমানিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনৈতিক প্রবাহ সৃষ্টি হতে পারে, যা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবাকে আন্তর্জাতিক মেডিকেল ট্যুরিজম নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করবে।

তেহরানে আয়োজিত এই সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকেও কয়েকজন প্রতিনিধি অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন— ‘ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’-এর সভাপতি মো. রাফিউজ্জামান, ‘মেডি বন্ধু’র প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও সুকদেব সাহা, ‘পারফেক্ট টেলিমিডিয়া’র সিইও এবং টেবমেড ট্যুরিজম-এর বাংলাদেশ কার্যালয়ের অপারেশন্স প্রধান কায়সার কাদের সেলিম ও ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটাল-এর মহামারী বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ শামসাল ইসলাম।


 (বাঁ থেকে) হাবিবুল্লাহ মনির, মো. রাফিউজ্জামান, কায়সার কাদের সেলিম ও সুকদেব সাহা

আন্তর্জাতিক অতিথি হিসেবে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রেডিও তেহরান বাংলা বিভাগের সিনিয়র সাংবাদিক মুহাম্মদ আশরাফুর রহমান এবং টেবমেড ট্যুরিজমের বাংলা বিভাগের প্রধান হাবিবুল্লাহ মনির।

সম্মেলনের অবকাশে কায়সার কাদের সেলিম এই প্রতিবেদককে জানান, ইরান বাংলাদেশের রোগীদের অন্যতম ডেস্টিনেশন হতে পারে কয়েকটি কারণে: এক. ইরান একটি মুসলিম দেশ এবং এখানে সব ধরনের হালাল খাবার পাওয়া যায়; দুই. ইরানিরা অতিথিপরায়ণ; তিন. বাংলাদেশি রোগীরা ইরানে যাতে ভাষাগত সমস্যায় না পড়েন, সেজন্য একজন বাংলাদেশিকে অনুবাদক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশি রোগীরা ইরানে এলে উন্নতমানের ও বিশ্বমানের সেবা পাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।  

ইরানের মেডিকেল ট্যুরিজমের বর্তমান অগ্রগতি সম্পর্কে সুপদেব সাহা জানান, ইরানের চিকিৎসাখাত প্রযুক্তিগতভাবে অনেক অগ্রসর। এখানকার চিকিৎসকরা বিশ্বের উন্নত দেশগুলো থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তাদের সঙ্গে আলাপকালে জানতে পেরেছি যে, তারা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতকে উন্নত করার জন্য সহযোগিতা করতে আগ্রহী।

ইরানের নেতৃস্থানীয় মেডিকেল ট্যুরিজম কোম্পানি টেবমেড-এর মাধ্যমে বেশকিছু বাংলাদেশি রোগী সম্প্রতি চিকিৎসা নিয়েছেন। কিডনি প্রতিস্থাপন, বন্ধাত্বরোগীর প্রজনন প্রযুক্তি আইভিএফ ও সারোগেসি, ক্যান্সার, প্লাস্টিক সার্জারি, হার্ট ও হাড়ের সমস্যার জন্য তারা ইরানে আসেন।

বাংলাদেশি কিডনি রোগীরা কেন ইরানে আসছেন জানতে চাইলে টেবমেড ট্যুরিজমের বাংলা বিভাগের প্রধান হাবিবুল্লাহ মনির জানান, ইরানে কিডনি দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে রক্তের সম্পর্ক থাকা বাধ্যতামূলক নয়। শুধুমাত্র জৈবিক মিল থাকলেই ট্রান্সপ্লান্টটি আইনগত ও চিকিৎসাগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়, যা ইরানকে আন্তর্জাতিক কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য অন্যতম নমনীয় ও সহজগম্য গন্তব্য করে তুলেছে। এছাড়া এখানে সাশ্রয়ী খরচে দক্ষ সার্জনের মাধ্যমে সরকার অনুমোদিত হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়। ভারত, থাইল্যান্ড কিংবা সিঙ্গাপুরের তুলনায় ইরানে চিকিৎসা ব্যয় অনেক কম বলে জানান তিনি।

বৈশ্বিক চিকিৎসা সহযোগিতার মঞ্চ

সম্মেলনে ইরান মেডিকেল সিস্টেম অর্গানাইজেশনের সভাপতি ডা. মোহাম্মদ রাইসজাদে বলেন, “আমাদের সংগঠনে ৪ লাখেরও বেশি সদস্য রয়েছে। ইরান মানবসম্পদে সমৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্য পর্যটনে হৃদরোগ, অঙ্গ প্রতিস্থাপন ও চক্ষু চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা অর্জন করেছে। ”

ইরানের স্বাস্থ্য পর্যটন সম্মেলনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী মোহসেনি বান্দপি জানান, সপ্তম জাতীয় উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রথমবারের মতো স্বাস্থ্য পর্যটনকে আলাদা অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইসলামি দেশগুলোর স্বাস্থ্য পর্যটন উন্নয়ন সংস্থার মহাসচিব মাজিদ জাঙ্গুয়ি বলেন, এ উদ্যোগ ইরান ও অন্যান্য দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য পর্যটনে এক বৃহৎ সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে।

এ বছরের আইপিএইচ সম্মেলনের মূল শ্লোগান ছিল— “বিশ্বে ইরানের চিকিৎসা সক্ষমতার ব্র্যান্ডিং”। এর মাধ্যমে ইরানের স্বাস্থ্য খাতকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শক্তিশালী ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন আয়োজকরা।

এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।