ঢাকা: স্বাস্থ্য খাতের নানা অসংগতি, নৈরাজ্য, সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট রোগীদের বিদেশমমুখী হতে বাধ্য করছে। আর এই অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও বিদেশমুখিতার জন্য দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)।
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টায় এবি পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্বাস্থ্য খাতের নৈরাজ্য ও লুটপাট বন্ধের দাবি জানিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের নেতারা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে একটি দেশের মোট বাজেটের ১৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হওয়ার কথা, যা বাংলাদেশে মাত্র ৫ শাতংশ। চরম অব্যবস্থাপনা এই খাতকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। হাসপাতালগুলোতে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে নেই চিকিৎসক বা নার্স, নেই কমিউনিটি হেল্থ ওয়ার্কার।
ডা. আব্দুল ওহাব মিনার বলেন, বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার মতে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ খাতগুলোর অন্যতম স্বাস্থ্য খাত। লুটপাট, নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনার কারণে দেশব্যাপী সুন্দর অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও ন্যূনতম চিকিৎসা সেবাও পাচ্ছে না সাধারণ জনগণ। আলোচিত পর্দা ও বালিশকাণ্ড, স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের গাড়ি চালকের হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়া, মন্ত্রীর নামে বেনামে সম্পদের পাহাড়, করোনাকালীন হাসপাতাল তৈরি ও টিকা কেনা নিয়ে চলেছে লুটের মহোৎসব।
দেশের স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে মন্তব্য করে ডা. আব্দুল ওহাব মিনার বলেন, সেবা দিতে গিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত চিকিৎসক ও নার্সরা প্রতিনিয়ত নাজেহাল হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষমতাসীনদেন হাতে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের অপেশাদারি আচরণ, পরীক্ষা নিরীক্ষা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি, সঠিক রোগ নির্ণয়ে অক্ষমতা, প্রাইভেট চেম্বারে অতিরিক্ত রোগী দেখা এবং স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়ে সরকারি কিছু জটিল নিয়ম কানুন দেশের মানুষকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে বাধ্য করছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা ও ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের সাবেক সিনিয়র অ্যাডভাইজার অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, কেন রোগ হয়, রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়ার উপায়, বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করা ও রোগহীন পরিবেশ কীভাবে তৈরি করা যায়, এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলাই এখন আমাদের বড় কাজ। নন কমিউনিকেবল ডিজিজ যেমন হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, ফুসফুস, লিভার ও কিডনি রোগে ২০০০ সালে মৃত্যুর হার ছিল ৪২.৬ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৬৬.৯ শতাংশে। গবেষণা থেকে আমরা জানতে পারি জনস্বাস্থ্যের পেছনে এক ডলার খরচ করলে এই সমস্ত জটিল রোগ থেকে ৬ ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব।
এবি পার্টির এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন ও আইন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শওকত আরমান বলেন, রাজনীতিবিদরা হচ্ছেন গণমানুষের প্রতিনিধি, যারা রাষ্ট্রের প্রতিটা বিষয় নিয়ে ভাববেন বা কথা বলবেন। সকল রাজনৈতিক দল যদি স্বাস্থ্য অধিকারের মতো জনগণের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে সোচ্চার হন, তাহলে সাধারণ মানুষ তার মৌলিক অধিকারগুলো ফিরে পাবে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু ও যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৪
ইএসএস/এমজেএফ