ঢাকা: স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
এছাড়া এবারের বাজেটে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় ২ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। গত অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ ছিল ৩৮ হাজার ৫১ কোটি টাকা যা প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ ছিল। চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্যের বরাদ্দ বাড়ছে ৩ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের তুলনায় এবার বরাদ্দ প্রস্তাব বেড়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বেশি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিবারের ন্যায় এবারও স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ গতানুগতিক। বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ চিকিৎসা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়গুলোকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বাজেটে পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবার যে রূপরেখা তার কোনো প্রস্তাব রাখা হয়নি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য খাতে অল্পমাত্রায় বরাদ্দ বাড়ানো হলেও চলতি বাজেটেও তেমন কোনো গুরুত্ব পায়নি স্বাস্থ্য খাত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলে আসলেও সেটাকে মানা হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মেনে ১৫ শতাংশ না হলেও অন্তত আট থেকে ১০ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া যেতো স্বাস্থ্যখাতে। গতানুগতিক ভাবনা থেকে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তাতে স্বাস্থ্যখাতের কোনো পরিবর্তন আশা করা যায় না।
এবারের স্বাস্থ্য খাতের বাজেট বিষয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ডা. লেলিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, গত ১০-১৫ বছর ধরে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ মোট বরাদ্দের পাঁচ শতাংশের আশপাশে। এবারে পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ শতাংশ অনুযায়ী বাজেটের খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি।
এ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, স্বাস্থ্যখাতে যে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেটাকে কাজে লাগানোর মতো জন্য মেধা এবং জনবল প্রয়োজন তা স্বাস্থ্য বিভাগের নেই। এবারের বাজেটেও এখান থেকে উত্তরণের কোনো প্রস্তাব রাখা হয়নি। এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে গবেষণায় জন্য বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। গতবারের বরাদ্দের পুরো টাকাটাই ফেরত গেছে। কারণ টাকা দিয়ে গবেষণা হয় না। গবেষণার জন্য একটা পদ্ধতি দাড় করানো প্রয়োজন, যা করা হয়নি। গবেষণার বৃদ্ধির কোনো রূপরেখা আমরা বাজেটে দেখিনি। থোক বরাদ্দ যে দুই হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে, এটা ঠিক আছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বারবার যে কথা বলি, স্বাস্থ্য সেবাখাত শুধু চিকিৎসা নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। প্রতিরোধ, পুনর্বাসন এবং উপশমমূলক স্বাস্থ্যসেবা, হেলথ প্রমোশন এসব বিষয়কে এখনো উন্নয়ন করা হয়নি। এবারের বাজেটেও পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য যে প্রস্তাব সেগুলো রাখা হয়নি। চিকিৎসা ভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আমরা দেখতে পাই কিছু বিল্ডিং ঠিক করা হবে, কিছু হাসপাতাল তৈরি করা হবে, অর্থাৎ সেই কেনাকাটা এবং বিল্ডিং তৈরি যেখানে দুর্নীতি প্রধান উৎস থাকে। অতএব এবারের স্বাস্থ্য বাজেট নিয়েও আমাদের আশা প্রত্যাশার ন্যূনতম জায়গা তৈরি হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০২৪
আরকেআর/জেএইচ