নোয়াখালী: ধীরগতিতে হলেও নোয়াখালীতে কমছে বন্যার পানি, অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা দিয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক-নার্সরা। ওষুধের সংকটের পাশাপাশি রয়েছে ওষুধ না দেওয়ার অভিযোগও।
জানা যায়, নোয়াখালীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ৮টি উপজেলায় এখনো পানিবন্দি রয়েছে ১৪ লাখ ৪৫ হাজার মানুষ। বন্যার পানি খুবই ধীর গতিতে নামছে। এরই মধ্যে দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া, কলোরাসহ পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে। এতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। ওষুধসহ নার্স ও চিকিৎসক সংকটও রয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত ডায়রিয়ায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায়, নোয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ২০ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে ২৬৬ জন রোগী। অন্য ওয়ার্ডগুলোতেও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। শয্যা, ওষুধ, নার্স ও চিকিৎসক সংকটে রোগীদের অবস্থা কাহিল। চাপ সামাল দিতে চিকিৎসাকর্মীদের ত্রাহি অবস্থা। রোগীর চাপে ঠাঁই মিলছে না হাসপাতালে। কেউ বারান্দায়, মেঝেতে, আবার কাউকে সেবা নিতে দেখা গেছে সিঁড়িতে বসে। এর সঙ্গে বাড়তি বিড়ম্বনা তৈরি হয়েছে নোংরা পরিবেশ।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রে তারা কোনো ডাক্তারের দেখা পান না। তখন নার্সই তাদের একমাত্র ভরসা। এ ছাড়াও অনেক সময় চিকিৎসক তো দূরের কথা, কোনো নার্সকেও তারা ডেকে পান না। হাসপাতাল থেকে তেমন কোনো ওষুধও সরবরাহ করা হয় না। নার্সরা স্লিপ ধরিয়ে দিচ্ছেন, তা দেখে বাইরে থেকে ওষুধ, স্যালাইন, ক্যানুলাসহ যাবতীয় সামগ্রী কিনে আনতে হচ্ছে। নামেই শুধু সরকারি হাসপাতাল। সবই কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। স্যালাইন থাকা সত্ত্বেও রোগীদের স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে না।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজীম জানান, গত দুই সপ্তাহের বন্যায় নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১২০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া বাইরে আর কারও মৃত্যু হয়েছে কিনা তা আমাদের রেকর্ডে নেই।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হেলাল উদ্দিন রোগীর স্বজনদের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, বন্যার মতো একটি ভয়াবহ দুর্যোগে কয়েকগুণ বেশি রোগীর চাপ। এরপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টায় রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। অস্বীকার করবো না জনবল ও ওষুধের সংকট আছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
বন্যার এই দুর্যোগকালীন সময়ে নোয়াখালীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পর্যাপ্ত জরুরি ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৪
আরএ