গোপালগঞ্জ: প্রধানমন্ত্রীর খোদ নিজের জেলার সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় সংকট আর চরম দুর্নীতির খবর পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্যসেবার চরম বিপর্যয়ের কারণে গোপালগঞ্জ স্বাস্থ্যবিভাগকে ‘দুর্নীতির খনি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এলাকাবাসী।
চিকিৎসক সংকট, অনিয়ম, দুর্নীতি, দালালদের দৌরাত্ম্যের কারণে গোপালগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বলা চলে, প্রায় সব উপজেলাতেই ৩ ভাগের ১ ভাগও চিকিৎসক নেই।
চিকিৎসক সংকটের কারণে দূর-দূরান্ত থেকে আগত রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং জেলা সরকারি হাসপাতালে এসে কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না। এতে প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোর দিকে ঝুঁকছেন রোগীরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মস্থান, স্বাস্থ্যবিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, এমপি ও স্বাস্থ্যউপদেষ্টা ডা. মোদাচ্ছের আলীর নিজ জেলা হওয়ার পরও এসব দেখার কেউ নেই।
সংকট আর সংকট
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত ‘গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চলছে ডেপুটেশন কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে। ২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫শ কোটি টাকা ব্যয়ে গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের বাসভবনে মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। এনাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ও কমিউনিটি মেডিসিনসহ ৪টি বিভাগ খোলা হয়েছে।
মেডিকেল কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ডা. এম.এম. মঈনউদ্দীন আহমেদ। এনাটমি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ডা. সামস্-ই-তাব্রীজ ও কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মনির-উল-ইসলাম কাজ করছেন।
একই সঙ্গে ওই সব বিভাগে প্রভাষক হিসেবে ১২ জন চিকিৎসক কাজ করছেন। এছাড়া বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ডেপুটেশনে ১৭ জন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী কাজ করছেন। সিভিল সার্জন অফিস ও হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে চলছে শিক্ষার্থীদের ক্লাস।
শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. এম.এম. মঈনউদ্দীন আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, মেডিকেল কলেজের জমি জেলা প্রশাসন তাদের বুঝিয়ে দিয়েছে। খুব শিগগিরই মাটি ভরাট ও মেডিকেল কলেজের অবকাঠামো তৈরির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে। তিনি আরও জানান, মেডিকেল কলেজে জনবল কাঠামো তৈরির কাজ চলছে।
অপারেশন থিয়েটার:
গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আন্তঃবিভাগের কার্যক্রম চিকিৎসক সংকটে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হলেও তারা আসেন না। কেউ অনিচ্ছা সত্ত্বে যোগদান করলেও সপ্তাহে ২/১ দিন আসেন । বাকি সময় তারা ঢাকা অথবা বিভাগীয় শহরগুলোতে প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে কাজ করেন। এনেসথেসিয়া চিকিৎসক না থাকার অজুহাতে অত্যাধুনিক একাধিক অপারেশন থিয়েটর থাকার পরও কোনো মেজর অপারেশন হয় না এ হাসপাতালটিতে।
এনেসথেসিয়া ব্যতীত ছোট-খাটো কিছু অপারেশন হয়। ফলে, সার্জারি, গাইনি ও অর্থোপেডিক ওয়ার্ডের বেশির ভাগ সিট ফাঁকা পড়ে থাকে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গর্ভবতী ও প্রসূতি বিভাগ:
হাসপাতালটির সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিভাগ হচ্ছে, গর্ভবতী ও প্রসূতি বিভাগ। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার পরও গত আগস্ট মাসে এ বিভাগে মাত্র ২৭টি সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে। একই সময়ে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ৩৬ জন গর্ভবতী নারীর। মৃত বাচ্চা হয়েছে ৩টি। এএনসি হয়েছে ৮৪ জন, পিএনসি হয়েছে ১৩ জন, যা শহরের যে কোনোটি একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের চেয়েও কম।
এ বিভাগে ইউনিসেফ পরিচালিত এমএনসিএস প্রজেক্টের আওতায় অসহায় ও দুঃস্থ গর্ভবর্তী ও প্রসূতি মা এবং শিশুদের বিনা পয়সায় সেবা দেওয়া হয়। তাদের নিজস্ব ২ জন চিকিৎসক ও একাধিক নার্স রয়েছেন। প্রজেক্টের আওতায় জেলার ৪টি উপজেলা গোপালগঞ্জ সদর, টুঙ্গিপাড়া, কাশিয়ানী ও মুকসুদপুরে তাদের কার্যক্রম রয়েছে।
ওই সব উপজেলার প্রতি ১ হাজার ৫শ থেকে ২ হাজার জনগোষ্ঠীর জন্য তাদের এক একজন নারী কর্মী রয়েছেন। তাদের মাধ্যমে গর্ভবতী নারীদের এএনসি ও নিরাপদ প্রসবের জন্য সরকারি নিকটস্থ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রিফারেল সিস্টেম রয়েছে। এত কিছুসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও একটি সরকারি ২৫০ শয্যার হাসপাতালের গাইনি বিভাগের এ করুণ চিত্র সবাইকে অবাক করে।
এছাড়া এখানে ‘শিশুবান্ধব’ হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ‘নারীবান্ধব’ হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালিত হয় না বলে জানান গাইনি ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স স্নেহলতা বাড়ৈ।
তিনি জানান, গত আগস্ট মাসে ইউনিসেফের এমএনসিএস কার্যক্রমের আওতায় মাত্র ৪ জন গর্ভবতী ও প্রসূতি নারীকে সামান্য কিছু ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। তাদের সব ওষুধ দেওয়ার কথা থাকলেও ওষুধ না থাকায় তা দেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ সময় তিনি আরও জানান, কয়েকদিন আগে স্বপ্না খাতুন (২০) নামে এক হত দরিদ্র চাতাল শ্রমিকের স্ত্রীর সিরাজিয়ান হয়েছে। তার স্বামী তাকে ফেলে চলে গেছেন। হাসপাতাল থেকে তার সব ওষুধ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই, হাসপাতালের সমাজ সেবা অফিস থেকে তার জন্য বাকি ওষুধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতালটিতে আগত কিশোর-কিশোরী ও সক্ষম দম্পতিদের মধ্যে প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম পরিচালিত হয় না।
তবে, গোপালগঞ্জ পৌরসভার মাধ্যমে প্রতিদিন (হাসপাতাল খোলা থাকার দিন) শিশু ও নারীদের ইপিআই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
হাসপাতালটিতে একটি পৃথক ডায়রিয়া ওয়ার্ড থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। তাই, তাদের ডায়রিয়া রোগীর চাপ বাড়লে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়।
এসেনথেসিয়া কনসালট্যান্টের সংকট:
তবে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. মো. মাসুদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, এসেনথেসিয়া কনসালট্যান্ট না থাকায় খুব মেজর অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে মেজর ও মাইনর অপারেশন হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, এখানে কনসালট্যান্টরা আসতে চান না। কারণ, এখানে তাদের প্র্যাকটিস নেই। এছাড়া প্র্যাকটিসের পরিবেশও ভালো না। তাই, অনেকে আসার পরে আবার চলে যান। সম্প্রতি, এসেনথেসিয়া কনসালট্যান্ট পোস্টিং হয়েছেন। তিনি কাজে যোগ দিলে এ সমস্যা অনেকাংশে কেটে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্যাথলজি বিভাগ:
গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে অত্যাধুনিক প্যাথলজি থাকলেও রোগীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান না বলে অভিযোগ রয়েছে। এখানে সম্পূর্ণ হাতের স্পর্শ ছাড়া প্রায় সব ধরনের পরীক্ষা হয়ে থাকে। মেশিনের সাহায্যে পরীক্ষার প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এক কথায় নির্ভুল পরীক্ষা-নিরীক্ষার একমাত্র হাসপাতাল প্যাথলজিতে হয়ে থাকে বলে দাবি করেন ল্যাব টেনিশিয়ান বিরাজ মোহন বাড়ৈ।
তবে, গত আগস্ট মাসের আয় দেখলে কেউই তার এ যুক্তি মানবেন না। গত আগস্ট মাসে এ বিভাগ মাত্র ৬০ হাজার টাকা আয় করেছে, যা খুবই নগন্য।
তবে, ল্যাব টেনিশিয়ান বিরাজ মোহন বাড়ৈ বলেন, ‘হাসপাতালের প্রতিটি চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে ২/৩ জন করে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের দালাল থাকেন। তারা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সহায়তায় রোগীদের প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে নিয়ে যান। এর মাধ্যমে চিকিৎসকরা মোটা অংকের কমিশন পান। ’
তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালের প্যাথলজিস্ট পদটি শূন্য। একজন প্যাথলজিস্ট নিয়োগ দিলে এবং হাসপাতাল দালাল মুক্ত করতে পারলে এখান থেকে মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। ’
ডায়াগনস্টিক বিভাগ:
প্রায় একই অবস্থা রেডিওলজি বিভাগের। এ বিভাগে একজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট ও একজন রেডিওলজিস্ট রয়েছেন। তারপরও গত আগস্ট মাসে আলট্রাসনোগ্রাম থেকে ৪৬ হাজার ২শ ৫০ টাকা, ইসিজি থেকে ৭ হাজার ৬শ ৮০ টাকা ও এক্সরে বিভাগ থেকে ৩৬ হাজার ৩শ ৫৫ টাকা আয় হয়েছে, যা তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত কম। শহরের অনেক ছোট একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মাসে এরও চেয়ে বেশি আয় হয়।
এক্সরে বিভাগ:
গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের এক্সরে টেকনিশিয়ান মশিউর রহমান স্বীকার করে বলেছেন, ‘বর্তমানে বুকের এক্সরে করার ১৫/১২ সাইজের ফিল্ম নেই। আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনের কালি ও কাগজ শেষ হয়ে গেছে। একটি প্রিন্টার দিয়ে কাজ চলছে। এটি শেষ হয়ে গেলে আর কাজ করা সম্ভব হবে না।
তিনি আরও জানান, বহির্বিভাগের রোগী এখানে কম আসেন। তারা দালালের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চলে যান। এতে ওই ডায়াগনস্টিক ও চিকিৎসক উভয় লাভবান হন। তাই, সরকারি হাসপাতালগুলো দালাল মুক্ত করতে পারলে এবং বহির্বিভাগের চিকিৎসকরা আন্তরিক হলে এ বিভাগ থেকে কাঙ্খিত আয় করা সম্ভব হবে।
রেডিওলজিস্ট জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. রাজিবুল বারী বলেন, ‘সচেতন রোগীরা এখানে আসেন। আমরা খুব যত্নের সঙ্গে তাদের নির্ভুল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার চেষ্টা করি। আর এখানে যে সব উন্নতমানের যন্ত্রপাতি ও অভিজ্ঞ লোক আছেন, তা অন্য কোথাও তা নেই। শুধুমাত্র একটি সিআর মেশিন থাকলে এক্সরেগুলোর ডিজিটাল পদ্ধতিতে করা সম্ভব হতো। তাহলে এ অজুহাতে চিকিৎসকরা বাইরে রোগী পাঠাতে পারতেন না। ’
ইএনটি বিভাগ:
হাসপাতালে ইএনটি বিভাগে একজন নিয়মিত সিনিয়র কনসালট্যান্ট থাকলেও জুনিয়র কনসালট্যান্ট, কনসালট্যান্ট (এনেসথেসিয়া) না থাকা ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকার অজুহাতে নাক-কান-গলার মেজর বা মাইনর কোনো অপারেশনই হয় না। এ বিভাগ থেকে রোগীরা শুধুমাত্র বহির্বিভাগের সুযোগ-সুবিধা পান। দন্ত বিভাগেরও একই অবস্থা।
সিনিয়র কনসালট্যান্ট ইএনটি ডা. সিরাজুল ইসলাম মাহফুজ বলেন, ‘এসেনথেসিয়া বা এনেসথেটিস্ট ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কোনো অপারেশন করতে পারছি না। ’
তবে, তিনি জানান, মেডিকেল কলেজের চিকিৎসা কার্যক্রম চালু হলে এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পাওয়া গেলে হাসপাতালেই অপারেশন করবেন।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. অসিত কুমার মল্লিক বলেন, ‘শূন্যপদ পূরণের জন্য সিভিল সার্জনকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই এনেসথেশিয়া কসসালট্যান্ট বা এনেসথেটিস্ট পোস্টিং হবে। ‘
সমাজ সেবা অধিদপ্তর:
গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে সমাজ সেবার একটি ইউনিট চালু আছে। এখান থেকে হতদরিদ্র রোগীকে বিনা পয়সায় ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। গত আগস্ট মাসে ৯ জন রোগীকে আনুমানিক ৯ হাজার টাকার ওষুধ কিনে দেওয়া হয়েছে বলে অফিস সূত্রে জানা গেছে।
হাসাপাতালের সমাজ সেবা অফিসারের দায়িত্ব থাকা এমএম ওয়াহিদুজ্জামান জানিয়েছেন, প্রতিবছর সমাজকল্যাণ পরিষদ থেকে ১ লাখ টাকা পাওয়া যায়। এছাড়া গত বছর লোকাল ফান্ড বাবদ ১ লাখ ২১ হাজার ১শ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সমাজকল্যাণ পরিষদ থেকে অনুদান বৃদ্ধি করলে আরও বেশি সংখ্যক দরিদ্র রোগীকে সহযোগিতা করা সম্ভব। ’
জরুরি বিভাগ:
হাসপাতালে নামেমাত্র একটি জরুরি বিভাগ রয়েছে। এ বিভাগে মাত্র একজন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। ইউনিয়ন সাব-সেন্টার থেকে ৫/৬ জন মেডিকেল অফিসার এনে জরুরি বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এ বিভাগের মাধ্যমে শুধুমাত্র রোগীদের ভর্তি ও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। মুমূর্ষু রোগী আসলে তাদের ওয়ার্ডে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এখানে মুমূর্ষু রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কোনো আলাদা সরঞ্জাম নেই।
জরুরি বিভাগে ডেপুটেশনে কর্মরত ডা. ফেরদৌস ওয়াহিদ জানিয়েছেন, জরুরি বিভাগকে আধুনিক করতে পারলে রোগীরা বেশি উপকৃত হবেন। এ বিষয়টি নিয়ে সরকারকে এখনই ভাবতে হবে।
হাসপাতালে চিকিৎসকের সংখ্যা:
গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে হাসপাতালে ৬১ জনের মধ্যে চিকিৎসক আছেন ৩৩ জন। ২৮টি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে সহকারী পরিচালকের পদটি জন্মলগ্ন থেকে শূন্য রয়েছে।
এছাড়া সিনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি), সিনিয়র কনসালট্যান্ট (এনেসথেসিয়া), সিনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি), সিনিয়র কনসালট্যান্ট (অর্থোপেডিক), সিনিয়র কনসালট্যান্ট (চর্ম ও যৌন), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (ডেন্টাল), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (এনেসথেসিয়া), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (ইএটি), এনেসথেটিস্ট ৩টি, মেডিকেল অফিসার ১টি, বিষয় ভিত্তি মেডিকেল অফিসার ২টি, ইএমও ৩টি, সহকারী রেজিস্ট্রার/ সার্জনের ১০টি পদ শূন্য রয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা:
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ইউএইচ অ্যান্ড এফপিও চৌধুরী শফিকুল আলম জানিয়েছেন, সদর উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের সাব-সেন্টারে একজন করে সহকারী সার্জনের পদ রয়েছে। এর বেশির ভাগ সেন্টারে ডাক্তার পোস্টিং আছেন। তবে, সাব-সেন্টারের বেশির ভাগ চিকিৎসক গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাজ করছেন। এতে সংশ্লিষ্ট জনগণের চিকিৎসা সেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে।
কাশিয়ানী উপজেলা:
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ইউএইচ অ্যান্ড এফপিও ডা. আবুল খায়ের মো. রফিকুল হায়দার জানিয়েছেন, ২৩ জন চিকিৎসকের মধ্যে ১১ জন চিকিৎসক আছেন। এর মধ্যে ৪ জন গোপালগঞ্জ ডেপুটেশনে কাজ করেন। মাত্র ৭ জন চিকিৎসক দিয়ে তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চালাতে হচ্ছে। এই ৭ জনের মধ্যে আবার ১ জন সাব-সেন্টারে কাজ করেন।
তিনি জানান, প্রায় ৩ লাখ অধ্যুষিত একটি উপজেলা এত কম চিকিৎসক দিয়ে চালানো সম্ভব না। তার পরও জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ইউএইচ অ্যান্ড এফপিও ডা. অসিত রঞ্জন দাস জানিয়েছেন, তার উপজেলার ২৯ জন চিকিৎসের মধ্যে মাত্র ৮ জন কর্মরত আছেন। এর মধ্যে ২ জন সাব-সেন্টারে দায়িত্ব পালন করেন। বাকি ৬ জনকে দিয়ে তাকে ৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল চালাতে হচ্ছে, যা একেবারেই অসম্ভব।
তিনি আরও বলেন, এখানে কোনো কনসালট্যান্ট নেই। ডেন্টাল সার্জন না থাকায় তাকে রীতিমতো ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স:
এছাড়া জেলার কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। ইউনিয়ন সাব-সেন্টার থেকে ডেপুটেশনে চিকিৎসক এনে চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট উপজেলার ইউএইচ অ্যান্ড এফপিও জানান।
চিকিৎসক সংকটের কথা তারা সিভিল সার্জনকে জানিয়েছেন বলে জানান তিনি।
সিভিল সার্জন ডা. মুহ. আছাদউজ্জামান বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিভাগে চিকিৎসক আছে। শূন্যপদে চিকিৎসক পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শূন্যপদ পূরণ হলে সমস্যা অনেকাংশে মিটে যাবে। আপাতত হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মুনির আহমেদকে এনেসথেটিস্ট-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি ডিপ্লোমা করেছেন। কিন্তু পাস করতে পারেন নি। তাকে দিয়ে ঠেকা কাজ করানোর জন্য বলা হয়েছে। `
বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১২
সম্পাদনা: রাফিয়া আরজু শিউলী ও শাফিক নেওয়াজ সোহান, নিউজরুম এডিটর, আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর
বুধবার পড়ুন- দুর্নীতির খনি গোপালগঞ্জের স্বাস্থ্য বিভাগ