ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বাংলাদেশি গবেষকদের উদ্ভাবন

চিকিৎসক ছাড়াই শিশুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা

ডেস্ক রিপোর্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১২
চিকিৎসক ছাড়াই শিশুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা

ঢাকা: প্রত্যন্ত অঞ্চল যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল নয়, কাছে কোনো হসপিটাল বা ডাক্তার নেই— এরকম এলাকায় আপনার বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়লো। কিন্তু ঠিক কী হয়েছে বুঝতে পারছেন না।

এ ধরনের পরিস্থিতির কথা চিন্তা করেই তৈরি করা হয়েছে ডাক্তার ছাড়াই প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা পদ্ধতি।  

জনগণকে সেবা দিতে সেলফোননির্ভর এ ব্যবস্থা তৈরিতে বাংলাদেশি দুই তরুণ ডা. আতিকুর রহমান ও বাহারুল ইসলাম গবেষক হিসাবে কাজ করেছেন জেমস কুক ইউনিভার্সিটি সিংগাপুর ক্যাম্পাসে। তাদের তৈরি সিস্টেম ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে উন্নয়নশীল দেশের স্বাস্থ্য সেক্টরে।

স্বল্পমূল্যের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশ বিশেষ করে আফ্রিকা এবং এশিয়ার অনেক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের মাঝে কীভাবে এ স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়া যায় সেই চিন্তা থেকে এক বছর নিরলস গবেষণার পর এ সাফল্য এসেছে। বাংলাদেশি দুই গবেষক আতিকুর ও বাহারুল এমন একটা পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন যার মাধ্যমে ডাক্তার ছাড়াই এক থেকে আট বছর বয়সের বাচ্চাদের শ্বাস কষ্টজনিত রোগ যেমন সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদির প্রথমিক অবস্থা জানা যাবে এবং সে মোতাবেক চিকি‍ৎসাও দেওয়া ‍যাবে।    

এ কাজ করতে গবেষকরা উন্নয়নশীল দেশ যেমন ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২ হাজার বাচ্চার শ্বাসকষ্ট জনিত বিভিন্ন রোগের তথ্য-উপাত্ত যেমন বাচ্চার নিঃশ্বাসের শব্দ, রোগের লক্ষণ, চিকিৎসকের বক্তব্য, পিতামাতার বক্তব্য ইত্যাদি সংগ্রহ করেছেন। তারা বাংলাদেশের ঢাকা (আজিমপুর, মিরপুর), নরসিংদি ও ভোলা জেলার এবং ইন্ডিয়ার তামিলনাডু ও দিল্লি থেকে এসব ডাটা সংগ্রহ করেছেন।    
    
এ প্রসংগে গবেষক ডা. আতিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, “আমি মনে করি এই সিস্টেম উন্নয়নশীল দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জন্য একটা আশীর্বাদ স্বরূপ। এক থেকে আট বছর বয়সের বাচ্চাদের প্রায় ১২০০ ফিচার ও বিভিন্ন রোগের উপাত্ত  নিয়ে আমরা এই সিস্টেমটা ডেভেলপ করেছি। ”

সম্প্রতি বাংলাদেশি দুই গবেষক তাদের ডেভেলপকৃত সিস্টেমটি বাংলাদেশের ভোলা জেলার তজুমুদ্দিন থানার চাপড়ী গ্রামে প্রায় ৫০টি পরিবারের ওপর সফলভাবে প্রয়োগ করেছেন। প্রত্যেক পরিবারকে একটি করে  মোবাইল ফোন প্রদান করে তাদের সিস্টেমের কার্যকারিতা পরীক্ষা করছেন। ওই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পিতা-মাতা তাদের বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা জানতে বাচ্চার নিঃশ্বাসের শব্দ রেকর্ড করে মাল্টিমিডিয়া মেসেজ (এমএমএস) করে পাঠালে সাথে সাথে তারা ফিরতি এসএমএসের মাধ্যমে জানতে পারেন তাদের বাচ্চার প্রকৃত স্বাস্থ্যগত অবস্থা কি। এখন পর্যন্ত এই সিস্টেমের ফলাফল দেখে ৮ জন বাচ্চার পিতা-মাতা তাদের বাচ্চাকে নিয়ে চিকি‍ৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের ভেতর থেকে ৭ জন বাচ্চার রেস্পাইরেটরি বা শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ আছে বলে চিকিৎসক নিশ্চিত করেছেন। ফলে ঐ শিশুরা এই সিস্টেমের মাধ্যমে জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেল।  

এ সম্পর্কে গবেষক বাহারুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশের কম বেশী সবাই মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। সুতরাং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কিভাবে তাদের স্বংক্রিয়ভাবে স্বাস্থ্য সেবা দেয়া যায় এই চিন্তা থেকে এই পদ্ধতি তৈরিতে আগ্রহী হই আমরা। ”    

প্রজেক্টের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক ড. ইনসু সং বলেন, “This mobile phone based health technology is for children that will save many children’s life in the world.”

আপনার বাচ্চার শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ আছে কিনা বা থাকলে তার অবস্থা কোন পর্যায়ে তা মুহূর্তেই জানতে পারেন এ সিস্টেমের মাধ্যমে। এর জন্য আপনাকে শুধু আপনার মোবাইল থেকে আপনার বাচ্চার নিঃশ্বাসের শ্বব্দ রেকর্ড করে এমএমএস করতে হবে। সাথে সাথে আপনি আপনার বাচ্চার অবস্থার ওপর একটা ফিরতি মেসেজ পাবেন। ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমেও এই সেবা পাওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে নিঃশ্বাস রেকর্ড করে অনলাইনে আপলোড করলে সাথে সাথে জেনে যাবেন আপনার বাচ্চার রোগের প্রকৃতি ও ধরণ।    

জনহিতৈষী এ প্রজেক্টের অর্থায়ন করছে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন (মাইক্রোসফট) এবং সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে রয়েছেন জেমস কুক ইউনিভার্সিটি সিংগাপুরের ড. ইনসু সং।

ড. আতিকুর রহমান খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করে সেখানেই ৭ বছর অধ্যাপনা করেছেন পরে ন্যানইয়াং টেকনোলোজিক্যাল ইউনিভার্সিটি সিংগাপুর থেকে পিএইচডি করেছেন। তার গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলায়।

বাহারুল ইসলাম রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারে বিএসসি এবং ন্যানইয়াং টেকনোলোজিক্যাল ইউনিভার্সিটি সিংগাপুর থেকে মাস্টার্স করেছেন। তার গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলার মোহাম্মাদপুর থানার রো-নগর গ্রামে।

বাচ্চার নিঃশ্বাস আপলোড করতে এই লিংকে যেতে  http://www.info.kopo.com/breathing-sound-analyser  হবে অথবা এমএমএস করতে পারেন + ৬৫ ৯১০৮৮৯৯২ নাম্বারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৮ ঘণ্টা, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১২
সম্পাদনা: আহ্‌সান কবীর, আউটপুট এডিটর [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।