ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

চাঁদপুরে ‘কথিত ডাক্তার’কে দিয়ে সিজার, প্রাণ গেল নবজাতকের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০২৪
চাঁদপুরে ‘কথিত ডাক্তার’কে দিয়ে সিজার, প্রাণ গেল নবজাতকের

চাঁদপুর: ক্লিনিকের কোনো ধরনের কাগজপত্র নবায়ন নেই। নামেমাত্র চিকিৎসক একজন।

এদিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অবস্থা খুবই নাজুক। এরপরেও রোগী ভর্তি নিয়ে করা হচ্ছে অপারেশন। এমন ক্লিনিকের সিজার করে মাকে বাঁচানো গেলেও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। ডিগ্রি ছাড়া ‘কথিত এক চিকিৎসক’কে দিয়ে সিজার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

রোববার (৮ ডিসেম্বর) সকালে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ নারায়ণপুর পূর্ব বাজারে ‘নারায়ণপুর জেনারেল হাসপাতাল (প্রা.) অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার’ নামক এক ক্লিনিকে এই ঘটনা ঘটে।

স্ত্রী লিমার (১৯) প্রসব বেদনা উঠলে উপজেলার খিদিরপুর গ্রামের রোস্তম মোল্লা বাড়ির অটোরিকশাচালক মো. রাসেল নিয়ে আসেন এই হাসপাতালে। প্রথমে আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়। প্রথমে নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে বলা হয় বাচ্চা পেটেই মৃত। অভিভাবকের স্বাক্ষর জাল করে ডিগ্রি ছাড়া বিল্লাল শেখ নামে কথিত এক চিকিৎসককে দিয়ে সিজার করার পর পাওয়া যায় মৃত বাচ্চা। এরপর শুরু হয় রোগীর অভিভাবকদের চিৎকার।

গৃহবধূ লিমার শাশুড়ি ফাতেমা বেগম বলেন, আমার ছেলের এই প্রথম বাচ্চা। লিমার নিয়মিত চেকআপ করা হয়। হঠাৎ গত রাতে প্রসব ব্যথা হওয়ার পর যোগাযোগ করলে হাসপাতালের নার্স শেফালি বেগম প্রথমে বাড়িতে গিয়ে ডেলিভারি করার চেষ্টা করেন। না পেরে এরপর তিনি আমাদেরকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

রাসেলের বড় বোন নুরজাহান বেগম বলেন, এই হাসপাতালে সিজার করার জন্য ভালো চিকিৎসক আছে কি না জানতে চাইলে তারা চিকিৎসক আছে বলে জানায়। কিন্তু ডেলিভারির আগে ও পরের তাদের কার্যক্রম দেখে বুঝতে পারি পুরো হাসপাতালেই অব্যবস্থাপনা।

মৃত নবজাতকের বাবা মো. রাসেল বলেন, কোনোভাবেই বুঝতে পারিনি এই হাসপাতালের এমন পরিস্থিতি। হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার কারণেই অপচিকিৎসার শিকার হয়েছি।

নারায়ণপুর জেনারেল হাসপাতাল (প্রা.) অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আল-আমিনের কাছে সিজার করা চিকিৎসকের নাম ও পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। তিনি কোনো তথ্য দিতে পারেননি এবং হাসপাতালে ওই চিকিৎসকের কোনো তথ্য সংরক্ষণও নেই।  

অনেক জিজ্ঞাসাবাদের পর ‘বিল্লাল ভাই’ নামে একজন চিকিৎসকের কথা বলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আল-আমিন।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মোস্তফা ইমন চৌধুরী বলেন, ভোরে এই রোগী নিয়ে আসার পর আমি নিজেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু যিনি এসে সিজার করেছেন তাকে এর আগে কোনোদিন দেখিনি। হাসপাতালের এমডি তাকে ফোনে ডেকে এনেছেন।

মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মহিব উল্লাহ সৌরভ বলেন, ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর হাসপাতালের কাগজপত্র নবায়ন না করা থাকলে এখনো করার জন্য সময় আছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০২৪
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।