ঢাকা, শুক্রবার, ৭ আষাঢ় ১৪৩২, ২০ জুন ২০২৫, ২৩ জিলহজ ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

জেনারেল সার্জারি: জীবনের জটিল মুহূর্তে নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা

ডা. মো. সুরমান আলী  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:৫২, জুন ১৯, ২০২৫
জেনারেল সার্জারি: জীবনের জটিল মুহূর্তে নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা

বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থায় জেনারেল সার্জারি একটি অপরিহার্য শাখা, যা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জীবন রক্ষায় ভূমিকা রাখছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৩৫ কোটিরও বেশি সার্জারি সম্পন্ন হয়, যার মধ্যে একটি বড় অংশই জেনারেল সার্জারির আওতায় পড়ে।

শুধু বাংলাদেশেই প্রতিবছর প্রায় ১৫-২০ লক্ষ মানুষ বিভিন্ন ধরনের অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ করেন, যাদের মধ্যে অ্যাপেন্ডিসাইটিস, গলব্লাডার স্টোন, পাইলস, হারনিয়া ও অন্ত্রের সমস্যাজনিত সার্জারিই বেশি হয়ে থাকে।

সার্জারি নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে এখনো নানা ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে, যেমন; ‘অপারেশন মানেই বড় ঝুঁকি’ বা ‘বার্ধক্যে সার্জারি করা ঠিক নয়’। অথচ চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি, আধুনিক অ্যানেস্থেশিয়া ব্যবস্থাপনা ও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি এখন সার্জারিকে আগের চেয়ে অনেক নিরাপদ করে তুলেছে।

এই প্রেক্ষাপটে মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারির গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারিতে ইনফেকশনের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসে এবং রোগী সাধারণত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান, যেখানে ওপেন সার্জারিতে সময়টা হয় অনেক বেশি।  

এভারকেয়ার হসপিটালস বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অন্যতম নির্ভরযোগ্য একটি নাম, যেখানে আন্তর্জাতিক মানের যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষিত সার্জনদের মাধ্যমে গলব্লাডার, অ্যাপেন্ডিক্স, কোলন, রেক্টাল, হারনিয়া ইত্যাদির সার্জারিসহ বিভিন্ন অপারেশন আধুনিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে।

গ্রামীণ ও শহুরে স্বাস্থ্যসেবার ব্যবধানও পরিসংখ্যান দ্বারা স্পষ্ট। বাংলাদেশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ গ্রামে বসবাস করেন। কিন্তু অধিকাংশ আধুনিক সার্জিক্যাল সুবিধা কেন্দ্রীভূত রয়েছে শহরাঞ্চলে। ফলে অনেক গ্রামবাসী রোগ জটিল হওয়ার আগ-পর্যন্ত চিকিৎসা পান না। এই ব্যবধান দূর করতে টেলিমেডিসিন, মোবাইল সার্জিক্যাল ক্যাম্প এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পোস্ট-অপারেটিভ কেয়ার বা অপারেশনের পরবর্তী পরিচর্যায়ও তথ্য ও গবেষণা আমাদের একটি স্পষ্ট চিত্র দেয়। উপযুক্ত ফিজিওথেরাপি এবং পুষ্টিকর খাদ্য অনুসরণ না করলে জটিলতা ২০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এই দিকটি আমাদের দেশে এখনো অবহেলিত।

বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি দেশের জিডিপির অন্তত ৫ থেকে ৬ শতাংশ যদি স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ থাকে, তবে সার্জারির, বিশেষ করে জরুরি সার্জারির সফলতা অনেক বেড়ে যায়। বাংলাদেশেও স্বাস্থ্য বাজেট ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে সার্জারি-নির্ভর চিকিৎসা আরও সহজলভ্য ও কার্যকর করা সম্ভব। সেজন্য সবাইকে সচেতন করতে হবে, সমাজের ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে হবে, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি রোধ করতে হবে, সাধারণ হাসাপাতালগুলোতে যথাসম্ভব আধুনিক প্রযুক্তি ও পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হবে এবং চিকিৎসা পরবর্তী যত্নের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।  

সবশেষে বলা যায় যে, জেনারেল সার্জারি শুধু চিকিৎসার একটি অংশই নয়, এটি একটি জীবন রক্ষাকারী প্রক্রিয়া, যা সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত, দক্ষ সার্জন এবং আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে রোগীর সুস্থতা নিশ্চিত করে রোগীকে নতুন একটি জীবন দিতে পারে।  

লেখক
এমবিবিএস, এফসিপিএস (সার্জারি)
সিনিয়র কনসালটেন্ট- জেনারেল, ল্যাপারোস্কোপিক অ্যান্ড লেজার কলোরেক্টাল সার্জারি 
এভারকেয়ার হসপিটাল, চট্টগ্রাম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।