পাবনা: স্বাস্থ্যসেবা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে সরকার দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে চালু করেছে কমিউনিটি ক্লিনিক। কিন্তু দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের অধিকাংশ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে মানুষ তাদের কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ উঠেছে।
কোনো স্থানের ক্লিনিক বন্ধ পড়ে আছে বছরের পর বছর। কোনো ক্লিনিকে যাচ্ছেনা ডাক্তার, মিলছেনা পর্যাপ্ত ওষুধপত্র। এতে চিকিৎসা বঞ্চিত হাজারো মানুষের দুর্ভোগের যেনো শেষ নেই। ফলে সরকারের এ মহৎ উদ্যোগ সফলতার মুখ দেখছেনা বলে মত অনেকের।
তেমনি একটি কমিউনিটি ক্লিনিক হলো পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত চরাঞ্চল চরভবানীপুর কমিউনিটি ক্লিনিক।
সম্প্রতি পাবনা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত চর এলাকা চরভবানীপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল কমিউনিটি ক্লিনিকটির দুরবস্থা।
স্থানীয় বাসিন্দারা বাংলানিউজকে জানান, ১৯৯৮-৯৯ সালে নির্মিত এই কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে কাবলীপাড়া, চরভবানীপুর, শেখপাড়া, ভগিরতপুর, হাশেমপাড়াসহ ৬টি গ্রামের ৫ হাজার মানুষ চিকিৎসা সেবা পেতেন।
চিকিৎসাসেবা পাওয়ার একমাত্র আশ্রয়স্থল এই ক্লিনিকটি গত দেড়/দুই বছর ধরে ভেঙে পড়ে আছে। তালাবদ্ধ ক্লিনিক থেকে স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ায় সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
স্থানীয় বাসিন্দা আনিসুর রহমান আনিস বাংলানিউজকে বলেন, “যখন ক্লিনিকটি চালু ছিল তখন এখানে নিয়মিত ডাক্তার আসতেন। আমরা এলাকার মানুষ চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ পেতাম। কিন্তু গত দেড় বছর ধরে ক্লিনিকটি ভেঙে পড়ে আছে। এখন ডাক্তারও আসেনা, মানুষ সেবাও পায়না। চিকিৎসার জন্য আমাদের অনেক দূরে যেতে হয়”।
কাবলীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম চুন্নু বাংলানিউজকে বলেন “আমাদের এই এলাকাটা পাবনা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন একটি এলাকা। গত দেড় বছর হয়ে গেল কমিউনিটি ক্লিনিকটি ভেঙে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই”।
প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম আরও বলেন, “বিষয়টি গুরুত্বে সঙ্গে দেখে অতি দ্রুত এই কমিউনিটি ক্লিনিকটি পুন:নির্মাণ করে এলাকার ৫ হাজার মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি”।
স্থানীয় গৃহিনী মাজেদা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, “এখানে ক্লিনিকটি থাকার কারণে আমাদের অনেক সুবিধা হতো। সবাই এখান থেকে ভাল চিকিৎসা পেয়ে উপকৃত হচ্ছিলাম। এখন ক্লিনিকটি ভেঙে গেছে। আমরা আর ওষুধ-পানি, চিকিৎসা পাচ্ছিনা। এখন অসুখ বিসুখ হলে অনেক দুরে যেতে হয়। কিন্তু আমাদের গরীব মানুষের পক্ষে এতদূর থেকে সবসময় টাউনে (শহরে) যাওয়া সম্ভব হয়না”।
স্থানীয় কৃষক মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, “কমিউনিটি ক্লিনিকটি যেখানে নির্মাণ করা হয়েছিল সেখানে অনেক বড় গর্ত ছিল। কোনোরকমে মাটি ফেলে কাজটি করা হয়েছিল। আমার ধারণা অপরিকল্পিতভাবে ক্লিনিকটি নির্মাণ করার কারণে, বর্ষার পানিতে ক্লিনিকটি ধ্বসে পড়ে গেছে। ক্লিনিকটি বন্ধ থাকায় এলাকার মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলেও মত ব্যক্ত করেন তিনি”।
কলেজ ছাত্র সেলিম হোসেন বাংলানিউজকে জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা একাধিকবার ক্লিনিকটি পরিদর্শন করেছেন এবং পুন:নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু গত দেড় বছর হয়ে গেল আমরা সে আশ্বাসের কোনো প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছিনা।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পাবনার সিভিল সার্জন ডা. তাহসীন বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ওই ক্লিনিকটির বিষয়ে আমরা প্রকল্প অফিসে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু প্রয়োজণীয় অর্থ বরাদ্দ না আসায় ক্লিনিকটি নির্মাণ করা যাচ্ছেনা।
সিভিল সার্জন আরও বলেন, তবে ওই এলাকার মানুষ যাতে স্বাস্থ্যসেবা পায় সেজন্য পার্শ্ববর্তী চরআশুতোষপুর ও চর শানিকদিয়ার এলাকায় দু’টি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে আমরা তাদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৩
সম্পাদনা: রাফিয়া আরজু শিউলী, নিউজরুম এডিটর
[email protected]