বরিশাল: বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসাপাতালে রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসক ও রোগীর স্বজনদের মধ্যে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে, চিকিৎসাসেবা শুরু হয়েছে।
রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কোতোয়ালি থানা পুলিশ ও হাসপাতাল প্রশাসনের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
অর্থোপেডিক্স বিভাগে রেজাউল করিম (৩০) নামে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইন্টার্ন চিকিৎসক-রোগীর স্বজনদের মধ্যে দুই দফা সংঘর্ষের পর চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেয় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রোগী মারা যাওয়ার পর দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় রোগীর সাত স্বজনসহ দুই চিকিৎসক আহত হন।
ঘটনার পরপরই অর্থোপেডিক্স বিভাগের পক্ষ থেকে সহকারী অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান একটি প্রেস ব্রিফিং করেন।
প্রেস ব্রিফিং এ তিনি বলেন, পটুয়াখালীর বদরপুর গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলামের ছেলে রেজাউল করিম খোকন গত ১৫ তারিখে ভাঙা পা নিয়ে অর্থোপেডিক্স বিভাগে ভর্তি হন। এরপর শনিবার রাতে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন রোগী। রাতে চিকিৎসা ব্যবস্থা পরিবর্তন করা হয়। এবং সর্বদা ফলোআপে রাখা হয় তাকে।
ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হলে সেখানে একজন চিকিৎসক তার দেখভাল শুরু করেন। সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসকদের সামনেই তার মৃত্যু হয়।
তিনি আরও জানান, মৃত্যুর পর ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা আলোচনায় বসেন এর মধ্যে রেজিস্টার ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের রুমে হামলা চালায় রোগীর স্বজনরা। এসময় দুই চিকিৎসক আহত হন।
এ খবর দ্রুত হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়লে অন্য ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অর্থোপেডিক্স বিভাগে এসে রোগীর স্বজনরা যেন পালাতে না পারে সে জন্য বিভাগের প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেন। তবে পুলিশ আসলে সেটি খুলে দেওয়া হয়।
তিনি রোগীর স্বজনদের ওপর হামলার বিষয়ে বলেন, পুলিশ আসার আগে কিছু হয়নি পরে হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই।
তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, হামলাকারীদের মধ্যে দুই যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হলেও আটক না করে পুলিশ তাদের কাছে ঘটনার বিবরণ জানতে চান।
এদিকে, পাল্টা অভিযোগ করে মৃত রোগীর ভাইয়ের ছেলে শাহিন খান বলেন, পায়ে সমস্যার কারণে রেজাউলকে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর থেকে চিকিৎসকরা নিয়মতান্ত্রিক কিছু ওষুধ ছাড়া আর কোনো সেবা দেননি। রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়ার পর তাদের একাধিকবার বলা হলেও তারা কোনো ভ্রুক্ষেপ করেননি।
সকালে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ দেখে চিকিৎসকদের জানানো হলে তারা এসে রোজাউলকে মৃত ঘোষণা করেন। এসময় চিকিৎসকদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা হলে একজন চিকিৎসক আমাদের মারধরের হুমকি দেন।
এর পর মুহৃর্তেই ৪০/৫০ জন যুবক এসে ওয়ার্ডের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এসময় মৃত রোগীর বড়ভাই সেলিম খান, তার স্ত্রী কনা বেগম, ছেলে সোহেল খান, ভাগিনা সাগর, জাহিদুল ইসলাম বাবু, মৃতের স্ত্রী জুলিয়া বেগমসহ আমি আহত হই।
অন্যদিকে, এ বিষয়ে কোতোয়াললি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহামুদুল হাসান জানান, পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধ ইন্টার্নি চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে মরদেহটি ওয়ার্ড থেকে বের করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসক ও হাসপাতাল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান ওসি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৪/আপডেট ১১৫০ ঘণ্টা/আপডেট: ১৪৪৬ ঘণ্টা