ঢাকা: দেশি মুরগির জাত সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা হবে দেশি মুরগির জিন বা জিনেটিক রিসোর্স।
জীব বৈচিত্র্য এবং রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতার অফুরন্ত সম্ভাবনাময় উৎস হিসেবে দেশি মুরগির জিনেটিক গুণাবলী মূল্যবান জার্মপ্লাজম হিসেবে কাজ করে থাকে।
আর সব কথা বিবেচনা করে ‘দেশি মুরগি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় মুরগি পালনে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটনো হবে।
প্রকল্পের আওতায় নির্দিষ্ট নির্বাচিত এলাকায় ক্ষুদ্র খামারী সমবায়ের মাধ্যমে এ সব মুরগির মাংস ও ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশে দেশি মুরগির উৎপাদন এলাকা গড়ে তুলবে প্রাণি সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই)।
প্রকল্প প্রসঙ্গে বিএলআরআই মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ৭ থেকে ৮ বছর আগে অনুমোদন পেলে আরো ভালো হতো। এর ফলে দেশি মুরগির জাতসংরক্ষণ এবং সাধারণের পুষ্টির চাহিদা মেটানো হবে।
তিনি বলেন, ৭ থেকে ৮ বছর আগ থেকে প্রকল্পটি অনুমোদনের তাগিদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটি বার বার ফিরিয়ে দিয়েছে। বিড়াল যেভাবে ইঁদুর নিয়ে খেলে তারা (পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়) আমাদের সঙ্গে একইভাবে খেলেছেন!
তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনের পছন্দ হয়নি। মাত্র ১০ কোটি টাকার জন্য তারা কেনই বা এটা করতে কালক্ষেপণ করেছে আমাদের জানা নেই। তবে শেষ পযর্ন্ত সময় বৃদ্ধি করে প্রকল্পটি আশার আলো দেখছে। ’
‘দেশী মুরগি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দেশী মুরগির জেনেটিক রিসোর্স ব্যবহার করা হবে।
জুলাই ২০১৪ থেকে জুন ২০১৭ মেয়াদে বিএলআরআই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়ে ১০ কোটি ৯১ হাজার টাকা। দেশের ৭টি জেলার ৮টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
প্রকল্প এলাকা ঢাকার সাভার, জয়পুরহাটের জয়পুরহাট সদর, খুলনার ডুমুরিয়া, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া, টাঙ্গাইলের কালিহাতী, সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি ও শাহাজাদপুর উপজেলা।
দেশি মুরগির জাত সংরক্ষণের আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা হবে। এর মধ্যে অন্যতম জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে বিএলআরআই-এর বের করা দেশি মুরগি পালন মডেলের উপযোগীতা যাচাইকরণ এবং উন্নয়ন।
পোল্ট্রি গবেষণা শক্তিশালীকরণ এবং গ্রামীণ পোল্ট্রি উৎপাদনের জন্য নতুন দেশি মুরগির জাত উন্নয়নের পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে।
দেশি মুরগির ব্রিডিং শেড নির্মাণ কৌশল উন্নয়নের লক্ষে ১২ জন পোল্ট্রি সার্ভিস হোল্ডার তৈরির লক্ষে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় ৬০০ জন গ্রামীণ মহিলাকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।
নানা গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে প্রথমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের মতে, দেশের কৃষি অর্থনৈতির অবিচ্ছেদ্য অংশ প্রাণিসম্পদ খাত। দরিদ্র জনগোষ্ঠির জীবিকায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সার্বিক ডিপিপিতে প্রাণিসম্পদের ২ দশমিক ৭৯ ভাগ এবং এ উপ খাতের শীর্ষে রয়েছে মুরগি। গ্রামে প্রতিটি ঘরে গড়ে ৭ থেকে ৮টি মুরগি আছে।
প্রকল্প গ্রহণ করা প্রসঙ্গে অধিদফতর জানায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মুরগি পাওয়া যায় যাদের চারণের অভ্যাস আছে। সীমিত জেনেটিক গঠন, অপ্রতুল ব্যবস্থাপনা এবং অপর্যাপ্ত পুষ্টির কারণে এ সব দেশি মুরগি খুবই অল্পসংখ্যাক ডিম উৎপাদন করে থাকে।
দেশি মুরগির ব্যবস্থাপনা, খাদ্য এবং ব্যবস্থাপনার জন্য খুব অল্প যত্নের প্রয়োজন হয় আর কম খরচ হয় বিধায় এ সব মুরগি লালন পালন করা লাভজনক।
তাছাড়া দেমি মুরগি অধিক রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতার অধিকারী, শিকারী প্রাণির প্রতি কম ভীত, প্রতিকূল ও পরিবর্তিত পরিবেশ এবং কম পুষ্টিতে বেঁচে থাকতে পারে।
অধিদফতর আরো জানায়, দেশ অনির্বাচিত দেশি মুরগির এলোমেলো প্রজননের ফলে মুরগির বৈচিত্র্যময়তা আসছে না। পাশাপাশি কম ডিম উৎপাদন, কম বৃদ্ধি ও অধিক মৃত্যুর হার ইত্যাদি দেশি মুরগি উৎপাদনের প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিবর্তিত শস্য চাষ পদ্ধতি, পোষ্ট হার্ভেষ্ট অপারেশন এবং গৃহস্থল সংলগ্ন স্থানের স্বল্পতার কারণে দেশি মুরগি পালনের সুযোগ দিন দিন কমে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৬ ঘণ্টা, জুলাই ২০১৪