ঢাকা: প্রকৃতিপ্রেমী হিসেবে প্রায় সবারই পছন্দের ঋতু বর্ষা। অতিবর্ষণ কিছু সমস্যার সৃষ্টি করলেও বর্ষাকে যেন সবাই উপভোগ করেন।
বর্ষা যেন বিরক্তির ঋতু না হয়ে দাঁড়ায় সেজন্য স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন প্রখ্যাত ভারতীয় চিকিৎসক সাশা জেঠবাণী। বাংলানিউজের প্রকৃতিপ্রেমী পাঠকদের জন্য থাকছে সেসব পরামর্শ।
কী খাবেন না
*শাক-সবজি
যদিও সবুজ শাক ও পাতা-জাতীয় সবজি শরীরের জন্য পুষ্টিকর, তথাপি বর্ষায় এ ধরনের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
বর্ষার সময় শাক-সবজি খুব দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং এগুলোতে বর্ষাকালীন পোকামাকড়ের জীবাণুও লেপ্টে থাকে।
জীবাণুযুক্ত এসব শাক-সবজি পাকস্থলীর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে এবং এ কারণে ডায়রিয়া ও খাদ্যে বিষক্রিয়া পরবর্তী সময়ের মতো রোগ ছড়াতে পারে।
কিন্তু কেউ যদি একান্তই না খেয়ে থাকতে না পারেন তবে শাক-সবজিগুলো রান্নার বা খাওয়ার আগে লবণ দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
*সামুদ্রিক মাছ
সামুদ্রিক যে কোনো মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া বর্ষায় না খাওয়াই ভাল। এই সময়ে সামদ্রিক প্রাণী বংশ বিস্তার করে। কেউ খেতে চাইলে একেবারে তাজা খেতে হবে। বাসি খেলে পেটের পীড়ার উপদ্রুব হতে পারে।
*তৈলাক্ত খাবার
যে কোনো সময়ই তৈলাক্ত খাবার পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকারক, হুমকি স্বাস্থ্যের জন্যও। সবসময়ই এ তৈলাক্ত খাবারে আপত্তি থাকলেও বর্ষায় বিশেষভাবে এড়িয়ে চলতে হবে হজমি শক্তি নিরোধক এ তৈলাক্ত খাবার।
বর্ষায় শরীর পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখতে পারে, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার ভোজনের ফলে পানির সঙ্গে মিশতে না পাকস্থলীতে বিপর্যয় ঘটাতে পারে তেল।
এসময়টায় বিশেষত তিল ও সরিষার তেল এড়িয়ে ভুট্টা ও জলপাই তেল ভোজনের দিকে নজর দিতে হবে।
*ফলের রস
বর্ষায় কোনো ধরনের ফলের বা সবজির রস খাওয়া যাবে না। বিশেষ করে বাইরের প্রস্তুতকৃত জুস।
যদি একান্তই খেতে হয়, তবে বাড়িতেই বানিয়ে নিতে হবে। বর্ষায় ফলের রস, কুলফি, ঘোল, আখের রস, দই জাতীয় খাবার নাগালের বাইরে রাখতে হবে।
*প্রায়ই খাবার গরম করা যাবে না
বর্ষায় জীবাণু দ্রুত ছড়ায়। ঘন ঘন খাবার গরম করলে বিস্ময়করভাবে এ জীবাণু খাবারে জন্ম নেয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে খাবার রান্নার পর দ্রুত সময়ে খেয়ে ফেলতে হবে।
বাসি খাবারই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগ ছড়ানো জীবাণুর জন্ম দেয়।
*বাইরের খাবার এড়িয়ে যেতে হবে
ফুটপাত-হোটেলসহ বাইরের খাবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপরিষ্কার পানি ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সেসব খাবার জীবাণুও থাকে অনেক বেশি।
তাই বাড়িতে তৈরি খাবারের চেয়ে নিরাপদ আর কিছু নেই। সবসময়ই বাড়ির খাবার খেতে হবে। খাবারের তালিকায় সবসময় ফল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার, ভিটামিন এ, সি, ই ও ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।
*কাঁচা খাবার
যে কোনো কাঁচা খাবার বর্ষায় না খাওয়া ভালো। বর্ষায় এ ধরনের খাবার জন্ডিস, টাইফয়েডের সম্ভাবনা অনেক বাড়িয়ে দেয়।
কী খাবেন
*গরম স্যুপ
বর্ষায় খাওয়ার জন্য খুব ভাল গরম সবজির স্যুপ। পুষ্টিতে ভরপুর স্যুপ শুধুই ঠাণ্ডা লাগা এবং জ্বরই কমাবে না, শরীরে পানির সঠিক মাত্রা বজায় রেখে স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
*চা
ইনফ্লুয়েঞ্জা কাটাতে চা, বিশেষ করে হারবাল চা’র জুড়ি নেই। হজমের জন্য অসাধারণ কার্যকরী হারবাল চা।
*শুকনো খাবার
জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা কম থাকে বলে বর্ষায় শুকনো খাবার খেতে হবে বেশি বেশি। এতে স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে, ঝরঝরে থাকবে শরীরও।
*পরিষ্কার পানিই সব
বর্ষায় শরীরে জীবাণু ছড়াতে অপরিষ্কার পানিই যথেষ্ট। তাই দোকানের পানি এড়িয়ে যেতে হবে। যথাসম্ভব ফুটিয়ে পানি পান করতে হবে (এমনিক ফিল্টারের পানিও)।
সর্বোপরি নিয়মিত ব্যায়াম করে বর্ষায়ও শরীরকে ফিট রাখতে হবে। কারণ, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৪