ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

৫৪ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত

তাবারুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৪
৫৪ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত ছবি : প্রতীকী

ঢাকা: দেশের বক্ষব্যাধি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন যক্ষ্মারোগীদের সংস্পর্শে আসার কারণে ৫৪ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

এ সংক্রান্ত এক গবেষণা শেষে সস্প্রতি আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) তাদের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।



বক্ষব্যাধি হাসপাতালগুলোতে যক্ষ্মারোগ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকার কারণেও সেবাদানকারীগণ সংক্রমণে বেশি ঝুঁকিতে আছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
 
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের বক্ষব্যাধি হাসপাতালগুলোতে প্রধানত যক্ষ্মারোগীদের ভর্তি করা হয়ে থাকে। ওই সব হাসপাতালে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিদিন যক্ষ্মারোগীদের সংস্পর্শে আসার কারণে তারা যক্ষ্মারোগ সংক্রমণের জন্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।

দেশের চারটি বক্ষব্যাধি হাসপাতালে কর্মরত সেবাদানকারীদের দেহে লুকায়িত যক্ষ্মারোগ সংক্রমণের ব্যাপকতা নির্ণয়ের লক্ষ্যে ৫০১ জন সেবাদানকারীর উপর এ গবেষণা চালানো হয়।

যাদের শরীরে যক্ষ্মারোগের দৃশ্যমান কোনো লক্ষণ নেই, তাদের দুই ধাপে টিউবারকুলিন স্কিন টেস্টের (টু-স্টেপ টিএসটি) মাধ্যমে এ পরীক্ষা করা হয়।

যে চারটি বক্ষব্যাধি হাসপাতালে কর্মরত বিভিন্ন শ্রেণির সেবাদানকর্মীর মধ্যে এই গবেষণা পরিচালিত হয় সেগুলো হলো-ঢাকা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডিজিজেজ অব দ্যা চেস্ট অ্যান্ড হসপিটাল (এনআইডিসিএইচ), খুলনা বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম বক্ষব্যাধি হাসপাতাল।

গবেষণায় অংশ নেন ওই চার হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, ফার্মাসিস্ট, প্রশাসক, ল্যাবরেটরি ও সহায়ককর্মী।

আমন্ত্রিত ৫০১ জন স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে ৪৪৯ জন (৯০%) পরীক্ষাটি সম্পন্ন করেছেন। তাদের মধ্যে ৭৮ জন রাজশাহী, ৮১ জন খুলনা, ৬১ জন চট্টগ্রাম এবং ২২৯ জন ঢাকায় কাজ করেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সর্বাধিক ছিলেন নার্স (৪৫%) এবং তাদের ৬১ শতাংশই নারী।

গবেষণায় দেখা যায়, চট্টগ্রাম বক্ষব্যাধি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের দেহে লুকায়িত যক্ষ্মারোগ সংক্রমণ সবেচেয় বেশি, যা ৬৭ শতাংশ। অন্যদিকে, খুলনায় এই হার সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ। ঢাকা ও রাজশাহীতে ৫৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবাদানকারী যক্ষ্মারোগে সংক্রমিত হয়েছেন।

যেসব দেশে যক্ষ্মারোগের স্বাস্থ্যগত প্রভাব খুব বেশি, সেই সব দেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে সংক্রমণের ব্যাপকতা এবং এই গবেষণায় নির্ণীত সংক্রমণের ব্যাপকতা একই রকম।

গবেষণায় বলা হয়, লুকায়িত যক্ষ্মায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে কোনো ধরনের লক্ষণ ও উপসর্গ থাকে না। যেসব ব্যক্তির লুকায়িত যক্ষ্মারোগ রয়েছে তাদের জীবদ্দশায় যক্ষ্মারোগের লক্ষণ বা উপসর্গ প্রকাশিত হওয়ার (অ্যাকটিভ যক্ষ্মা) ঝুঁকি ১০ শতাংশ।

যক্ষ্মারোগ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কার্যক্রম মূল্যায়নের জন্য এই গবেষণা কাজে লাগানো যাবে। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাদানে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের মধ্যে যক্ষ্মারোগের সংক্রমণ কমিয়ে আনার কৌশল নির্ণয় করা সম্ভব হতে পারে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

যক্ষ্মারোগের প্রভাবের বিবেচনায় পৃথিবীতে বাংলাদেশ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। আর যক্ষ্মারোগের ওষুধ প্রতিরোধী দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান নবম।

গবেষণাটি ২০১৩ সালের মার্চ থেকে গত ডিসেম্বরের মধ্যে পরিচালিত হয়। এরপর চলতি বছরের মার্চে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।

ন্যাশনাল টিউবারকুলোসিস কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (এনটিপি), স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, সার্ভিলেন্স ও আউটব্রেক রেসপন্সেস রিসার্চ গ্রুপ, সেন্টার ফর কমিউনিকেবল ডিজিজেজ, আইসিডিডিআর,বি যৌথভাবে গবেষণাটি পরিচালনা করে।

অন্যদিকে, গবেষণায় অর্থায়ন করেছে, ন্যাশনাল টিউবারকুলোসিস কন্ট্রোল প্রোগ্রাম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, ইউএসএআইডি ও সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।