ঈশ্বরদী: আড়াই বছরেও ঈশ্বরদীর ৫০ শয্যার হাসপাতালে জনবলের অনুমোদন মেলেনি। এ অবস্থায় ৩১ শয্যার জনবল নিয়ে ৫০ শয্যার হাসপাতাল চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অফিস সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, ২০১১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জাঁকজমকপূর্ণ আনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরদীর ৫০ শয্যার হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়।
হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫০ শয্যার বর্তমান হাসপাতালে মোট প্রশাসনিক পদের সংখ্যা ১৬৩টি। এর মধ্যে এখনও শূন্য রয়েছে ২৭টি পদ। হাসপাতালে কনসালটেন্ট (বিশেষজ্ঞ ডাক্তার) ও মেডিকেল অফিসারসহ মোট পদ রয়েছে ২৪টি, এর মধ্যে মাত্র ১০ জন চিকিৎসক রয়েছেন হাসপাতালটিতে।
কনসালটেন্ট বা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বলতে রয়েছেন একজন মাত্র এনেসথেশিয়া ডাক্তার। শূন্য রয়েছে মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি ও অবস, হৃদরোগ, চক্ষু, শিশু, নাক-কান-গলা, হাড়জোড় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। জরুরি ও আন্তঃবিভাগেও দুইজন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও এ পদে কোনো লোক নেই। নার্স ও ওয়ার্ড বয় এর ১৮টি পদের অনুকূলে রয়েছে মাত্র ১০ জন। ৪ জন সুইপার থাকার কথা থাকলেও, মাত্র একজনকে রয়েছেন এ কাজে।
গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালে নতুন যন্ত্রপাতিও আনা হয়নি। ৩১ শয্যা হাসপাতালের দীর্ঘদিনের পুরনো এক্স-রে মেশিন ৫০ শয্যার হাসপাতালের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
অফিস সূত্র বাংলানিউজকে আরও জানায়, এক্স-রে মেশিনটি পুরনো হওয়ায় ঠিক মতো কাজ করে না, প্রায়ই এটি বন্ধ থাকে। পুরনো হওয়ায় মেশিনের ক্ষমতাও কমে গেছে বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনের অপারেটর নেই। ডেন্টাল ইউনিট নেই। প্যাথোলজির যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক দ্রব্যের সংকট রয়েছে প্রকট। জরুরি ভিত্তিতে ইমারজেন্সিতে একটি আইপিএস প্রয়োজন। হাসপাতালের জন্য চার বছর আগে একটা নতুন অ্যাম্বুলেন্স আনা হলেও, তার রেজিস্ট্রেশন না থাকায় রাজশাহী বিভাগের বাইরে রোগী নিয়ে যেতে পারে না অ্যাম্বুলেন্সটি। ফলে রোগীদের রাজধানী ঢাকায় চিকিৎসার জন্য যেতে হলে বাইরে থেকে বেশি টাকা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হয়। গরিব রোগীদের পক্ষে ভাড়া করে বাইরে থেকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য পাঠানো দুরুহ হয়ে পড়েছে।
ঈশ্বরদী হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শফিকুল ইসলাম শামীম বাংলানিউজকে জানান, ৫০ শয্যার এই হাসাপাতালে প্রতিদিন বহিঃর্বিভাগে গড়ে ৩৫০ জন রোগী আসেন। আন্তঃবিভাগে ৫০ শয্যাও থাকে সবসময় পরিপূর্ণ।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিনে গিয়ে রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোগীরা তাদের বেশির ভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনেন। হাসপাতাল থেকে ওষুধ পাওয়া যায় সামান্য। রোগীদের জন্য বরাদ্দ খাবারের মানও তেমন একটা ভালো নয় বলে তারা বাংলানিউজকে জানান।
এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আমিন আহমেদ খান বাংলানিউজকে জানান, হাসপাতালের কাজের পরিমাণ বেড়ে গেলেও প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় কাজের মান ধরে রাখা যাচ্ছে না।
জনবল নিয়োগের জন্য ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানান, ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতি মাসে ৩০টি সিজারিয়ান অপারেশনসহ ১৫০ জন প্রসূতি সন্তান প্রসব করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৪