ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

মমেক হাসপাতাল এখন আধুনিক ও রোগীবান্ধব

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৬
মমেক হাসপাতাল এখন আধুনিক ও রোগীবান্ধব ছবি: অনিক খান, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ: হাসপাতালের সীমানা প্রাচীরের ওপরে জ্বলছে লাইট। প্রবেশ গেটের ওপরে ইলেকট্রনিক সাইনবোর্ড।

বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা- ‘ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল’। এর ঠিক পাশেই সংক্ষেপে লেখা ‘এমএমসিএইচ’।

বাইরে থেকে এখন এ হাসপাতাল এখন এমনই আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন। বহির্বিভাগের নতুন ভবনের বহিরাবরণেও পরিবর্তনের ইঙ্গিত। ইলেকট্রিক সাইনবোর্ডে ভেসে উঠছে হাসপাতালের নিয়ম-কানুন ও করণীয়।

দৃশ্যমান এমন পরিবর্তন শুধু বাইরের চেহারাতেই সীমাবদ্ধ নয়। জরুরি বিভাগ তো বটেই,  হাসপাতালের প্রতিটি ভবনের দেয়ালের এখানে-সেখানে সাঁটানো নোটিশে বলা হয়েছে- ‘হাসপাতালে সরবরাহকৃত সরকারি ওষুধ শতভাগ প্রদান করা হয়’।

সিটিজেন চার্টারের বেশিরভাগ জুড়েও বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহের কথাই। অর্থাৎ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নোটিশ দিয়েই জানান দিচ্ছে- এ হাসপাতালে ওষুধের কোনো সমস্যা নেই।

এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ থাকলে জানাতে বলা হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।

এমন সব পরিবর্তনই বলে দিচ্ছে- আগের অবস্থায় নেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতাল। আমূল পরিবর্তনের দৃশ্যপট হাসপাতালের ভেতরেও। স্বাস্থ্যসেবা এখন আর এখানে বিপন্ন কোনো গল্প নয়।

সরকারি হাসপাতালগুলোতে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, চিকিৎসাসেবার প্রশ্নবোধক মানই যখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন উল্টো মাথা উঁচু করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ৫৪ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এ হাসপাতাল।

আর এতোসব পরিবর্তনের নেপথ্যের কারিগর হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহমেদ।

তার নেতৃত্বেই এ হাসপাতালের এতোদিনকার সমস্যা আর অনিয়ম দূর হচ্ছে। খোল-নলচে বদলে নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করছে হাসপাতালটি।

হাসপাতালকে আধুনিক করা এবং সুচিকিৎসা ও অন্যান্য সেবা নিশ্চিতসহ ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে কার্যকরী উদ্যোগ নিয়েছেন হাসপাতাল পরিচালক।

অধুনালুপ্ত বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬ জেলার প্রায় ৪ কোটি মানুষের চিকিৎসাসেবার প্রধান ভরসাস্থল এ হাসপাতাল। সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, গাজীপুরের মানুষজনও প্রতিদিন এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। ৮শ’ শয্যার বিপরীতে এখানে রোগী ভর্তি থাকেন দুই থেকে আড়াই হাজার।

সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের অবাধ বিচরণেও আনা হয়েছে কঠোর নিয়ন্ত্রণ। এ হাসপাতালের দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভয়বাণী রোগী ও তাদের স্বজনদের মাঝে আনছে শক্তি ও সাহস।

হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে চিকিৎসাধীন বেশ কয়েকজন রোগী জানান, হার্টের রক্তনালীর ব্লক ছাড়ানোর জন্য সাড়ে ৩ হাজার টাকা দামের স্ট্রেটোকাইলেজ ইনজেকশন এখন আর বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে না। হার্টের রক্তনালী বন্ধ প্রতিরোধক ৮শ’ টাকা মূল্যের এনোক্সিপেরিন ইনজেকশনও মিলছে। বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ডায়ালইস্লো মেশিনও।

সরকারি ওষুধ সরবরাহের এ অবস্থা হাসপাতালের নিউরোসার্জারিসহ অন্য বিভাগগুলোতেও। হাসপাতালের ওষুধপাচার সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার পর থেকে বিনামূল্যেই ওষুধ মিলছে এ হাসপাতালে।

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের শিশু রোগীর বাবা সংবাদকর্মী আব্দুল মান্নান পল্টন। একমাত্র মেয়ের চিকিৎসা নিতে সপ্তাহখানেক ছিলেন এ হাসপাতালে।

বদলে যাওয়া হাসপাতালে অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘রোগী শয্যা এখনো চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তবে এখন হাসপাতালেই বিনা খরচে সব ওষুধ মিলছে। হাসপাতালের ওষুধ বাইরে পাচার করে ফার্মেসিতে বিক্রি বন্ধ হয়েছে, কমেছে দালালদের উৎপাত। রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ও ওষুধ কিনে আনতে বাইরে পাঠানোর মাত্রাও কমেছে’।

‘স্বাস্থ্যসেবা স্বস্তি ও সেবাদায়ক করতে সততা, দক্ষতা ও আন্তরিকতার মধ্যে দিয়ে সব ধরনের সিন্ডিকেট ভেঙে পরিচালক এ হাসপাতালে গড়ে তুলেছেন একটি টিমওয়ার্ক। চিকিৎসাসেবার মান বাড়ানোসহ সার্বিক পরিবেশ পাল্টে দিতেই কাজ করছেন তিনি’।

হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পে দায়িত্বরত নায়েক আরিফ রব্বানী বাংলানিউজকে বলেন, ‘হাসপাতাল পরিচালকের একটি বড় সাফল্য হচ্ছে- কালোবাজারে হাসপাতালের ওষুধ বিক্রি ঠেকানো’।

হাসিমুখে তিনি বলেন, ‘এখন ফার্মেসিতে গেলেই ব্যবসায়ীরা বলেন, হাসপাতাল থেকেই ওষুধের সাপ্লাই দেয়। বেঁচতে পারি না’।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৬
এমএএএম/এএসআর

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।