ময়মনসিংহ: মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ডান পায়ের একটি নখ ক্ষতিগ্রস্ত হয় সংবাদকর্মী আনিসুর রহমান ফারুকের (৩২)। রোববার (০৪ সেপ্টেম্বর) রাতে আহত হওয়ার পর তাকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে।
সেখান থেকে তাকে হাসপাতালের ৯নং সার্জারি ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হলেও কাঙ্খিত সেবা দিতে পারেননি কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। উল্টো তারাই হাসপাতালের ঠিক সামনের বেসরকারি ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন!
ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছিলেন এ সংবাদকর্মী। ফলে অন্য সংবাদকর্মীরা তাকে নিয়ে যেতে বাধ্য হন নগরীর চরপাড়া মোড় এলাকার ট্রমা সেন্টার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে।
এভাবেই রাতে ছোট-বড় সব ধরনের সড়ক দুর্ঘটনায় আহতরা মমেক হাসপাতাল থেকে ছুটতে বাধ্য হচ্ছেন বেসরকারি এ হাসপাতালে।
রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, মমেক হাসপাতালের এক শ্রেণির চিকিৎসক ও কর্মচারীদের সঙ্গে রয়েছে এ বেসরকারি ট্রমা সেন্টারের যোগসাজশ। তারা নানা প্রলোভনে রোগীদের পাঠিয়ে দিচ্ছেন সেখানে। আবার অনেক সময় হাসপাতালে এসেও চিকিৎসাসেবা নিতে পারছেন না রোগীরা। সংঘবদ্ধ দালাল চক্র তাদের ভাগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ট্রমা সেন্টারটিতে।
মমেক হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে দিনের বেলায় দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের চিকিৎসাসেবা মিললেও রাতে থাকেন না কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এ সময় সঠিক সেবা দিতে পারেন না। এমনকি কোনো কোনো ইন্টার্ন চিকিৎসক এখানে কোনো রোগী ভর্তি হতে এলে সুচিকিৎসা ও ভালো চিকিৎসকের কথা বলে তাদের পাঠিয়ে দিচ্ছেন ওই ট্রমা সেন্টারে।
এর মাধ্যমে ‘কমিশন’ বাণিজ্য করে যাচ্ছেন চিকিৎসক-কর্মচারীরা- এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেরই অর্থোপেডিক্স বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. মো. মতিউর রহমান দুর্ঘটনায় আহত ও হাঁড়ভাঙা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ২০১০ সালে গড়ে তোলেন ট্রমা সেন্টার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল। শুরুতে এ সেন্টারে শুধুমাত্র বহির্বিভাগ থাকলেও দুই বছর পর ইনডোর বিভাগ চালু করা হয়। এখন এখানে শয্যা সংখ্যা বিশটি। বিকেল থেকেই নিজের মালিকানাধীন এ সেন্টারে বসেন ডা. মতিউর।
ডা. মতিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬ জেলা এবং গাজীপুরের সাধারণ মানুষ এখানে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। তিন শিফটে এখানে ২৪ ঘণ্টা ডিউটি চিকিৎসক থাকেন। দিন-রাত দায়িত্ব পালন করেন ৬ জন নার্স। এখানে অর্থোপেডিক্স ও সার্জারি বিভাগের জন্য রয়েছে আলাদা অপারেশন থিয়েটার (ওটি)।
মমেক হাসপাতালে গত বছর অত্যাধুনিক ও দামি সিআর্ম মেশিন এলেও বেসরকারি এ সেন্টারে আরো ৪ বছর আগেই এ মেশিন বসানো হয়- দাবি করেন তিনি।
তবে রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন ডা. মতিউর।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মেধাবী শিক্ষার্থী সাদ হত্যাকাণ্ডের পর এ ট্রমা সেন্টারেই ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছিল তার মরদেহ। ওই সময় এ ঘটনায় ট্রমা সেন্টারটির তিন কর্মচারীকে আটক করা হয়। আর সেন্টার ছেড়ে আত্মগোপন করেছিলেন ডা. মতিউর।
মমেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহম্মেদ বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালে সুচিকিৎসা ও অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করতে কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রোগী ভাগানোর অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৬
এমএএএম/এএসআর