উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পীরগঞ্জ (রংপুর) ঘুরে: পঞ্চাশ শয্যার উপজেলা হাসপাতাল। যার মূল ফটকে আয়েসী ভঙ্গিতে শুয়ে আছে একটি বেওয়ারিশ কুকুর।
জরুরি বিভাগের কক্ষটির ভেতরে একটি অত্যাধুনিক বিছানা অব্যবহৃত পড়ে আছে। বিছানাটিকে পেছনে রেখে চেয়ার পেতে টেবিল নিয়ে বসেন এই বিভাগের ডাক্তার ও নার্স। আর রোগিকে সেবা দেওয়ার জন্য লম্বা সাইজের কাঠের তিনটি টেবিল দেওয়া রয়েছে। যার ওপর শুইয়ে দিয়ে চলে জরুরি সেবা।
সেই টেবিলগুলোর নিচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে রক্ত চুষে নেওয়া তুলা-গজ-ব্যান্ডেজ। কক্ষের মধ্যেই ময়লা ফেলার ঝুড়ি রয়েছে। কিন্তু সেখানে না ফেলে জীবাণুযুক্ত এসব ব্যবহৃত জিনিসপত্র মেঝেতে ছুড়ে ফেলা হয়েছে।
কক্ষের মধ্যে একটি বেসিনও রয়েছে। বেসিনের নিচে ম্যানহোলের মতো ময়লা-আবর্জনা জমে কালচে বর্ণ ধারণ করেছে।
জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত নার্স শারমিন আক্তার বাংলানিউজকে জানান, ক্লিনার সংকট। সকালে একবার আর বিকেলে আরেকবার পরিষ্কার হয়। একটু আগে কিছু রোগি এসেছিল সে কারণে অপরিচ্ছন্ন হয়ে গেছে। বিকেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
জরুরি বিভাগের সামনে ময়লার স্তূপ সম্পর্কে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে, কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
হাসপাতালটির নিচতলাতে জরুরি বিভাগের পাশে টিকেট কাউন্টার কর্তাদের চেম্বার ও একটি হলরুম রয়েছে। উপর তলায় রয়েছে রোগিদের শয্যা। নিচ তলার অবস্থা দেখলে মনে হবে কোনো অব্যবহৃত ভয়ানক ভবন। দেয়ালে পানের পিক বিবর্ণ রূপ পেয়েছে।
সিঁড়ির গোড়ায় গোড়ায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা। উপরতলায় রোগির ওয়ার্ডের পাশে গ্রিলে শুকাতে দেওয়া হয়েছে ব্যবহৃত হ্যান্ডগ্লাভস।
নার্সকে অপরিচ্ছন্নতা বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ক্লিনার মানিক নামে একজনকে দেখিয়ে দেন। পরে তিনি কোনো কথা না বলেই চলে যান।
সেখানেই দেখা হয় চিকিৎসক সিলভিয়ার সঙ্গে। কথা বলতে চাইলে বলেন, এসব বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার (ডা. মোখলেছুর রহমান) সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাকে কোথায় পাওয়া যাবে? জানতে চাইলে বলেন, আজকে ছুটির দিনে (শুক্রবার-১৬ সেপ্টেম্বর) তাকে পাওয়া যাবে না। তিনি জেলা শহর রংপুরে থাকেন।
তারপর আবাসিক মেডিকেল অফিসারের সন্ধানে তার কক্ষের দিকে পা বাড়ানো। কিন্তু সেখানে গিয়ে হতাশ হতে হয়। বলা চলে বাকরুদ্ধ হওয়ার মতো অবস্থা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই সেকেন্ডম্যানের (ডা. মো. জিয়াউর রহমান) দরজায় ঝুলছে তালা।
বাকরুদ্ধ হওয়ার কারণ হচ্ছে যিনি এই হাসপাতালের সার্বক্ষণিক দেখভাল করার কথা, তার নেমপ্লেটেই জাল বুনেছে মাকড়শা। আর সেই মাকড়শার জালে ধুলা-ময়লা পড়ে বিদঘুটে পরিবেশ তৈরি করেছে।
পরে একাধিকবার ফোন দিলেও ধরেননি তিসি। রোগির ওয়ার্ড ঘুরতে গিয়ে দেখা যায়, ক্লিনার মানিক একজন রোগির সঙ্গে কথা বলছেন। অভিযোগ রয়েছে এই ক্লিনাররাই নাকি ওয়ার্ড বয়ের ‘রক্সি’ দেন। পুরুষ ওয়ার্ডের টয়লেটে নাকে রুমাল দিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।
শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে হাসপাতাল ঘুরে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দেখা হয় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিথুন সাহার সঙ্গে। কুশল বিনিময় করে হাসপাতালে আসার কারণ জানতে চান। হাতপাতাল কেমন চলছে দেখতে এসেছি জানাতেই বলেন, খুবই খারাপ অবস্থা। সেবা বলতে কিছু নেই।
পীরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মোকসেদ আলী সরকার বাংলানিউজকে বলেন, এখানে অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পোস্টিং রয়েছে। কিন্তু তারা বছরের পর বছর অনুপস্থিত। কেউ আবার ডেপুটেশনে তাদের পছন্দের জায়গায় চলে গেছেন। এখানে সিজারের জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং অপারেশন থিয়েটার (ওটি) স্থাপন করা হয়েছে। একটি মাত্র সিজার করা হয়েছে। এরপর থেকেই পুরোপুরি বন্ধ। হাসপাতালে সিরিয়াস রোগি এলেই অন্যখানে পাঠিয়ে দেওয়া তো নিত্য দিনের ঘটনা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৬
এসআই/আইএ