রমজান এলেই খেজুরের কদর বেড়ে যায়। রোজায় একদিন খেজুর না পেলে যেন আমাদের ইফতার পরিপূর্ণ হয়না।
প্রাচীনকাল থেকেই আরবদেশের খাদ্যের অধিকাংশ জুড়েই ছিল খেজুর। বছরে যতটি দিন, খেজরেও আছে ততগুন- এমন প্রবাদ আছে খেজুরকে নিয়ে। রমজানের ইফতারির কারণেই খেজুরের এত জনপ্রিয়তা। খেজুর গাছের আদি জন্মস্থান সৌদি আরব। এই গাছ পৃথিবীর ১০ হাজার বছরের পুরনো গাছ। এ গাছের ফল যেমনি সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিকর। শুধু ফল নয়, পাতা, রস, গাছ ও ফলের বীজ অন্যান্য অনেক কাজে ব্যবহৃত হয়। ঔষধি গুণে ভরপুর খেজুর একটি উত্তম ফল। উত্তম খাদ্য।
ইতিহাস থেকে জানা গেছে, মুসলিম মহিয়সী মরিয়ম (আ.) যখন প্রসব বেদনায় কষ্ট পাচ্ছিলেন তখন তিনি একটি খেজুর গাছের নিচে বসেছিলেন। বাতাসে গাছ নড়ার ফলে যে খেজুর নিচে পড়েছিল তা খেয়ে তার ব্যথা উপশম হয়েছিল। বর্তমানেও সৌদি আরবের অধিবাসীরা প্রসব-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে এই উদাহরণটি অনুসরণ করে থাকেন। খেজুর জরায়ুর মাংসপেশির দ্রুত সংকোচন-প্রসারণ ঘটিয়ে তাড়াতাড়ি প্রসব হতে সাহায্য করে। এছাড়া, এ ফল প্রসব-পরবর্তী কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তক্ষরণ কমিয়ে দেয়।
মা ও শিশুদের জন্য খেজুর একটি পুষ্টিকর খাবার। শুধু কি তাই, হৃদরোগীদের জন্যও খেজুর বেশ উপকারী।
খেজুরের প্রচুর খাদ্য উপাদান রয়েছে। খেজুর রক্ত উৎপাদনকারী। হজমশক্তি বর্ধক, যকৃৎ ও পাকস্থলীর শক্তিবর্ধক, কামশক্তি বর্ধক, মুখে রুচি আনায়নকারী, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মুখের অর্ধাঙ্গ রোগ, পক্ষঘাত এবং সব ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশকারী রোগের জন্য উপকারী। খেজুরের বিচিও রোগ নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা রাখে। পাতলা পায়খানা বন্ধ করে। এর চুর্ণ মাজন হিসেবে ব্যবহার করলে দাঁত পরিষ্কার হয়। খেজুর পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা, কফ দূর করে, শুষ্ক কাশি এবং এজমায় উপকারী।
এছাড়া খেজুর ফুলের পরাগ রেণু পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দূর করে শুক্রাণু বৃদ্ধি করে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে।
খেজুরের গুণ নিয়ে আলোচনা করে শেষ করা যাবে না। এতে রয়েছে ১৮টি এমিনো এসিড, প্রচুর শক্তি, শর্করা ভিটামিন, মিনারেল সমৃদ্ধ।
খেজুরে মোট খনিজ পদার্থের পরিমাণ অন্যসব ফলের চেয়ে বেশি। আমিষের পরিমাণও অধিকাংশ ফলের চেয়ে বেশি। শর্করা আছে অন্যান্য ফলের তুলনায় ৩ গুণ থেকে ৩০ গুণ পর্যন্ত বেশি। ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কাগজি লেবুর চেয়ে কম কিন্তু অন্য ফলের চেয়ে বেশি। আয়রণের পরিমাণ নারকেল ছাড়া অন্য সব ফলের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। খাদ্যশক্তি নারকেল ছাড়া অন্যসব ফলের চেয়ে অনেক বেশি। এক কথায় সমস্ত ফলের চেয়ে খেজুরের পুষ্টিগুণ অতুলনীয়।
এতে একই সাথে পানি, খনিজ পদার্থ, আমিষ, শর্করা, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, সামান্য পরিমাণ ভিটামিন সি, ৩২৪ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি পাওয়া যায়। এজন্য এ জন্য রোজায় সারা দিনের কিছু খাদ্য ঘাটতি পূরণের জন্য দৈনিক ১০০ গ্রাম খেজুর খাওয়া প্রয়োজন। তবে, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একে যদি আমরা সাথী করে নিতে পারি তবে আমাদের নিত্যদিনের শুধু কর্মক্লান্তিই যাবে না, নিরোগ থাকার একটি উপায়ও খুঁজে পাওয়া যাবে।